টাইগারদের অপেক্ষায় 'ভয়ঙ্কর' অ্যান্টিগা

ছবি:

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। একটা সময় ব্যাটিংয়ে অনেকটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১২১টি টেস্টে সাড়ে আট হাজার রানের অধিকারী এই কিংবদন্তী ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে।
উইন্ডিজ ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে যুগান্তকারী অবদান রাখা এই ক্রিকেটারের সম্মানার্থেই ২০০৭ সালে অ্যান্টিগার নর্থ সাউথে নির্মিত হয় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি।
মূলত সেসময় ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো স্টেডিয়ামটি। নির্মাণের পরের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো এই মাঠে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে মুখোমুখি হয়েছিলো সফরকারী অস্ট্রেলিয়া এবং স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
উইন্ডিজদের এই মাঠেই আগামী মাসে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই মাঠে এর আগে বিশ্বকাপের ম্যাচ ছাড়া আর কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতা নেই টাইগারদের।
আর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও এই মাঠে খুব একটা ভালো স্মৃতি নেই বাংলাদেশ দলের। সেবার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার এইট পর্বের দুইটি ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে খেলেছিলো হাবিবুল বাশারের দল।
কিন্তু সেই দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি টাইগাররা। অজিদের বিপক্ষে ১০ উইকেট এবং কিউইদের কাছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিলো তাদের।

সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই এবার অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লড়াইয়ে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও ২০০৭ সালের বাংলাদেশের সাথে বর্তমান দলটির রয়েছে বিস্তর ফারাক। তবে এরপরেও টাইগারদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেখানকার কন্ডিশন এবং উইকেট।
কেননা একে তো এর আগে সেখানে টেস্ট খেলেনি টাইগাররা তার ওপর অ্যান্টিগার উইকেট বাংলাদেশের মতো নয় একেবারেই। পরিসংখ্যান বলছে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই ব্যাটিং স্বর্গ।
এখন পর্যন্ত যে কয়টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে তার সবগুলোই বলা যায় হাই স্কোরিং ম্যাচ ছিলো। বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগে এই স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ হয়েছিলো ৫টি।
২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো এখানে খেলেছিলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ৪৭৯ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড়া করেছিলো। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩৫২ রান তুলেছিলো উইন্ডিজ।
এরপর ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সফরকারীদের করা ৩২২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫২২ রান সংগ্রহ করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১৫ সালেও বড় স্কোরের মুখ দেখেছিলো অ্যান্টিগা।
সেবার স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৯৯ রান করতে সক্ষম হয় সফরকারী ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩৩৩ রান করেছিলো তারা। কম যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। প্রথম এবং দ্বিতীয় ইনিংসে যথাক্রমে ২৯৫ এবং ৩৫০ রান করেছিলো তারা।
সর্বশেষ বড় স্কোরের নমুনা দেখা গিয়েছে ২০১৬ সালে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচে। সেই টেস্টে প্রথমে ব্যাট করে ৫৬৬ রানের পাহাড় নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিলো ভারত। সেই রান আর পার করতে পারেনি স্বাগতিকরা, বিধায় হারতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে।
সুতরাং সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করে বলা যাচ্ছে যে এবারও ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। তবে এরপরেও কঠিন পরীক্ষাতেই পড়তে হবে টাইগারদের। কেননা সাধারণত দেশের মাটিতে স্পিন ট্র্যাকে খেলেই বেশি অভ্যস্ত ব্যাটসম্যানেরা।
অপরদিকে অ্যান্টিগার উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হলেও পেসাররা যে বাড়তি বাউন্স এবং গতি পাবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। আর এমন উইকেটে যে কেমার রোচ এবং শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের মতো গতি তারকারা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তা প্রমাণ হয়েছে এর আগেও।
সেক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখতে হলে নিজেদের রণ কৌশল সাজানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতার প্রমাণ দেখাতে হবে টাইগারদের। আদৌ কি সেটি দেখাতে পারবে বাংলাদেশ দল? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কিছুদিন।