আমরা ভয় ছাড়া খেলবো, নিজেদের উজার করে দেবো: স্টোকস

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
অ্যাশেজের লড়াই শুরু হতে সপ্তাহখানেকের বেশি বাকি নেই। ইতোমধ্যে এই উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইকে ঘিরে কথার লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কথার চেয়ে মাঠের লড়াইটা যে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা ভালো করেই জানেন বেন স্টোকস। যদিও মাঠের বাইরে ইংল্যান্ডকে দুশ্চিন্তায় রাখছে দলপতির ফিটনেস।
চোটের কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেছেন মাত্র দ??ই ম্যাচ। এরপর পুরো টুর্নামেন্টে বসে ছিলেন সাইড বেঞ্চে। কিছুটা ফিট হয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ফিরলেও দুই ইনিংসে এক ওভারও বোলিং করেননি ইংল্যান্ডের এই অধিনায়ক।
তাই অ্যাশেজের আগে স্টোকসের ফিটনেস ইংল্যান্ড শিবিরের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। যদিও স্টোকস সব শঙ্কা উড়িয়ে জানিয়েছেন, নিজেদের উজার করে দিয়ে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলবে ইংল্যান্ড। তাছাড়া ফলাফল যাই হোক না কেন সবাই বিনোদিত হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন স্টোকস।
স্টোকসের ভাষ্যমতে, 'আমরা ভয় ছাড়া খেলবো। নিজেদের উজার করে দেবো। আর আমরা তৈরি করবো কিছু স্মৃতি।আশা করি, ফল এমন হবে যেন আমরা অ্যাশেজ ফেরাতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে- যাই হোক না কেন, আপনারা বিনোদিত হবেন।'

'নেতা হিসেবে, আমি কাগজ-কলমে খুব বেশি সময় দেই না। আর সত্যি বলতে ড্রেসিং রুমেও লম্বা সময় কথা বলি না। আমি অনেকটা এরকম, ‘চলো ছেলেরা, এটা করে ফেলে যাক। চলো উদাহরণ তৈরি করি। তবে আমি পরিষ্কারভাবে জানি কী করার চেষ্টা করতে যাচ্ছি, তাতে ঝুঁকি কেমন; এটা আমার বা মাঠে নিজস্ব লক্ষ্যের চেয়ে বড় কিছু' আরও যোগ করেন তিনি।
গেল এক বছরে ইংল্যান্ড ১৩ টেস্টের মাঝে জিতেছে ১১টিতে। ওভার প্রতি রান করেছে ৪.৮৫ রেটে। এ ছাড়া দলের পাঁচ ব্যাটার ৭৫ স্ট্রাইক রেটের ওপরে রান করেছে। দলের এই পরিবর্তনের জন্য অবশ্য কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে কৃতিত্ব দিয়েছেন স্টোকস।
ইংলিশ এই অধিনায়কের ভাষ্যমতে, 'ব্রেন্ডনকে (ম্যাককালাম) আমার কৃতিত্ব দিতেই হবে কারণ হেড কোচ হিসেবে তার দর্শন হচ্ছে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা যেন সবাই দল হতে চায়। ব্রেন্ডন সবসময় বলে, আমরা এখানে এসেছি স্মৃতি তৈরি করতে, কারণ তুমি এখানে বেশি দিন থাকবে না। দিনশেষে এটাই আসল ব্যাপার।'
'আমরা এমন এক ড্রেসিং রুম তৈরি করতে চাই যেখানে থাকাটা হবে আনন্দের। আমাদের ক্রিকেটারদের- বিশেষত ব্যাটারদের এমন স্বাধীনতা দিতে চাই, যেটা হয়তো তারা কখনোই পায়নি। এমন কিছু ক্রিকেটারদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য খুব আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে যখন আমি কাউন্টির অনেকের কাছ থেকে ফোন পাই, তারা বলে, ‘আমাকে বলো, কী করলে সুযোগ পাবো?’ যোগ করেন স্টোকস।
২০১৯ সালের অ্যাশেজে মাত্র একটি টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। তাতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল স্টোকসের। তার অপরাজিত ১৩৪ রানের ইনিংস ইংলিশরা জয় পেয়েছিল এক উইকেটে। একা হাতে দলকে খাঁদের কিনারা থেকে জয়ের বন্দরে নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
স্টোকস মনে করেন, তিনি অবসর নেয়ার পরও হেডিংলি টেস্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মানুষ তাকে স্মরণ করবে। স্টোকস বলেন, 'আমি যখন অবসর নেবো, আমি জানি আমার ক্যারিয়ারের ২০১৯ এর হেডিংলির ম্যাচটার কথা মানুষ আমাকে বলে যাবে। যদি আপনি ভুলে গিয়ে থাকেন, তাহলে মনে করিয়ে দেই, সিরিজে আমরা তখন ২-০তে পিছিয়ে ছিলাম। ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজে টিকিয়ে রাখতে তৃতীয় টেস্টে আমরা ৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমেছিলাম। এটা ছিল রেকর্ড রান তাড়া।'
'ওই মুহূর্তে, আমার জন্য ওই ইনিংসে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথই ছিল। আমি কখনোই আমার ব্যাটিংয়ের ধরণ বদলানো বা নিরাপদে খেলার কথা ভাবিনি। কারণ একটা নির্দিষ্ট ধরনে খেলেই শুরুতে আমরা ম্যাচে ফিরেছি। মনে আছে লিচ আসার পর থেকে আমি স্কোরবোর্ডে গোণা শুরু করেছিলাম, কখন এক অঙ্কে আসে দেখছিলাম। এমনকি অস্ট্রেলিয়া যখন নাথান লায়ানের মতো অফ স্পিনার নিয়ে এলো, তখনও আমি জানতাম আমাকে এভাবেই চালিয়ে যেতে হবে এক বা দুই নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বদলে।'
ওই ইনিংসটি স্মরণ করে স্টোকস আরও বলেন, 'যখন আমি ওই ছক্কাটা মারলাম, আর দুইয়ে চলে এলো রান..ওহ! আমি বলকে যেন ফুঁ দিয়ে বাউন্ডারি পাড় করাতে চাচ্ছিলাম। পরে সত্যিই ফিল্ডারের আঙুল ছুঁয়ে গেছে। ওই ইনিংসে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, হয়তো ম্যাচের দিকও বদলে যেতে পারতো; কিন্তু আমার মাথায় অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। যদি শেষে পৌঁছাতে হয়, তাহলে আমার মতো করেই যেতে হবে, কোনো ভয় ছাড়া।'
'যখন ম্যাচ শেষ হলো, আমরা সবাই যেন পাগল তখন, রীতিমতো বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। দৌড়াচ্ছিলাম, সমর্থকদের মতো করে উদযাপন করছিলাম। ড্রেসিং রুমে আমাদের দারুণ সময় কেটেছিল দল হিসেবে, এটার শেষ হয়েছিল বড় ট্যাক্সিতে করে ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে। প্রায় ২০০ পাউন্ডের বার্গার ও চিপস অর্ডার করেছিলাম। রুট বিল দিয়েছিল- আমার মনে হয় ইয়র্কশায়ারের লোকজন যে কিপটে, এই কথা মিথ্যা প্রমাণ করতে চেয়েছিল ও!'