আগস্টেই বাংলাদেশে ফিরছে ক্রিকেট!

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
করোনা ভাইরাসের বাধা ডিঙিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। দিন পাচেক পরই সাউদাম্পটনে শুরু হবে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট। শুধু ক্যারিবিয়ানরা নয় ইংল্যান্ড হোম সিরিজ খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও। ইতোমধ্যে পাকিস্তান দল লন্ডনে পৌঁছে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। যেমনটা লন্ডন এসে করেছিল উইন্ডিজরাও।
ক্রিকেট ফেরার ঘোষণা এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গত মাসেই ক্রিকেটীয় কার্যক্রম শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। উপমহাদেশের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো মোকাবেলা করেছিল দ্বীপদেশটি।
কিন্তু করোনার প্রকোপ কমেনি এখনও বাংলাদেশে, ভারতে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের আতঙ্ক কাঁপিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রতিদিনই মানুষ মরছে, নতুন আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। যদিও এসবের মাঝেই সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে একমাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন সেক্টর সচল হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস, আদালত চলছে। সাধারণ মানুষ কাজে নেমে পড়েছে।
ব্যতিক্রম হয়ে আছে শুধু ক্রীড়াঙ্গন। জুলাই মাসেও কোনো খেলাধুলা শুরু না করার নির্দেশনা রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে। ইতোমধ্যে ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ফেডারেশনের অফিস খুলেছে। দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে। যেমনটা বিসিবির প্রাত্যহিক কাজগুলো চলছে। কর্মকর্তারা জরুরী দরকারে বিসিবি কার্যালয়ে আসছেন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন মিটিং করছেন, সেটা অবশ্য অনলাইনে।

বিসিবির এক কর্মকর্তার মতে, দেখেন আমাদের কিছুই থেমে নেই। আগে যেটা আমরা অফিসে বসে করতাম, সেগুলো এখন অনলাইনে করছি। আর আমাদের অনলাইনে কাজ তো অনেক। হিসাব বিভাগের লোক প্রায় নিয়মিতই আসছে।
বিসিবির নৈমত্তিক কাজ অব্যহত রয়েছে বলেই দাবি করলেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শুধু মাঠে ক্রিকেট নেই। এছাড়া আমাদের সব কার্যক্রম চলছে। ম্যানেজারদের মিটিং হচ্ছে, কোচরা মিটিং করছেন, ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচদের মিটিং হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ব্যাটসম্যানদের সেশন হয়েছে, কদিন পর বোলারদের সঙ্গে সেশন করবেন বোলিং কোচ। করোনাকালে ক্রিকেটারদের করণীয় জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সবকিছু মনিটর করা হচ্ছে। মেডিক্যাল বিভাগ তাদের কাজ করছে। পরিস্থিতি উন্নতি হলে ক্রিকেটও ফিরবে মাঠে। ক্রিকেটাররা অনুশীলন ফিরবেন।
করোনা পরবর্তী ক্রিকেট শুরুর রুপরেখাও তৈরি করে রেখেছে বিসিবি। এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সবকিছু ঠিক করা আছে। এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) করা আছে। করোনার পর কিভাবে সবকিছু চলবে। কিভাবে সবকিছু শুরু হবে।
এতকিছু যখন চলছে, তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রিকেট শুরুর প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে? আদৌ কবে শুরু হবে ক্রিকেট? যেখানে দেশে সব ধরনের ক্রিকেট স্থগিত রয়েছে গত মার্চ মাস থেকে।
সম্প্রতি ক্রিকেট শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে বিসিবি। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ক্রিকেট ফেরাতে মাঠগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ক্রিকেট পুনরায় শুরুর খুব কাছাকাছি আছে বিসিবি। চলতি জুলাই মাসে বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সচল হবে দেশের ক্রিকেট। প্রাথমিকভাবে ফিটনেস ক্যাম্প দিয়েই ক্রিকেটাররা ফিরবেন হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। মেডিক্যাল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে সব কার্যক্রম।
আর বিসিবিতে ক্রিকেট শুরুর আলোচনাও চলছে বেশ ভালোভাবে। সূত্র জানায়, ‘আলোচনা তো হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি কিছুই। হয়তো জুলাইয়ের শেষদিকে বা অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে। আমাদের মাঠগুলোতে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে ক্রিকেটীয় কার্যক্রম শুরু করা যায়। এটা আসলে পুরোপুরি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উপর। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই শুরু হয়ে যাবে।’
মেডিক্যাল বিভাগই পুরো পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা পরবর্তী ক্রিকেট শুরু হবে বাংলাদেশে। সূত্র জানিয়েছে, পুরো পরিকল্পনাটাই মেডিক্যাল বিভাগ করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তারা প্ল্যান দিবে। কিভাবে সবকিছু হবে। ক্যাম্পটা গ্রুপে হবে নাকি একাকী। গ্রুপ হলে একটা গ্রুপে কতজন থাকবে। তারা প্ল্যান দেয়ার পরই কাজ শুরু হবে। মেডিক্যাল বিভাগের পর শুরু হবে নির্বাচকদের কাজ। তখন তারা ক্যাম্পের জন্য একটা প্রাথমিক স্কোয়াড দিবেন।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ১১৪ জন। সামগ্রিকভাবে জুলাই মাসেও করোনার প্রকোপ কমবে কিনা বলা কঠিন।
ক্রিকেট শুরুর জন্য পরিস্থিতি উন্নতির কথাই বলছে বিসিবি। আরও কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করতে চায় তারা। সেক্ষেত্রে জুলাই মাসে ক্রিকেট শুরুর সম্ভাবনা কম। আগস্টের শুরুতেই হতে পারে ঈদুল আযহা। ঈদের ছুটি মিলিয়ে আরও বাড়তি কিছুদিন সময় পাবে বিসিবি। ততদিনে আরও উন্নতির আশা করছে বোর্ড। ক্রিকেট ফেরানোর জন্য তাই আগস্টের দিকেই তাকিয়ে আছে বিসিবি। তবে আগামী কয়েকদিন বড়সড় উন্নতি হলে ২০ জুলাইয়ের পরও মাঠে ফিরতে পারেন ক্রিকেটাররা।