‘শর্টকাটে’ সাফল্যের খোঁজেই স্বপ্নভঙ্গ!

ছবি: সংগৃহীত

|| সৈয়দ সামি, দুবাই থেকে ||
এশিয়া কাপ সেপ্টেম্বরে, ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখা যেতে পারে ৩ বার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২৫
এশিয়া কাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা ছিল অগোছালো। দেশ ছাড়ার আগে মেহেদী হাসান মিরাজ বা সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমদের কাউকে ওপেনিংয়ে পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল ম্যানেজমেন্ট। যদিও দুবাইয়ে পা রেখেই সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে তারা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকানো নাইম শেখই হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ দলের মূল পরিকল্পনার অংশ। তিনি অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান ছিটকে যাওয়ায়। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি নাইম।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৬ রান করে আউট হন তিনি। এরপরই টিম ম্যানেজমেন্ট ফেরত যায় পুরোনো পরিকল্পনায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগেই শোনা যায় ওপেনিংয়ে বড় চমক আসতে চলেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পরই সেই চমক খোলাসা হয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কম্বিনেশন ভেঙে ওপেনিংয়ে খেলানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমানকে। সাব্বির না পারলেও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ বলে ৩৮ রানের ওপেনার সুলভ ইনিংস।

মিরাজকে ওপেনিংয়ে খেলানোর চিন্তা যেহেতু আগে থেকেই ছিল তবে এক ম্যাচে ভরাডুবির পরে কেন? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে চারদিকে। বাংলাদেশ কি তবে সাফল্যের খোঁজে শর্টকাট পথ বেছে নিতে চেয়েছিল?
সিমন্স-মুশতাকের সঙ্গে ২০২৭ পর্যন্ত চুক্তি বাড়াচ্ছে বিসিবি
৯ ঘন্টা আগে
এই শর্টকাটের আরও উদাহরণ পাওয়া যাবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবাদত হোসেন। ১৪১ মাইল গতির বাউন্সারে পাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে শুরু। দুই বল পরে নিয়েছেন চারিথ আশালাঙ্কার উইকেট।
দ্বিতীয় ওভারে এসে তাসকিন আহমেদের দারুণ ক্যাচে দানুশকা গুনাথিলাকার উইকেট নেন এবাদত। প্রথম দুই ওভার শেষে এবাদত ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। যদিও পরের দুই ওভারে তার খরচা হয়েছে ৩৮ রান। প্রথম ১০ ওভারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক পেসারদের ওপর একটু বেশিই ভরসা করেছিলেন।
১১তম ওভারে তাসকিনকে বোলিংয়ে আনেন তিনি। এরপর এক ওভার সাকিব করলেও পরের ওভারে আবার ডাকেন এবাদতকে। দুই ছক্কা, একটি করে নো আর ওয়াইডে এবাদত খরচ করেন ২২ রান। তখনই বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে অনেকাংশে ছিটকে যায়।
মুস্তাফিজ তার বাকি দুই ওভারে কোটা পূরণ করেন ১৫ ও ১৭তম ওভারে। এই বাঁহাতি পেসার প্রথম ২ ওভারে ১৪ রান দিলেও পরের ২ ওভারে দিয়েছেন ১৮। তাসকিনের ওভার শেষ হয়ে যায় ১৬তম ওভারেই। শেষ তিন ওভারে বোলিংয়ের জন্য এবাদতের এক ওভারের অপশন খোলা ছিল বাংলাদেশের সামনে। বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেটের নেশায় আগেভাগেই পেসারদের বোলিং কোটা পূরণ করে ফেলায় ডেথ ওভারে ভরসা রাখতে হয় স্পিনার শেখ মেহেদীর ওপর।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ডেথ ওভারে স্পিনারদের ওপর ভরসা রাখা যেকোনো দলের জন্যই বড় জুয়া। তবে সেই জুয়ায় জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ ওভারে গেলেও ৪ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটের জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে মেহেদীর নো বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক হন আসিথা ফার্নান্দো।
শুধু বোলিং নয় ব্যাটিংয়েও গলদ রয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ম্যানেজমেন্ট থেকে ঘোষণা দেয়া হয় ইনফর্ম ব্যাটার আফিফ হোসেন ধ্রুবকে খেলানো হবে চার নম্বরে। যদিও এশিয়া কাপের দুই ম্যাচের পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে হয়েছে তাকে। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক রানের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছেন ৪ রান।
সেই সঙ্গে কিপিং গ্লাভস হাতে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিংয়ের ধরণ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ২৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ৮০! ম্যাচের অবস্থা যাই হোক তার মতো অভিজ্ঞ একজন ব্যাটারের কাছ থেকে নিশ্চিতভাবেই এর চেয়ে ভালো কিছু চায় দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় রানের ম্যাচেও মাহমুদউল্লাহর ধীর ব্যাটিং সমালোচকদের নজর কেড়েছে। এদিন তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ২৭ রান। ১৫তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে টানা দুই বলে ৪ আর ছক্কা না মারতে পারলে স্ট্রাইক রেট থাকতো সেই আশির ঘরেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আর মাস দেড়েক বাকি। এই বিশ্ব আসরে শর্টকাটে সফলতা খুঁজতে চাইলে, সফলতার পথে আরও দীর্ঘ হতেই পারে বাংলাদেশ দলের।