অভিষেক টেস্টের নায়কদের বর্তমান অবস্থান

ছবি:

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো আজ থেকে ১৮ বছর আগে। ২০০০ সালের ১০ই নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটের নতুন জগতে পা রাখে টাইগাররা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। অভিষেক সেই টেস্টে খেলেছিলেন আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার সুমনদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।
অভিষেক সেই টেস্ট খেলা ১১ জন ক্রিকেটার আজ কোথায় এবং কোন অবস্থানে আছেন তারই আদ্যোপান্ত নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন-
১। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ- বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ওপেনার হিসেবে খেলেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ২০০৪ সালেই। তার আগে খেলেছেন মোটে ৩টি টেস্ট। বর্তমানে নারায়নগঞ্জে ক্যাবলসের ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন ৪১ বছর বয়সী সাবেক এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
২। মেহরাব হোসেন অপি- বিদ্যুতের সাথে দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমেছিলেন মেহরাব হোসেন অপি। ভারতের বিপক্ষে সেই টেস্টটি ছাড়াও ৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ৩৯ বছর বয়সী এই সাবেক ওপেনার বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসা ছাড়াও ক্রিকেট বোর্ডের সাথে কাজ করছেন।
৩। হাবিবুল বাশার সুমন- হাবিবুল বাশারকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই টাইগার অধিনায়কের নামের পাশে মিস্টার ফিফটি তকমাটি আজও জ্বলজ্বল করছে।
৫০ টেস্টে ২৪ টি হাফসেঞ্চুরি এবং ৩টি সেঞ্চুরি সহ ৩০২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে অবসর নেয়া ৪৪ বছর বয়সি এই সাবেক টাইগার কাপ্তানের অবদান দেশের ক্রিকেটে অপরিসীম।

৪। আমিনুল ইসলাম বুলবুল- ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সেই ম্যাচের আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অভিষেকেই তাঁর ১৪৫ রানের সেই ইনিংসটি আজো চোখে লেগে আছে অগণিত ক্রিকেট প্রেমিদের। ২০০২ সালে অবসর নেয়া বুলবুল বর্তমানে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। কাজ করছেন আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে।
৫। আকরাম খান- বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে অনেকাংশে অবদান রয়েছে আকরাম খানের। ২০০৩ সালে মাত্র ৮টি টেস্ট খেলে অবসর নেয়া সাবেক এই টাইগার ক্রিকেটার বর্তমানে আছেন ক্রিকেটের সাথেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
৬। আল শাহরিয়ার রোকন- দারুণ এক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন রোকন। ১৫টি টেস্টে ৬৮৩ রান সংগ্রহ করা রোকন টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০০৩ সালেই। মূলত তাঁর দারুণ ব্যাটিং স্টাইল এবং শট সিলেকশন মুগ্ধ করেছিলো সকলকেই। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারে ব্যবসা করছেন ৩৯ বছর বয়সী সাবেক এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
৭। নাইমুর রহমান দুর্জয়- বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন দুর্জয়। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে একাই ৬ উইকেট শিকার করে সকলকে হতবাক করে দিয়েছেন দুর্জয়। তবে খুব বেশি টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয়নি তাঁরও।
২০০২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগে মাত্র ৮টি টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। তবে এখনও ক্রিকেটের সাথেই আছেন দুর্জয়। ৪৩ বছর বয়সী সাবেক এই কাপ্তান ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করছেন। পাশাপাশি রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েছেন।
৮। খালেদ মাসুদ পাইলট- উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে যথেষ্ট সুখ্যাতি কুড়িয়েছেন খালেদ মাসুদ। মোট ৪৪টি টেস্টে ১৪০৯ রান সংগ্রহ করা ৪২ বছর বয়সী পাইলট বর্তমান প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নয়নেও কাজ করছেন তিনি।
৯। মোহাম্মদ রফিক- একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা স্পিনার ছিলেন রফিক। বাঁহাতি এই স্পিন তারকার অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। ২০০৮ সালে টেস্টকে বিদায় জানানোর আগে ৩৩টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
এই ৩৩ টেস্টে তাঁর শিকার ১০০টি উইকেট। ব্যাট হাতেও দারুণ খেলতেন তিনি। ১টি টেস্ট সেঞ্চুরি সহ ১০৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন রফিক। ৪৭ বছর বয়সী সাবেক এই কিংবদন্তী স্পিনার ক্রিকেট ছেড়ে বর্তমানে ব্যবসায় সময় দিচ্ছেন। এর আগে বিসিবির হাই পারফর্মেন্স দলের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন রফিক।
১০। হাসিবুল হোসেন শান্ত- সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটারের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে মাত্র ৫টি টেস্ট খেলেই। পেস বোলারদের মধ্যে সেসময় তাঁকে দেশের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবেই আখ্যা দেয়া যেতো।
২০০১ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এই ৪০ বছর বয়সী ক্রিকেটার এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। এরই সাথে বিসিবির বয়সভিত্তিক দলের কোচ এবং নির্বাচক কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন শান্ত।
১১। বিকাশ রঞ্জন দাস- নাম শুনে হয়তো অনেকেই তাঁকে চিনতে পারবেন না। কেননা ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলেই আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নামা হয়নি তাঁর। তবে দুর্দান্ত পেস বোলিং করার ক্ষমতা সম্পন্ন বোলারকে নিয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন নির্বাচকেরা।
কিন্তু নিজেকে দিয়ে ক্রিকেট খেলা হবে না এই উপলব্ধিই হয়তো তাঁকে আর এই খেলার প্রতি মনোযোগী হতে দেয়নি। বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার ইস্টার্ন ব্যাঙ্কে অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।