আরেকটি ফাইনাল, আরেকটি হার

ছবি:

মিরপুরের মাঠ বাংলাদেশের জন্য শুভচিহ্নহীন রয়ে গেল। লঙ্কানদের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হারের মধ্য দিয়ে এই নিয়ে মিরপুরে খেলা চার ফাইনালে হারলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে মিরপুরে খেলা লঙ্কানদের তিন ফাইনালের তিনটিতেই জয় পেলো শ্রীলঙ্কা।
ফাইনালে আঙ্গুলের ইনজুরির কারনে সাকিবকে পায় নি বাংলাদেশ। যার কারনে ২২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হত। তাই হয়তো শুরু থেকে বেশ সতর্ক ছিলেন তামিম।
কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নয় লঙ্কানরা। বাংলাদেশকে আহত অবস্থায় পেয়ে চেপে ধরে দুই ওপেনিং বোলার লাকমল ও চামিরা। ১৮ বল খেলে মাত্র ৩ রান করা তামিম রানের খোঁজে চামিরাকে পুল করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন।
টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড অনে ক্যাচ তোলেন তিনি। তামিমের পথ ধরেন বিজয়ের বদলি হিসেবে ওপেন করতে নামা মিঠুন। লাকমলকে নবম ওভারে ফররওয়ার্ড ডিফেন্স করে রান নিতে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু লং অনে সতর্ক থিসারা পেরেরার থ্রো'তে রান আউট হন মিঠুন। ২৭ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। দুই ওপেনারের বিদায়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে চাপ মুক্ত করার দায়িত্ব বর্তায় সাব্বির-মুশফিকের উপর।
ব্যাটিং পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে প্রতি আক্রমন করার চেস্টা করেন সাব্বির। কিন্তু ফলাফল সাব্বিরের পক্ষে যায় নি। চামারাকে পুল করতে গয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন তিনি। ২ রান যোগ করে দলীয় ২২ রানে সাজঘরে ফিরে যান সাব্বির। উপরের সারির উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে সঠিক পথে ফেরান দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়ে বাউন্ডারির খোঁজে থাকা রিয়াদের ব্যাটে রান বাড়াতে থাকে বাংলাদেশ। অন্য প্রান্তে মুশফিক প্রান্ত বদল করে খেলে জুটি বড় করে যান। তবে বিপদ ছিল সন্নিকটে।
২১তম ওভারে ধনঞ্জয়ার গুগলিতে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন ভালো খেলতে থাকা মুশফিক। তবে রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান তিনি। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি তার। সেই ধনঞ্জয়ার করা ২৫তম ওভারে এসে সুইপ শট খেলার চেস্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় করে বসেন মুশফিক।

শর্ট থার্ড ম্যানে থাকা ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলেন তিনি। ২২ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান মুশফিক। উইকেট পতনে ক্রিজে আসা মিরাজ ৫ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরে যান। ধনঞ্জয়ার দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন তিনি।
ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের শেষ ভরসা তখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারে এসে ৭০ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। একই সাথে দলের স্কোর একশ ছাড়া করেন তিনি। সাইফের সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বিপদ মুক্ত করার চেস্টা করেন মাহমুদুল্লাহ।
কিন্তু ৩৭তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝির ফলাফল স্বরূপ সাইফউদ্দিনকে উইকেট বিসর্জন দিতে হয়। ৮ রান যোগ করে আউট হন তিনি। সাইফের বিদায়ে ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি।
নিয়মিত উইকেট পতনে রান রেটের চাপ বাড়তে থাকা। রান বাড়াতে বড় শট খেলা আবশ্যক ছিল টাইগারদের। রান তাড়া করতে গিয়ে মাধুশাংকার লো ফুল টসে মিড উইকেটে ক্যাচ আউট হন মাশরাফি। ঠিক পরের বলেই রুবেলকে বোল্ড করে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা।
নিজের করা পরের ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহকে আউট করে হ্যাট্রিক তুলে নেন মাধুশাংকা। শেষ পর্যন্ত ৪২তম ওভারে ১৪২ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ৭৯ রানের বড় জয় নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে দলে তিনটি পরিবর্তন এনে ফাইনালে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। দল বদলের সুফর পেতে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি টাইগারদের। অফ স্পিনার মিরাজকে মেরে খেলতে গিয়ে লং অনের ক্যাচ তোলেন তিনি। ৮ রান তুলতেই লঙ্কানদের প্রথম উইকেটের পতন ঘটান মিরাজ।
তবে সেই মিরাজের এক ওভারেই তিন ছয় ও এক চার হাঁকিয়ে ক্রিজে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তরুন কুসাল মেন্ডিস। আগ্রাসী ব্যাটিং করে চাপ সরাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মাশরাফি সেটা হতে দেননি। অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতা ৯ বলে ২৮ রান করা মেন্ডিসের কাল হয়ে দাঁড়ায়।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করে লঙ্কানরা। থারাঙ্গা-ডিকওয়েলা জুটি গড়ে বড় পুঁজির ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু লঙ্কান হানিমুন পিরিয়ড বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রান আটকে সুযোগ সৃষ্টি করে লঙ্কান ক্যাম্পে ভীত ছড়ায় মিরাজ-মাশরাফিরা। তবে ভাগ্য কথা বলছিল থারাঙ্গা-ডিকওয়েলার হয়ে।
ম্যাচে ফিরতে উইকেট আবশ্যক ছিল। সাইফের প্রথম ওয়ানডে উইকেটের মধ্য দিয়ে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরে টাইগাররা। ডিকওয়েলাকে বিদায় করে দুয়ার খুলে দেন তিনি। উইকেট পতনে লঙ্কানদের রান আটকে ফেলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশরা। চাপের মুখে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে লঙ্কানরা।
মিডেল ওভারে পেসারদের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ফিফটি করা থারাঙ্গা ও ভয়ঙ্কর পেরেরাকে দ্রুত বিদায় করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। চান্দিমাল টিকে থাকলেও রুবেল-মুস্তাফিজরা জুটি গড়তে দেয়নি লঙ্কানদের। গুনারাত্নার পর একে একে লোয়ার অর্ডারের বাকী ব্যাটসম্যানদের স্থায়ী হতে দেয়নি রুবেল ও মুস্তাফিজ।
শেষ পর্যন্ত ২২১ রান তুলে অল আউট হয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে দিনের সেরা বোলার ছিলেন রুবেল হোসাইন। সর্বোচ্চ চার উইকেট শিকার করেন তিনি। এছাড়া মুস্তাফিজ দুটি উইকেট নেন। মিরাজ ও মাশরাফি একটি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ একাদশ-
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিথুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুশফিকুর রহিম (উইকেট রক্ষক), মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মেহেদি হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কা একাদশ-
উপুল থারাঙ্গা, দানুশকা গুনাথিলাকা, কুশল মেন্ডিস, দীনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেটরক্ষক), আসেলা গুনারত্নে, থিসারা পেরেরা, আকিলা ধনঞ্জয়া, সুরঙ্গা লাকমল, দুশমন্ত চামিরা, শিহান মাদুশাংকা।