বহির্বিশ্বে নিজেদের চিনিয়েছি এটাই বড় পাওয়া- জাহানারা

ছবি:

হারমানপ্রিত কাউরের শেষ বলটি কোনরূপে ব্যাটে লাগিয়েই ভোঁ দৌড় দিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার জাহানারা আলম। ফিল্ডার বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠানোর আগে প্রাণপণ দৌড়ে দুই রান নিয়ে ফেললেন তিনি।
সাথে সাথে এশিয়া জয়ের আনন্দে ফেটে পড়লো গোটা বাংলাদেশ। মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুর যেন ক্ষণিকের জন্য রূপান্তরিত হলো এক খন্ড বাংলাদেশে। পুরো মাঠ জুড়েই তখন টাইগ্রেসদের হুঙ্কার। সেই মুহূর্তটির কথা নিজের জীবদ্দশাতে কখনোই হয়তো ভুলতে পারবেন না ভারতের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া জাহানারা।
দেশে ফিরে হোটেল সোনারগাঁতে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে নিজের সেই অনুভূতির কথা জানিয়েছেন এই টাইগ্রেস অলরাউন্ডার। শেষ করেই আসতে হবে এমন মনোভাব বজায় রাখার জন্যই এই জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। জাহানারা বলেন,
'আপনারা জানেন যে ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে ৪২ বলে ৪৩ রান তাড়া করতে গিয়ে শেষ ওভারে আরেক প্রান্তে উইকেট পরে যাচ্ছিলো একের পর এক আর আমি নন স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সেদিন। আমার সেই দিনের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে আমাকে এই বলে কিছু করতেই হবে। আমাকে শেষ করতেই হবে যে করেই হোক। এর থেকে বড় সুযোগ আমি আর পাবো না।'

ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিতের বোলিং পরিকল্পনা সঠিকভাবে নস্যাৎ করতে পারাতে বেশ পরিতৃপ্ত জাহানারা। পাশাপাশি নিজে যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে খেলতে পেরেছেন বলেও বেশ সন্তুষ্ট তিনি। এই প্রসঙ্গে জাহানারা বলেন,
'আমি হারমানের বোলিং পরিকল্পনা নষ্ট করে দেই ওকে একেবারে থামিয়ে দিয়ে। কারণ সে পরিকল্পনা নিয়েই আসছিলো আমাকে কিভাবে প্রতিহত করবে। ওর পরিকল্পনা নষ্ট করে আমি আমারটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি এবং আমার টার্গেট ছিলো যে বল যদি একটু লো আসে আমি সোজা খেলবো সেক্ষেত্রে দুই বা বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি যা আসার আসবে। নতুবা আমি বলটি যেদিকে আসে সেদিকে আমি ঠেলে দিয়ে দুই রান নেয়ার চেষ্টা করবো দৌড়ে। সালমা আপুকে আমি সেভাবেই বললাম যে আপু আপনি শুধু দৌড়াবেন। উনিও আমাকে একই কথা বললেন যে ব্যাটে বলটি লাগাস। আমি বললাম যে আপনি চিন্তা করেন না, আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আপনি শুধু দৌড়াবেন। পরে যা হয়েছে আপনারা তো সবাই দেখেছেন।'
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দলীয় দিক থেকে সবথেকে বড় অর্জন এই এশিয়া কাপ। এই টুর্নামেন্টের ফাইনালের আগেই ভারতকে আরেকবার হারিয়েছিলো সালমা বাহিনী। সেবার ১৪১ রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলো টাইগ্রেসরা। আর সেই কারণে ফাইনালে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জাহানারা জয়ের ব্যাপারে। তার ভাষায়,
'দলীয় দিক থেকে আমরা জানি যে এটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবথেকে বড় অর্জন। আসলে আমরা যখন প্রথমবার ভারতকে হারিয়েছিলাম এবং এটি আমাদের দলের সবথেকে বড় লক্ষ্য ছিলো। ১৪১ রান তাড়া করে আমরা ভারতকে হারাই। দ্বিতীয়বার যখন তাদের বিপক্ষে ফাইনাল খেলি তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিলো।'
অবশ্য বাংলাদেশের যে হারানোর কিছু ছিলো না তা স্বীকার করেছেন জাহানারা নিজেও। যদিও মুদ্রার উল্টো পিঠ ভারতের ক্ষেত্রে। পরাশক্তি দেশটির কাছে এই পরাজয় কাঁটার মতোই যে গণ্য হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। তবে মোদ্দা কথা হলো বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের জাত চেনাতে সক্ষম হয়েছে এই জয়ের মাধ্যমে। তাই জাহানারা বলছিলেন,
'আমাদের হারানোর কিছু ছিলো না। যা পাবো তার সম্পূর্ণটাই আমাদের বোনাস। হারানো ওদের ছিলো, ওরা ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন। ওদের মতো দলকে আমরা হারিয়ে আজ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, বহির্বিশ্বে আমরা আমাদের চিনিয়েছি এটাই আমাদের সবথেকে বড় পাওয়া এবং আমি মনে করি সারা বাংলাদেশের মানুষের অর্জন এটি। যারা সাপোর্ট করেছে, টিভির সামনে বসে এত দোয়া করেছে, খেলা শেষে কতগুলো ভিডিও দেখলাম তারা এত বেশি দোয়া করেছে এবং সাপোর্ট করেছে তা অবিশ্বাস্য। অসংখ্য ধন্যবাদ যারা আমাদের সাপোর্ট করেছেন।'