শামি-বুমরাহর তান্ডবে বৃথা গেলো এলগারের লড়াই

ছবি:

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো বিরাট কোহলির ভারতের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জয়ের দেখা পেলো তারা। শনিবার (২৭শে জানুয়ারি) তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সর্বশেষ ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা থেকে বেঁচেছে সফরকারীরা।
অবশ্য এই জয়ের পেছনে ব্যাটসম্যানদের থেকেও বেশি অবদান ভারতীয় বোলারদের। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে হলে পেসার মোহাম্মদ শামির। কেননা এই ডানহাতি পেসারের দুর্দান্ত বোলিংয়েই জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন শামি ১২ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৮ রান খরচায় একাই ৫ উইকেট নিয়ে আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামান। শামির পাশাপাশি দারুণ বোলিং করেছেন ইশান্ত শর্মা এবং জাসপ্রিত বুমরাহও। ২১ ওভারে ৫৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। অপরদিকে ১৬ ওভারে ৩১ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন ইশান্ত। ফল স্বরূপ বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে কোহলি বাহিনী।
টেস্টের চতুর্থ দিন জয়ের জন্য ২২৪ রান প্রয়োজন ছিলো স্বাগতিকদের। হাতে ছিলো ৯টি উইকেট। তার ওপর দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা এবং ডিন এলগার দিনের শুরুটাও করেছিলেন দুর্দান্ত। এই দুই ব্যাটসম্যান ১১৯ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
আমলা এবং এলগারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে একটা সময় মনে হচ্ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার জয় যেন শুধুই সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ঠিক তখনই বাঁধ সাধলেন ইশান্ত শর্মা। দারুণ খেলে অর্ধশতক হাঁকানো আমলাকে (৫২) দুর্দান্ত একটি বলে হার্ধিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি।
আমলা ফিরে যাওয়ার পরপরই যেন তাসের ঘরে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপ। মাত্র ১ উইকেটে শত রান পার করা প্রোটিয়ারা এরপর বুমরাহ, শামি এবং ইশান্তের বোলিং তান্ডবের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। একের পর এক ব্যাটসম্যানদের আশা যাওয়ার মিছিল শেষ পর্যন্ত থেমেছে সর্বশেষ ব্যাটসম্যান লুঙ্গি এনগিদি আউট হওয়ার পর।

তবে বিরুদ্ধ স্রোতে শুধু একাই লড়াই করে গেছেন ওপেনার ডিন এলগার। ৮৬ রান করে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি। আর এরই সাথে ২০১৫ সালের পর দ্বিতীয় বারের মতো ক্যারি দ্যা ব্যাট অর্থাৎ ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার নজির স্থাপন করলেন এই প্রোটিয়া ওপেনার।
২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে একই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। এলগারের আগে ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারি দ্যা ব্যাট হয়েছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান গ্যারি কারস্টেন। তবে এই কীর্তি গড়ার পরও দলের হার এড়াতে পারেননি এলগার।
এক প্রান্ত আগলে রেখে তাঁকে দেখতে হয়েছে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুঁড়ে দেয়ার দৃশ্য। আর ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতিতে শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানে গুঁটিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আমলা এবং এলগার ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে পা রাখতে পেরেছেন শুধু ভারনন ফিল্যান্ডার (১০)।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে প্রোটিয়া বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে ১৮৭ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিলো সফরকারী ভারত। দলের পক্ষে জোড়া অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি (৫৪) এবং চেতেশ্বর পুজারা (৫০)।
এছাড়াও ভুবনেশ্বর কুমার ৩০ রান করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩ টি উইকেট শিকার করেছিলেন পেসার কাগিসো রাবাদা এবং ২ টি করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মরনে মরকেল ও ভারনন ফিল্যান্ডার।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নামার পর জাসপ্রিত বুমরাহ এবং ভুবনেশ্বর কুমারের বোলিং তান্ডবে মাত্র ১৯৪ রানেই গুঁটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫৪ রানে একাই ৫ উইকেট শিকার করেন বুমরাহ। অপরদিকে ৪৪ রানে ৩ উইকেট নেন ভুবনেশ্বর। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন হাশিম আমলা।
আর ভারনন ফিল্যান্ডারের ব্যাট থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রান। ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার ফলে মাত্র ৭ রানে এগিয়ে থেকে বোলিংয়ে নেমেছিলো স্বাগতিক প্রোটিয়ারা। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১ উইকেটে ৪৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিলো ভারত।
কিন্তু তৃতীয় দিন খেলতে নেমেই ওয়ান্ডারার্সের বাউন্সি পিচে রীতিমত মরণফাঁদের মুখে পড়ে কোহলি বাহিনী। প্রোটিয়া বোলারদের একেকটি বল যেন আগুনের গোলার মতো আঘাত হানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে। তবে এরপরেও সেই আগুনে বোলিংয়ের সামনেই ২৪৭ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় সফরকারীরা।
ফলে প্রোটিয়াদের সামনে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ২৪১ রানের। টেস্টের তৃতীয় দিনই সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে বিপদের মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাও। ভুবনেশ্বর, বুমরাহ, ইশান্তের ঝড়ের গতিতে বোলিংয়ের সামনে প্রাণপণ চেষ্টা করেও টিকতে পারেননি ওপেনার অ্যাইডেন মার্করাম। তবে ভাগ্য ভালোই বলতে হবে প্রোটিয়াদের।
কারণ চতুর্থ দিনের শেষ ভাগে যেভাবে বল বাউন্স করছিলো একটা সময় বড় বিপদেরই আশঙ্কায় ছিলেন ব্যাটসম্যানেরা। ইশান্ত শর্মার একটি বল ডিন এলগারের হেলমেটে আঘাত হানার পর খেলা বন্ধ করারও চিন্তা করছিলেন মাঠে দায়িত্বরত আম্পায়াররা।
যদিও শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত বাউন্সি পিচের কারণে ব্যাটসম্যানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ১৯ মিনিট আগেই খেলা শেষ করতে বাধ্য হন তাঁরা। এরপর চতুর্থ দিন ১ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে ১৭৭ রানে অল আউট হয় স্বাগতিকরা।
উল্লেখ্য সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ৭২ এবং ১৩৫ রানে ভারতকে হারিয়ে আগেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিলো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ।