রশিদ-নবিদের দিকে তাকিয়ে আফগান মেয়েরা

ছবি: দেশ ছেড়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন আফগান নারী ক্রিকেটাররা

দুই দশক পর ২০২১ সালে আফগানিস্তানের সরকারের দায়িত্ব নেয় তালেবানরা। ক্ষমতায় এসেই মেয়েদের খেলা, পড়াশোনা ও বাইরের বাইরের কাজ নিষিদ্ধ করে দেয় তারা। ফলে আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে আফগানিস্তান ছেড়ে অনেকে মেলবোর্ন, ক্যানবেরায় পাড়ি জমিয়েছেন। ক্রিকেটে ফেরার আশায় অস্ট্রেলিয়াতে ক্লাব ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সেদিকউল্লাহ-ওমরজাইয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের ২৭৩
৫৪ মিনিট আগে
মাঝে শরণার্থী দল হিসেবে ক্রিকেট খেলতে আইসিসির কাছে চিঠিও লিখেছিলেন আফগান নারীরা। তবে এখন পর্যন্ত সুখবর শুনতে পাননি ফিরোজা, বেনাফশা হাশিমির মতো ক্রিকেটাররা। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দেশে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের ক্রিকেট চালু রাখাও বাধ্যতামূলক। কিন্তু আফগানিস্তান সেটা না মানলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে প্রতিবাদ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশ।
আইসিসির টুর্নামেন্টে খেলতে আপত্তি না থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কদিন আগে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়েছেন ১৬০ জনের বেশি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। সাউথ আফ্রিকার ক্রীড়া মন্ত্রী গেইটন ম্যাকেঞ্জিও একই দাবি তুলেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত সেই দেশের বোর্ড কিংবা আইসিসি কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এসব ছাপিয়ে ক্রিকেটে ফিরতে রশিদ, নবিদের মতো আফগান তারকাদের দিকে তাকিয়ে আছেন দেশটির মেয়েরা। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর পাওয়ার প্লে পডকাস্টে এ প্রসঙ্গে ফিরোজা বলেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটে এখন তারা (আফগানিস্তানের ছেলেরা) বেশ ভালো পর্যায়ে আছে। তারা যদি আমাদের সমর্থন করতে শুরু করে তাহলে সেটা আমাদের দলের উপর অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। দেখুন, দুনিয়ার সবাই রশিদ খানকে চেনে। আমি অস্ট্রেলিয়াতে যখন ক্রিকেট ক্লাবে গেলাম এবং তারা যখন জানলো আমি আফগানিস্তানের তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ওহ, ফিরোজা তুমি রশিদ খানকে দেখেছো?’
অনেক সময় মেয়ে ক্রিকেটারদের প্রতি অবিচার করা হয়: জ্যোতি
১৮ ফেব্রুয়ারি ২৫
‘আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি রশিদ খানকে চেনো?’ সবাই রশিদ খানকে চেনে। এমনকি যারা টুকটাক ক্রিকেট বুঝে তারা সবাই রশিদ খানকে চেনে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, তারা আমাদের জন্য বড় সহায়ক হতে পারে। এটা শুধু আমরা যারা ক্রিকেট খেলি তাদের জন্য না, আফগানিস্তানের সব নারীদের জন্যই ভালো হবে। আফগানিস্তানের মেয়েরা কোন স্পোর্টসেই অংশগ্রহণ করতে পারে না। তারা কিন্তু পড়াশোনাও করতে পারছে না। ছেলেরা যদি আমাদের সমর্থন করে তাহলে সবার জন্য দুয়ার খুলে যাবে।’
খেলাধুলার মতো আফগান মেয়েদের পড়াশোনাও বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার। ক্ষমতা হাতে নিয়েই মেয়েদের নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যা প্রশিক্ষণের ইনস্টিটিউটগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের এমন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান করেছিলেন রশিদ, নবি, গুরবাজের মতো ক্রিকেটাররা। এমন অবস্থায় জাতীয় তারকা বনে যাওয়া রশিদদের লাখো আফগান মেয়েদের কন্ঠস্বর হতে অনুরোধ করেছেন ফিরোজা।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করা ফিরোজা বলেন, ‘এমনটা হলে আফগানিস্তানের মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারবে, পড়াশোনাও করতে পারবে। আফগানিস্তানের এখন খুবই বাজে অবস্থা। এখন তারা খেলাধুলা করতে পারছে না, পড়াশোনাও করতে পারছে না। খেলাধুলা না হয় অন্যরকম ব্যাপার সেটা বুঝলাম কিন্তু পড়াশোনা তো প্রত্যেকটা মানুষের মৌলিক চাহিদা।’
‘আমাদের দেশের মেয়েদের সেই অধিকারও নেই। তারা যদি আমার কথা শুনতে পায় তাহলে আফগানিস্তানের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনুরোধ করব আপনারা আওয়াজ তুলুন। আমাদের জন্য কিছু করুন, মেয়েদের জন্য কিছু করুন। আপনারা এখন আফগানিস্তানের কণ্ঠস্বর। এই মুহূর্তে তারা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তারা লাখ লাখ মেয়েদের কণ্ঠস্বর হতে পারেন।’