তবুও রাজত্ব ধরে রাখল বাংলাদেশ

ছবি:

ফেভারিটের মতই জিতল বাংলাদেশ। 'ক্লিনিকাল' পারফর্মেন্স বলতে যা বুঝায়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগার বোলাররা সেটাই করে দেখালো। ২১৬ সালের মাঝারি স্কোর গড়েও ৯১ রানের বিশাল ব্যবধানের জয় পায় মাশরাফি বাহিনী। ২১৭ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করতে হলে শুরুতে উইকেট দরকার ছিল বাংলাদেশের।
কাজটা করছেন অধিনায়ক মাশরাফিই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ভয়ঙ্কর মাসাকাদজাকে স্লিপে থাকা সাব্বিরের ক্যাচে পরিনত করে পথ দেখালেন তিনি। ১৫ বল খেলে ৫ রান করে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন অভিজ্ঞ মাসাকাদজা। দলের স্কোর তখন ১৪ রান। দ্বিতীয় উইকেটের জন্য বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি টাইগারদের।
সপ্তম ওভারে সাকিবের নিরীহ ডেলিভারি বাউন্ডারিতে আঁচড়ে ফেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন আরেক ওপেনার সলোমন মিরে। ঠিক পরের বলে আর্ম বলে ব্যাকফুট থেকে খেলতে গিয়ে লেগ বিফড়ের ফাঁদে পড়েন আরেক অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর। ওভারের শেষ দুই বলে পরপর দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা জাগান সাকিব।
হ্যাট্রিক না হলেও জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডারে চতুর্থ আঘাত হানতে বেশি সময় নেয় নি মাশরাফি।আরভিনকে গুড লেন্থ থেকে বের হয়ে যাওয়া বলে স্লিপে সতর্ক সাব্বিরের ক্যাচে পরিনত করেন টাইগার অধিনায়ক। টানা উইকেট পতনে জিম্বাবুয়ের কাজ কঠিন করে তোলে বাংলাদেশের দুই ওপেনিং বোলার।
তবে সদ্য ক্রিজে আসা ইনফর্ম সিকান্দার রাজা প্রতি আক্রমনে রান তোলার সিদ্ধান্ত নেন। সাকিবকে স্টেপ আউট করে বাউন্ডারিতে পাঠানোর পর মাশরাফিকে পুল করে মিড উইকেট বাউন্ডারি ছাড়া করেন তিনি। মূলত তার আগ্রাসী ব্যাটিং জিম্বাবুয়ের স্কোর অর্ধ শত ছাড়াতে সাহায্য করে। তবে লাগাম টেনে ধরেন মুস্তাফিজ। নতুন স্পেলে টানা তিন ওভার বল করে একটি রানও খরচা করেননি তিনি।
অন্যপ্রান্তের মিতব্যয়ী বোলিংয়ের ফল পায় সানজামুল। ২৩তম ওভারে ৪২ বল খেলে ১৪ রানের ধির গতির ইনিংস খেলে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন পিটার মুর। ঠিক পরের বলেই জিম্বাবুয়ের আরেক স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ম্যালকম ওয়েলারকে ফেরান তিনি। প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের সামনে ধরা পড়েন ওয়ালার।

পর পর দুই উইকেটে হ্যাট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি করলেও ইতিহাস গড়া হয়নি সানজামুলের। এরপর ক্রিমার ২৩ রানের ইনিংস খেলে মৃদু আশা জাগালেও রুবেলের বোলিংয়ে থামতে হয় তাকে। বাংলাদেশের জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুস্তাফিজ তার দ্বিতীয় স্পেলে এসে এক প্রান্ত আগলে রাখা সিকান্দার রাজাকে সাজঘরে পাঠিয়ে কাজ সহজ করে দেন।
৫৯ বলে ৩৯ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে ইনফর্ম রাজা। সেখান থেকে মাত্র ১২৫ রানে জিম্বাবুয়েকে অল আউট করে সাকিব ও মুস্তাফিজ। সাকিব সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া মাশরাফি, সানজামুল ও মুস্তাফিজ দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে ধির গতির উইকেটে ২১৬/৯ রানের পুঁজি গড়তে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ব্যাটিং স্বর্গ না হলেও মাত্র দুইশ ছাড়ানো স্কোরের উইকেট ছিল না। বিশেষ করে বিজয়ের দ্রুত বিদায়ের পর সাকিব-তামিমের শত রানের জুটির পর এমন মাঝারি স্কোর আশার বাইরে ছিল। ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে পাঁচের উপর রান রেটে ৫১ রান করার পর রাজা ও ওয়েলারে রান থমকে যায়।
তবে তখনো ম্যাচ বাংলাদেশের নাগালেই ছিল। সাকিব ও তামিম স্বভাব বিরুদ্ধ করলেও ইনিংস বড় করে দ্রুত রান তোলার সুযোগ ছিল। কিন্তু ৫১ (৮০ বলে) রানের ইনিংস খেলে সাকিবের বিদায়ের পর শুরু হয় গ্রাহাম ক্রিমার শো। মিডেল অর্ডারে লেগ স্পিনের বিপক্ষে টাইগার ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা ফের দিনের আলোয় আসে।
লেন্থ থেকে ভেতরে আসা গুগলিতেই একে একে সাজঘরে ফিরে যান মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও উইকেটে জমে যাওয়া তামিম। ভালো সূচনার পর মুশফিক সুইপ শট খেলতে গিয়ে আউট হন। সম্পূর্ণ পরাস্ত হন রিয়াদ। তবে বড় ধাক্কা আসে তামিমের ভুলে। রান থমকে যাওয়ায় ক্রিমারকে চাপে ফেলতে স্টেপ আউট করে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন তিনি।
৭৬ রানে (১০৫ বল) থামে তামিমের ইনিংস। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ অবদান রাখতে পারেনি সাব্বির-নাসির ও মাশরাফিরা। ক্রিমারের বলের মাশরাফি বিদায় নিলেও জারভিসকে উইকেট দিয়ে আসেন সাব্বির-নাসির। ১৪৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর ১৬৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে বসার পর লজ্জার মুখে পড়তে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু লোয়ার অর্ডারে সানজামুলের পর মুস্তাফিজের মহাগুরুত্বপূর্ণ দুই ইনিংসে দুইশ ছাড়ানো স্কোর পায় বাংলাদেশ দল। সানজামুল ১৯ ও মুস্তাফিজ ১৮ রানের ইনিংস খেলেন, যা বাংলাদেশকে লড়াই করার মত পুঁজি এনে দেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে জারভিস তিনটি উইকেট শিকার করেন। তবে দিনের সেরা বোলার ছিলেন অধিনায়ক গ্রায়াম ক্রিমার। চার উইকেট শিকার করেন তিনি।
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সানজামুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
জিম্বাবুয়ে একাদশ: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সলোমন মিরে, পিটার মুর (উইকেটরক্ষক), ক্রেইগ আরভিন, সিকান্দার রাজা, ব্রেন্ডন টেইলর, ম্যালকম ওয়ালার, গ্রায়েম ক্রেমার (অধিনায়ক), কাইল জারভিস, ব্লেসিং মুজারাব্বানি, তেন্দাই চাতারা।