টাইগারদের নির্বিষ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার রান উৎসব

ছবি:

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসঃ
৫১৩ অল আউট (১২৯.৫ ওভার) মমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদুল্লাহ ৮৩*।
হেরাথ ৩/ ১৫০, লাকমল ৩/ ৬৮।
শ্রীলঙ্কা, প্রথম ইনিংসঃ
৫০৪/৩ (১৩৮ ওভার ) রোশান ৮৭*, চান্দিমাল ৩৭*।
জুটিতে বাংলাদেশের ভোগান্তিঃ
প্রথম ইনিংসে পাঁচশ ছাড়ানো স্কোর গড়ে বল হাতেও শুরুটা ভালো করেছিল বাংলাদেশ দল। শুন্য রানেই করুনারাত্নার উইকেট তুলে নিয়ে রীতিমত উড়ছিল টাইগাররা। তবে ধনঞ্জয়ার ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ের সাথে মেন্ডিসের সতর্ক ব্যাটিং শ্রীলঙ্কাকে সঠিক পথে ফেরায়। দলের বিপদের মুখে পাল্টা আক্রমণে টাইগার বোলারদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে ৮৩ স্ট্রাইক রেটে সেঞ্চুরি তুলে নেন ধনঞ্জয়া।
অন্য প্রান্তে থাকা কিছুটা নড়বড়ে ব্যাটিং করলেও নামের পাশে ৮৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে মেন্ডিস। তবে সেজন্য স্লিপ ফিল্ডার মিরাজ ও ইমরুলকে ধন্যবাদ দিবেন মেন্ডিস। ইনিংসের শুরুতেই মুস্তাফিজের বলে স্লিপে মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেছিলেন মিরাজ। আবার সানজামুলের বলে ফের স্লিপে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন ইমরুল কায়েস।
জুটির ডাবল সেঞ্চুরিঃ
বাংলাদেশকে সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেও। ইনিংসের ৫৫তম ওভারে ধনঞ্জয়া-মেন্ডিস জুটির ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে।

মেন্ডিসের সেঞ্চুরিঃ
ইনিংসের ৬১তম ওভারে এসে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ম্যাচের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মেন্ডিস। নিজের জন্মদিনে ২০০ বল খেলে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান তিনি। দলের স্কোর তখন এক উইকেটে ২৩১ রান।
প্রথম সেশনে লঙ্কানদের দাপটঃ
দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনের ধারা বজায় রেখে বাংলাদেশি বোলারদের বিপক্ষে কোনরকম ঝুঁকি ছাড়াই ব্যাট করে যায় দুই লঙ্কান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ধনঞ্জয়া ৭০তম ওভারে দেড়শ রান পূর্ণ করে দলের স্কোর আড়াইশ ছাড়াতে সাহায্য করে। স্পিনারদের বিপক্ষে সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত মনে হয়েছে মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়াকে।
উইকেট থেকে তেমন কোন সাহায্য না পাওয়ায় তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেও বোলারদের খাটুনি অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশকে প্রথম সেশনে কোন সুযোগ না দিয়ে অবিচ্ছিন্ন থেকে লাঞ্চ বিরতিতে যায় সফরকারীরা।
নতুন বলে ভাগ্য বদলঃ
লাঞ্চ বিরতির পর নতুন কাজে লাগিয়ে উইকেটের খোঁজে মাঠে নামে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে লঙ্কানদের স্কোর তিনশো ছাড়া করেন মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই মুস্তাফিজে ভাঙ্গে জুটি। ১৭৩ রানে খেলতে থাকা ধনঞ্জয়া পুল শটে বাউন্ডারি আদায় করে নেয়ার চেস্টায় ব্যর্থ হন। ধনঞ্জয়ার ২২৯ বলে ১৭৩ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের ইতি টানেন মুস্তাফিজ।
দুর্ভাগা মেন্ডিসঃ
ধনঞ্জয়ার পর ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছেন কুশল মেন্ডিসও। ১৯৬ রান করে চা পান বিরতির কিছুক্ষণ আগে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। নিশ্চিত ডাবল সেঞ্চুরি খুব কাছে থেকে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ফিরতে হল মেন্ডিসকে। তাইজুলের বলে ক্রস ব্যাটে সুইপ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তোলেন তিনি। দলের ৪১৫ রানে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
ধনঞ্জয়া, মেন্ডিসের পর রোশানঃ
দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ উইকেটে জমে যাওয়া দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে সক্ষম হলেও মিডেল অর্ডারে খেলতে নামা রোশান সিলভা ও দীনেশ চান্দিমাল সঠিক পথেই এগোতে থাকে। টাইগারদের নির্বিষ বোলিংয়ে ওভার প্রতি সাড়ে তিন রান তুলে ইনিংসের ১১৯তম ওভারে সাড়ে চারশ রানে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ক্যারিয়ায়ের দ্বিতীয় টেস্টেই ফিফটি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ভোগান্তি বাড়াতে থাকেন তিনি।
লিডের খুব কাছে শ্রীলঙ্কাঃ
১৩৫তম ওভারে শ্রীলঙ্কার স্কোর পাঁচশ ছুঁয়ে যায়। দুই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান রোশান ও চান্দিমাল দুইজনই উকেতে জমে গেছেন ততক্ষণে। একজন তো অভিষেক সেঞ্চুরির পথে এগোচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৯ রানে পিছিয়ে থেকেই তৃতীয় দিন শেষ করে লঙ্কানরা।
বোলারদের ভুলে যাওয়ার দিনঃ
দিনের শুরুতে মুস্তাফিজের বলে চতুর্থ স্লিপে মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়েছিলেন মিরাজ, ইনিংসের শুরুতে সেই এই মেন্ডিসকেই জীবন দিয়েছিলেন স্লিপ ফিল্ডার মিরাজ। দুইবার জীবন পাওয়া মেন্ডিস থেমেছে ১৯৬ রানে। তিনশো রানের জুটি গড়েছে ধনঞ্জয়ার সাথে। দিনের শুরুতে দুয়ার খুলতে পারলে হয়তো টাইগার বোলারদের দিনটা ভিন্ন হতেও পারতো।
বিশেষ করে এমন পাটা উইকেট বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের একবার সুযোগ দেয়া মহাপাপের সমান, সেটাই প্রমাণিত হল চিটাগং টেস্টের তৃতীয় দিনে। ধনঞ্জয়ার ১৭৩ ও মেন্ডিসের ১৯৬ রানের শক্তি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রানের দালান গড়েছে রোশান ও চান্দিমাল। দিন শেষে এই জুটি যোগ করেছে আরও ৮৯ রান।
শ্রীলঙ্কার পুঁজি ৫০৪ তিন উইকেটে। তৃতীয় দিন একমাত্র পেসার মুস্তাফিজ ছাড়া কোন স্পিনারকেই শাণিত মনে হয়নি। দিনের এক পর্যায়ে উইকেটে স্পিন ধরবে, এই আশায় থাকা টাইগাররা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। দিন শেষে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতায় তাইজুল ও মুস্তাফিজের একটি করে উইকেট ছাড়া আর কিছুই রইল না।
বাংলাদেশ একাদশ-
তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক),মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ-
দিমুথ করুনারত্নে, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেট রক্ষক), রোশান সিলভা, দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গা লাকমাল, লক্ষ্মণ সন্দাকান, লাহিরু কুমারা।