এখনও দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেন তুষার

ছবি:

মাত্র কিছুদিন আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তুষার ইমরান। আর তুষারের এই বিরল অর্জনে তাঁকে নিজেদের উদ্যোগে সম্মাননা দিয়েছেন মাশরাফি, তামিম, মুশফিকরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের এই রান মেশিনের হাতে একটি স্মারক তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এরুপ সম্মান পাওয়ায় অভিভূত তুষার।
সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান নিজের অনুভুতি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয় কারো জন্যই। তবে সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন সাকিব, তামিম, মাশরাফিরা। তুষার বলছিলেন,
'সত্যি বলতে কি এটি অসাধারণ একটি অনুভূতি ছিলো। এটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা একটি মুহূর্ত ছিলো। জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়া সহজ ব্যাপার, কিন্তু সেখানে টিকে থাকা অনেক কঠিন বলে আমি বিশ্বাস করি।'
তিনি আরো বলেন, 'যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য টিকে থাকতে পারে যেমন তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি এবং মাহমুদুল্লাহ তাদের জন্য এটি অনেক বড় একটি অর্জন। সুতরাং তাদের দ্বারা অভিনন্দিত হওয়া আসলেই আমার জন্য অনেক হৃদয় স্পর্শী একটি ব্যাপার এবং সম্মানজনক।'
২০০০ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো তুষার ইমরানের। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি। তবে এই সময়ের মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে খেলাটাকেই নিজের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।

তাঁর ভাষ্যমতে, 'আমি মনে করি ক্রিকেটে ১৮টি বছর আমি পার করেছি দারুণভাবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার অভিষেক হয়েছিলো ২০০০-০১ সালে। আমি সর্বদা আমার খেলা উপভোগ করে এসেছি। এই সময়ের মধ্যে আমার সবথেকে স্মরণীয় মুহূর্তগুলো জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়।'
২০০৭ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন তুষার ইমরান। এরপর থেকেই ব্রাত্য তিনি। তবে দেশের হয়ে না খেলতে পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছেন ৩৪ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এবার তিনি নিজেই জানিয়েছেন তাঁর সাফল্যের রহস্য। তুষার বলেছেন,
'আমি জাতীয় দলের হয়ে কমই খেলেছি। যখন আমি দল থেকে বাদ পড়তাম খারাপ পারফর্মেন্স এবং ইনজুরির কারণে, আমি সর্বদা চাইতাম আবারো জাতীয় দলে ফিরে আসতে। আর এটাই আমাকে কঠোর পরিশ্রম করে ঘরোয়া ক্রিকেটে বছরের পর বছর ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করতো।'
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে দীর্ঘ ৪ বছর পর খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট শিকার করা আব্দুর রাজ্জাক। এত দিন পর রাজ্জাকের জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এই প্রশ্ন রাখা হলে তুষার জানিয়েছেন অন্তত অভিজ্ঞতার খাতিরে হলেও বয়স্ক ক্রিকেটারদের সুযোগ দেয়া উচিৎ বোর্ডের। তার বক্তব্য,
'আমি এতে আশ্চর্য হইনি। কারণ আমি বিশ্বাস করি এটাই কালচার হওয়া উচিৎ। একজন খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া উচিৎ একটি বিশেষ ফরম্যাটে যেখানে সে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করে আসছে। আমার মনে হয় ৩০ অথবা তার থেকে বেশি বয়স্ক ক্রিকেটাররা ভালো পারফর্ম করলে তাদের পরিপক্বতার খাতিরে সুযোগ দেয়া উচিৎ।'
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডে তুষার ইমরান জায়গা পেতে পারেন বলে এর আগে আলোচনা হয়েছিলো। আদতে অবশ্য সেটি হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যদি স্কোয়াডে জায়গা পেতেন তাহলে সেটি হতো অনেক বড় একটি অর্জন বলে মনে করেন তুষার। তাই তিনি বললেন,
'প্রত্যাশা সর্বদাই ছিলো। আমি আসলে কখনোই আশা হারাইনি। এর আগে টেস্ট দলে আমার জায়গা পাওয়া নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিলো এই সিরিজের আগে (বাংলদেশ-শ্রীলঙ্কা)। এটি আমার জন্য অনেক বড় একটি অর্জন হতে পারতো যদি আমি আসলেই জাতীয় দলে ফিরতে পারতাম দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পরে।'
তবে এখনও দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের এই মাস্টারপিস। জানিয়েছেন আরো ৩-৪ বছর ক্রিকেট খেলার ইচ্ছার কথা। আর এই সময়ের মাঝে জাতীয় দলে ডাক পেতেও পারেন হয়তো।
'আমি এখনও কঠোর পরিশ্রম করছি, আরো ৩-৪ বছর আমি ক্রিকেট খেলতে পারবো বলে মনে করি। সুতরাং দেখা যাক আমি কামব্যাক করার মতো সৌভাগ্যবান হতে পারি কিনা।'