'সবাই বলে আমি নাকি টেস্ট ব্যাটসম্যান'

ছবি:

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট প্রেম ছিল ধানমন্ডির ছেলে সাইফ হাসানের। সৌদি আরবে জন্ম নেয়া সাইফ দেশে ফেরার পর থেকেই ব্যাট- বলই হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান। ঘরের কাছে আবাহনী মাঠ থেকেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি ছোট বেলা থেকেই। তাই তো খুব অল্প সময়ে একে একে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ দলের গন্ডি পেরিয়ে খেলে ফেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।
অল্প সময়েই খেলেছেন আবাহনীর মত বড় ক্লাবে, ১৯ পার করার আগেই স্বাদ পেয়েছেন বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের মত দলে খেলার সুযোগ। ইতিমধ্যেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন যোগ্য প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে।
সামনে নিউজিল্যান্ডে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিবেন এই তরুন ওপেনার। ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে নিজের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন সাইফ হাসান।
ক্রিকেটে আপনার শুরুটা কেমন ছিল?
আমি আগে সৌদি আরবে ছিলাম। সেখান থাকতেও ক্রিকেট দেখতাম। সেখান থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু। বাংলাদেশে যখন আসি তখন ধানমন্ডিতে অনুশীলন করা শুরু করি। এরপর আবাহনী এবং সিসিএসে খেলা হয়। তারপর অনূর্ধ্ব ১৪-১৬ খেলেই এখানে আসা।
প্রথমবারের মত বিপিএল খেললেন... অভিজ্ঞতা কেমন?
ভালো ছিল... প্রথম বারের মত বিপিএল খেলছি। আমাদের দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি অনেক বিদেশী ক্রিকেটার ছিলেন। এছাড়াও আমার সমবয়সী অনেকেই ছিল। এমন একটা প্ল্যাটফর্মে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা এবং ম্যাচের মধ্যে ইনভলভ থাকা আসলে অনেক বড় ব্যাপার। এখানে অনেকেরই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের যেসব ক্রিকেটাররা আছে তাদের এই অভিজ্ঞতা অনেক কাজে আসবে। পাশাপাশি বিশ্বকাপেও এর প্রভাব পড়বে।
দলে মাহেলা জয়াবর্ধনের মত কোচ, মাহমুদুল্লাহর মত অধিনায়ক...কেমন এনজয় করেছেন একই ড্রেসিং রুমে এত বড় বড় নাম?
ছোট বেলা থেকেই তার ব্যাটিং ফলো করে আসছি। অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান, আমার অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার। ম্যাচ না খেলতে পারলেও তার সাথে অনুশীলনে অনেক কাজ করা হয়েছে। উনি যা যা টিপস দিয়েছিলেন তাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো।
অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কেমন? তার অধীনে খেলতে পারার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
রিয়াদ ভাই অমায়িক একজন মানুষ। মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরে তার ব্যবহার, আচরণ সব অসাধারণ। অধিনায়ক হিসেবেও দারুন তিনি। উনার সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

আপনি বিপিএলে মাহেলা, ডিপিএলে খালেদ মাহমুদ সুজনের মত কোচের সাথে কাজ করেছেন... আবাহনীর মত দলে খেলেছেন। এত অল্প সময়ে এত দূর পৌঁছে যাবেন... ভেবেছিলেন কখনো?
আসলে দুইটা দুই ফরম্যাটের খেলা। একটা ওয়ানডে একটা টি-টুয়েন্টি। টিমের সাথে থেকে দুটোই ইনজয় করেছি। ওয়ানডে ফরম্যাট খেলতে হলে ডিপিএল খেলতে হবে। সেখানে সুজন ভাইয়ের অধীনে খেলেছি। বিপিএলটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে খেলা হয়। বিদেশীরাও থাকে, সুযোগ পেলে ভালো খেলার চেষ্টা করবো। বিপিএল এমন একটা প্ল্যাটফর্ম একজন খেলোয়াড়কে অনেক উপরে নিয়ে যায়।
এত অল্প সময়ে এত দূর পৌঁছে যাবেন... ভেবেছিলেন কখনো?
আমি অনেক ভাগ্যবান। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলা অবস্থায় আমি দুইবার বিপিএল খেলেছি। তারপর তিন বছর ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলেছি। অবশ্যই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো।
ফার্স্ট ক্লাসে আপনার রেকর্ড খুবই ভালো। গড় ৪৮ এর কাছাকাছি... সেঞ্চুরি করেছেন তিনটার মত। আপনি লম্বা সময় ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন। এটাই কি আপনার স্বাভাবিক ব্যাটিং স্টাইল?
বিশ্বকাপের পর অনেক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। সবাই বলতো আমি টেস্ট ব্যাটসম্যান। দেখেশুনে খেলতে পছন্দ করি। এটাই বদলাতে চেয়েছিলাম। সফলতাও পেয়েছি। প্রিমিয়ার লীগে ভালো স্ট্রাইক রেট রাখার চেষ্টা করেছি। স্ট্রাইক পরিবর্তন করারও চেষ্টা করেছি। ব্যাটিংটা এনজয় করছি। তিন ফরম্যাটেই খেলতে হবে এমন ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
এশিয়া কাপ প্রসঙ্গে আসি। মালয়েশিয়ায় নিঃসন্দেহে আপনার দলটাই টুর্নামেন্টের সেরা ছিল। ভাগ্য খারাপ ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আসে নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে হার... দলের সবাই কি সহজে নিতে পেরেছিল? অধিনায়ক হিসেবে আপনি কিভাবে হ্যান্ডেল করেছেন?
আমরা দল হিসেবে অনেক ভাগ্যবান আমি মনে করি। কারণ এই দল নিয়েই আমরা দুইবার এশিয়া কাপ খেলেছি। তাই টুর্নামেন্ট কিভাবে খেলতে হয় আমাদের জানা হয়েছে। সেখানে খুব ভালো ভালো ম্যাচ খেলেছি, প্রেশার ম্যাচও খেলেছে ছেলেরা। সর্বশেষ এশিয়া কাপে আমরা ভারতকে হারিয়েছি। যা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। পাকিস্তানের সাথেও আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আবহাওয়ার কাছে হেরে গেলেও সামনের বিশ্বকাপে আমাদের এসব অভিজ্ঞতা অনেক কাজে আসবে।
অধিনায়কত্ব কেমন উপভোগ করছেন? এর চাপটা কিভাবে নিচ্ছে... আর অধিনায়ক হিসেবে রোল মডেল কাকে মানেন?
মাশরাফী ভাই একজন অসাধারণ অধিনায়ক। তাকেই ফলো করার চেষ্টা করি। রিয়াদ ভাইও আছেন। উনার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের দেশেই অনেক হিরো আছে তাদের থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। অধিনায়কত্বে চাপের কিছু নেই। চাপ মনে করলে চাপ, না মনে করলে না। আমাদের সব খেলোয়াড়রাই সবাই এক সাথে চলে, ম্যানেজমেন্টও আমাদের অনেক সাহায্য করে। অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করি আমি।
সামনে বিশ্বকাপের মত বড় আসর। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে এশিয়া কাপের ফর্ম ধরে রাখা সম্ভব? বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন চলছে?
আমরা চেষ্টা করছি এখানে সেখানকার মত কন্ডিশন না হলেও উইকেট বানিয়ে নিতে। বিকেএসপিতে যখন খেলি তখন সেখানে ঘাসের উইকেট বানিয়ে খেলার চেষ্টা করি। সেখানকার পিচ কিউরেটররা আমাদের অনেক সাহায্য করছে। আমরা ২৬ তারিখ যাচ্ছি সেখানে। হাতে অনেক সময় আছে প্রস্তুতির। সেখানে গিয়েও প্রস্তুতি নিবো। সেখানকার লোকাল তিনটা দলের সাথে আমরা খেলবো। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাই।
গত বার বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিতে খেলেছিল। সেই দল থেকে ইতিমধ্যে তিন জন জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন। আপনাদের ব্যাচ থেকে আপনি, আফিফরা ইতিমধ্যেই অনেক পরিচিতি পেয়েছেন? স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার?
গত বছর সেই দলে আমি ছিলাম। আমাদের টিম স্পিরিট ভালো ছিল। সেখানে তিন নম্বর হয়েছিলাম। অনেক কিছু শিখেছি। মিরাজ ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন, যেহেতু আমরা গত বার থার্ড হয়েছি তাই পুরো বাংলাদেশ আমাদের দিকে চেয়ে থাকবে। খেলা যেখানেই হোক সবাই আমাদের কাছ থেকে অনেক আশা করবে। চেষ্টা করবে সেমিফাইনাল খেলার। তবে আমাদের প্রথম লক্ষ্য প্রথম রাউন্ড। এখানে ভালো খেললে তাপর স্টেপ বাই স্টেপ অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করবো।
যুব বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত লক্ষ্য কি?
আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। চেষ্টা করবো দলের জন্য করার। ব্যক্তিগত কোন লক্ষ্য তেমন নেই। তবে চেষ্টা করবো দলের জয়ে অবদান রাখার। যেকোন পরিস্থিতিতেই খেলতে প্রস্তুত। প্রথম লক্ষ্য দেশের জন্য কিছু করার।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন?
সব ক্রিকেটারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আপাতত এগুলো নিয়ে ভাবছিনা। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভালো করলে অবশই পরবর্তীতে সুযোগ আসবে।
নিজেকে ১৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান?
অবশ্যই ক্রিকেট নিয়ে থাকবো। খেলা নিয়ে থাকতে চাই। বাংলাদেশের সব ধরনের ক্রিকেট খেলবো। বিদেশী লীগেও খেলতে চাই। একজন পরিপক্ব ক্রিকেটার হয়ে উঠতে চাই।