কেন বার বার ইমরুল?

ছবি:

তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী ইমরুল কায়েস। এই দুইজনের জুটির রেকর্ড দারুন, অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'দারুন' শব্দ ব্যবহার প্রযোজ্য। একমাত্র এই যোগ্যতাবলেই টেস্ট দলে ইনিংস শুরু করার সুযোগ পেয়ে আসছেন ইমরুল কায়েস এবং সেটা দীর্ঘ দশ বছর ধরে।
'জুটি ভালো হয়, তাই দলে...' এক মাত্র বাংলাদেশেই এমন হওয়া সম্ভব। টেস্টে ইমরুলের ক্যারিয়ার গড় ২৬। গত তিন বছর বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে এই বাঁহাতির গড় আরও কম (২২)। এই সময়টায় মাত্র একবার ফিফটি ছাড়িয়েছেন তিনি!
অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাংলাদেশ টেস্ট দলের ওপেনারের পরিসংখ্যান। শেষবার ইমরুল কায়েস তিন অংকের দেখা পেয়েছিলেন ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুলের ৭৮ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশ জয়ে সাহায্য করেছিল।
এরপর থেকে একবারও ৫০ ছাড়াতে পারেনি ইমরুল। ২০১৭ সালের দিকে নিউজিল্যান্ড সফরে ত্রিশ ঊর্ধ্ব ইনিংস খেললেও লম্বা ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। শ্রীলঙ্কা সফরেও একই চিত্র। এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুই টেস্টেও ইমরুলের অবদান শুন্য।
বার বার ব্যর্থ ইমরুল কায়েসকে নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় বাংলাদেশ দল। কাট-পুল ভালো খেলে, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে ইমরুলকে দলে নেয়া হয়েছিল। বলার প্রয়োজন নেই, সেখানেও ব্যর্থ ছিলেন ইমরুল কায়েস।

সম্প্রতি ব্যর্থতার লম্বা হালখাতায় নতুন করে যোগ হল শ্রীলঙ্কা সিরিজ। চিটাগংয়ের ব্যাটিং স্বর্গে দুই ইনিংসেই লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছেন ৩১ বছর বয়সী ইমরুল। ঢাকাতেও তাই, দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ইমরুল।
ব্যাকফুটে ভালো খেলে, তাই দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ড সফরের দলে নেয়া হয়েছিল তাকে। নিউজিল্যান্ডে মাথা তাক করা বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে আবার কখনো পাঁজর ধেয়ে আসা বলে দৃষ্টিকটু ভাবে ব্যাট ছুঁইয়ে কিপারের কাছে আউট হয়েছে বারবার।
আর অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে দুর্বলতা তো আছেই। পেস বোলিংয়ে দুর্বল, স্পিনে তো সফল হবেন তিনি? সেটাও হচ্ছে না। অফ স্পিনে ব্যাট- প্যাডে জায়গা থেকে যাচ্ছে নিয়মিতই।
অফ স্ট্যাম্প থেকে টার্ন করে বের হয়ে যাওয়া বল খুঁজতে গিয়ে আউট হচ্ছেন স্লিপ, কিপারের হাতে। প্রিয় সুইপ শটেও টাইমিংয়ে গড়বড় হচ্ছে। হয়তো ৩১ বছর বয়সী ইমরুলের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সময় এসেছে।
হয়তো এখনই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভালো খেলা তরুনদের বাজিয়ে দেখার সুযোগ। সদ্য অনূর্ধ্ব ঊনিশ বিশ্বকাপ খেলে আসা সাইফ হাসানের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩০ ইনিংস প্রায় ৪৮ গড়ে রান করে যাচ্ছেন এই তরুন।
ইতিমধ্যেই তিনটি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সাইফ। স্ট্রাইক রেটও (৪৫) দারুন... টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এই ডানহাতির ব্যাটিং বেশ মানানসই। সাইফের সহজাত গুণের মধ্যে লম্বা সময় ব্যাট করে যাওয়া একটি।
২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য নাজমুল হাসান শান্তর নামও বিবেচনায় আনা যায়। ব্যাটসম্যানদের ইনজুরির কারণে ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে শান্তর রেকর্ড বেশ উজ্জ্বল। ৪২ ইনিংসে প্রায় ৪১ গড়ে ১৫৯০ রান করেছেন তিনি। ফিফটিকে বড় সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করায় এই বাঁহাতির সুনাম আছে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ছয়টি ফিফটির বিপরিতে পাঁচটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।
গত মৌসুমে ডাবল সেঞ্চুরির (১৯৪ রান) খুব কাছে এসে আউট হয়েছেন ১৯ বছর বয়সী শান্ত। বাংলাদেশ 'এ' দলের অধিনায়ক হিসেবে বেশ সফল তিনি। গত বছর ইংল্যান্ড সফরে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন নাজমুল হাসান।
বিবেচনায় আনা যায় খুলনা বিভাগের হয়ে গত মৌসুমে পাঁচশ রান করেছেন তরুন মেহেদী হাসানকে। ২২ বছর বয়সী এই ডানহাতি প্রায় ৪১ গড়ে রান করে আসছেন। ছয়টি ফিফটি হাঁকানোর বিপরিতে চারটি সেঞ্চুরি আছে তার। এর মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরিই এসেছে এক মৌসুমে।
সাদমান ইসলামকে নিয়েও ভাবার সুযোগ থাকছে। বাংলাদেশ 'এ' দলের এই বাঁহাতি ওপেনার গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আনঅফিসিয়াল টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ৪০ গড়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দুই হাজার রান করেছেন ২২ বছর বয়সী সাদমান। কিন্তু হাজার টাকা প্রশ্ন, নির্বাচকরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন তো?