তামিমের কাছে জাতীয় দলই সবার আগে

ছবি:

অধিনায়ক হিসেবে এর আগেও দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে টাইগার ওপেনার তামিম ইকবালের। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের গত আসরে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন চট্টগ্রামের এই তারকা ওপেনার।
এর আগের বছর দেশের আরেকটি শীর্ষস্থানীয় ক্লাব আবাহনীর অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তামিম। শুধু ক্লাব ক্রিকেটেই নয়, জাতীয় দলের হয়েও পার্টটাইম অধিনায়কের ভূমিকা পালন করার অভিজ্ঞতা আছে খান সাহেবের।
সুতরাং অধিনায়কত্ব যে তাঁর জন্য নতুন কিছু নয় তা বলাই বাহুল্য। আর এই কাজটি যে তামিম বেশ ভালোভাবেই করতে পারেন তার প্রমাণ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দিয়েছেন তিনি।
চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) আসরে এই তামিমের অধীনেই এখন পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলটি।
তবে অধিনায়ক হিসেবে তামিমের যতই সুখ্যাতি থাকুক না কেন, তিনি নিজে কখনোই সেটিকে বড় করে দেখতে চাননা। নিজেকে কখনোই বড় অধিনায়কের কাতারে ফেলতে আগ্রহী নন তামিম।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ বাংলা দৈনিক ইত্তফাককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে এমনটাই জানিয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার। চট্টগ্রামের এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার বলেছেন,
'আমি এখনো বলি না যে, আমি বড় অধিনায়ক। আমার পরিবারেই আমার চেয়ে ভালো অধিনায়ক আছে। দল ভালো করছে, আমি চেষ্টা করছি ভালো করার।'
প্রতিটি ম্যাচ থেকেই কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করেন তামিম । অধিনায়কত্বকেও শেখার বিষয় বলেই মনে করেন তিনি। সফল অধিনায়ক হতে হলে প্রতিনিয়তই শেখার মধ্যে থাকতে হবে জানিয়ে কুমিল্লা দলপতি বললেন,

'আমি এখনো শিখছি। আমি মনে করি, বর্ন ক্যাপ্টেন বলে কিছু নেই। ক্যাপ্টেন্সিটা শিখতে হয়। আমি প্রতিদিন এটা শেখার চেষ্টা করি, প্রতি ম্যাচে শেখার চেষ্টা করি। এভাবে চললে, একটা সময় হয়তো বলতে পারবো যে, আমি এখন ক্যাপ্টেন্সিটা পারি।'
কোচ হিসেবে এবার কুমিল্লা দলটিতে রয়েছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। যার হাত ধরেই আজকের সাকিব-মুস্তাফিজরা উঠে এসেছেন। তামিম কথা বলেছেন তাঁকে নিয়েও। সকলের শ্রদ্ধাভাজন সালাউদ্দিনকে কোচ হিসেবে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তামিম ইকবাল। বললেন,
'এ ছাড়া আরেকটা সুবিধা হলো হলো, আমি সালাউদ্দিন স্যারকে পেয়েছি কোচ হিসেবে। উনি আমাকে অনেক ফ্রিডম দিচ্ছেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এটা বেশ কাজে দিয়েছে।'
বিপিএলের গত আসরগুলোতে তামিমের পারফর্মেন্সের পারদটি উঁচুতে থাকলেও দলীয় পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো ছিলো না। তবে এবার তাঁর অধীনে কুমিল্লা বেশ ভালো অবস্থানেই আছে।
সুতরাং দলগত খারাপ পারফর্মেন্সের আক্ষেপটি আপাতত মিইয়ে গেছে তামিমের বলে স্বীকার করলেন তিনি। যদিও এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না তিনি। তামিমের ভাষায়,
'হ্যাঁ, এটা ভালো লাগছে। দল ভালো করছে, আমিও কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারছি। যদিও এখনো খেলা শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের এ পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে হবে। আমি বলবো, এখন আসল খেলা শুরু হলো। এখন থেকে প্রতিটা ম্যাচ আরো কঠিন হবে।'
বিপিএলের শুরু থেকেই পাঁচ বিদেশি খেলানো নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। এই বিষয়টি নিয়ে তামিম জানিয়েছেন তিনি নিজেও পাঁচ বিদেশি তত্ত্ব খুব একটা সমর্থন করেন না। বললেন,
'এবারের বিপিএল ভালোই হচ্ছে। বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে বিদেশির সংখ্যাটা পাঁচ না হয়ে চার হলে সেটা আমাদের জন্য ভালো হতো...'
এই প্রসঙ্গে তামিম আরো বলেন,'দিন শেষে কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। আমরা এখান থেকে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের তুলে আনতে চাই। এখন যদি ৪ জন ওভারসিজ খেলোয়াড় থাকতো, তাহলে মাঠে ৭টা দেশি খেলোয়াড় থাকতো। ওখান থেকে একটা খেলোয়াড় উঠে আসার সুযোগ অনেক বেশি থাকতো। আমরা এই অপরচুনিটি মিস করবো কেনো?'
গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন সময়ে হাতে চোট পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর সফরের মাঝেই দেশে ফিরে আসেন তিনি। তবে পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই বিপিএলে খেলতে নেমে পড়েন তামিম।
এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তামিম অবশ্য জানিয়েছেন বর্তমানে অনেকখানিই সুস্থ আছেন তিনি। খেলার আগে ফিজিওর সাথেও কথা বলেছেন বলে জানান কুমিল্লা অধিনায়ক। তাঁর ভাষ্যমতে,
'খেলার আগে আমি এমআরআই, স্ক্যানিং করিয়ে নিয়েছি। ফিজিওর সাথে আলাপ করেছি। ভালো খবর হলো, হাড়ে কোথাও কোনো ক্র্যাক নেই। ফলে আমি খেলতে পারছি।'
অবশ্য বিন্দুমাত্র ঝুঁকি মনে করলেও যে খেলতেন না সেটিও স্বীকার করলেন তামিম। জাতীয় দলের স্বার্থে যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে চান বলেও উল্লেখ করলেন এই টাইগার ওপেনার।
'আমি যদি বিন্দুমাত্র ঝুঁকি মনে করতাম, খেলতাম না। আমি সবসময় বলি, বিপিএল বড় ব্যাপার, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; কিন্তু জাতীয় দলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার ভবিষ্যৎ খেলা, জাতীয় দল, এসব মাথায় রেখে এবং ফিজিওর সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'