স্নায়ুর পরীক্ষায় ব্যর্থ মাশরাফিরা

ছবি:

টানা তিন ম্যাচে দারুণভাবে জয়ের পর ১০ উইকেটের হার আসলেই মেনে নেয়া কঠিন। ফাইনালের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে এরূপ পরাজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হতাশ দেশের অগণিত ক্রিকেট প্রেমী।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য এই ম্যাচটিকে স্রেফ একটি বাজে দিন হিসেবেই অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা আরেকটু সেট হয়ে খেলতে পারলে ৮২ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়তে হতো না দলকে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন,
'টপ অর্ডারে যারা আউট হয়েছে। তারা কিছু সময় হলেও পার করেছে। কোনো কমপ্লেইন করেনি। এটা ব্যাড ডে। আরলি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে মিডল অর্ডারে যারা ব্যাটিং করছিল তারা আরেকটু সেট হয়ে বেশি রানের দিকে না যেয়ে তারপর হয়ত রান টাকে আরেকটু বিল্ড আপ করা যেত।'
টাইগার দলপতি আরো বলেন, 'যেহেতু চারটা আরলি উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ওখান থেকেও আমাদের ১৮০ বা দুইশ রান করার মতো অ্যাবিলিটি ছিল। তো আমার কাছে মনে হয় ওখানে এপ্লিকেশন আমরা ঠিকমতো করিনি। উইকেটে আরেকটু সেট হয়ে আত্মবিশ্বাস আরেকটু বাড়িয়ে আমাদের ব্যাটিং ইনিংসটাকে আরেকটু হেলদি করার দরকার ছিল।'
এই ম্যাচে লঙ্কান বোলারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা একেবারেই দাঁড়াতে পারেননি। তবে এরপরেও ফাইনালের আগে ব্যাটসম্যানদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন না মাশরাফি। তাঁর মতে দলের সব ব্যাটসম্যানই বেশ কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নিজেদের খেলার উন্নতি করতে। তাই তাদের ব্যাটিং নিয়ে কোনো অভিযোগ তুললেন না অধিনায়ক। বললেন,

'যেহেতু ফাইনালের আগে আমার মনে হয় না ডিটেইলসে যাওয়া উচিত। আমি সিউর যে, আমি তাদের উপর কমপ্লেইন করতে পারতাম যদি তারা হার্ড ওয়ার্ক ও চেষ্টা না করত। তারা যে চেষ্টাটা করছে একটা-দুটা রান না করে ওখান থেকে বের হয়ে আসাটা কঠিন।'
তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে এই ম্যাচে ভালো কিছু করা সম্ভব ছিলো বলেও স্বীকার করেছেন টাইগার দলপতি। তাঁর অভিমত উইকেটে আরো বেশি সময় থাকতে পারলে ভালো একটি লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পারতো দল। তাঁর ভাষায়,
'হয়তো বা তাদের (ব্যাটসম্যানদের) জন্য আরও ভালো কিছু করার ছিল। উইকেটে আরও সময় কাটাতে পারত। ২০-২২ ওভারে অলআউট হয়েছি। যে সময়টা পেয়েছি…. যদি স্ট্রাইক রেট কমও হতো তাহলেও কেউ প্রশ্ন আনতো না।'
অবশ্য দিন শেষে ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই কথা বলেছেন টাইগার কাপ্তান। তাঁর বিশ্বাস দ্রুতই ভুলগুলো শুধরে কামব্যাক করবে সবাই। মাশরাফি বলছিলেন, 'আমার কাছে মনে হয় তাদের জন্য একটা ভালো সুযোগ ছিলো। সবাই চেষ্টা করছে। দলের একজন-দুজন অনেক দিন ধরেই খেলছে। এ ধরণের পরিস্থিতিটা পার করেছে। কঠিন সময়ে তারা বেরও হয়ে এসেছে। আমি আসলে প্রত্যাশা করছি তারা এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।'
টানা তিন ম্যাচে জয়ের পর এভাবে পপাত ধরণীতল হওয়ার পর মাশরাফি নিজেও স্বীকার করেছেন এমনটা একেবারেই ভাবেননি তিনি। অন্তত এভাবে পরাজয়ের কথা তো চিন্তাও করেননি তিনি। তাঁর কণ্ঠেই সেই আভাস পাওয়া গেলো। বললেন,
'আমরা জানি যে শ্রীলঙ্কা আমাদের হারাতে পারে। কিন্তু এভাবে আমরা হারব সেটা কেউই প্রত্যাশা করিনি। এটাতো তো সত্যি। ড্রেসিং রুমের কেউই এটা বিশ্বাস করবে না যে আমাদেরকে শ্রীলঙ্কা হারাতে পারে না। শেষ তিন ম্যাচ এভাবে খেলার পর এভাবে হারবো সেটা হয় না।'
এভাবে লজ্জাজনক পরাজয়ের পরও অবশ্য আশা হারাচ্ছেন না মাশরাফি। ফাইনালে পূর্ণ উদ্যমে আবারো ফিরে আসবে সবাই বলে জানান তিনি। ইতিবাচক চিন্তা করার পক্ষপাতী টাইগার কাপ্তানের বক্তব্য,
'আসলে কমেন্ট করা খুব কঠিন এভাবে তিন ম্যাচে পারফরম্যান্সের পর। ম্যাচ ডিটেইলস নিয়ে এক্সপ্লেইন করাও কঠিন। আমার কাছে মনে হয়..যেভাবে আমরা শেষ তিন ম্যাচ খেলেছি সেভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। স্টিল আমাদের ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। হয়তোবা এটা আমাদের জন্য ভালো একটা ওয়েকআপ কল ছিল ফাইনালের আগে। হয়তো অামাদের নার্ভটা আরেকটু শক্ত হবে।'