তামিমের কাছে সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

ছবি:

মাঠে খেলার সময় বরাবরই বেশ মারমুখী ভঙ্গীতে দেখা যায় টাইগার ওপেনার তামিম ইকবালকে। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় এবং মাঠের আম্পায়ারদের সাথেও এর আগে তাঁর বিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা রয়েছে। যার কারণে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে একাধিকবার।
তবে সেই মারমুখী তামিমের আড়ালেই যে একজন বিচক্ষণ এবং ক্রীড়াসুলভ ব্যক্তিত্বের ছায়া রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানতেন না। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) আসরে তারই নজীর রেখেছেন তামিম ইকবাল খান।
ঢাকা ডাইনামাইটসের বিপক্ষে বিপিএলের সর্বশেষ ম্যাচে অনন্য ক্রীড়াসুলভ আচরণের পরিচয় দিয়েছেন তামিম। এই ম্যাচে ডাইনামাইটসের ১৮তম ওভারে রান নিতে গিয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান কেভন কুপারের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান ডোয়াইন ব্রাভো। পরবর্তীতে নিজেই ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা শুরু করেন কুপার।
সেই সুযোগে তাঁকে আউট করে দেন লিটন কুমার দাস। কুপার ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরলেও তাঁকে ফিরিয়ে আনেন কুমিল্লা অধিনায়ক তামিম। এমনকি এর জন্য আম্পায়ারদের শরণাপন্নও হন তিনি। তামিমের এরূপ ক্রীড়াসুলভ আচরণের প্রশংসায় তাই পঞ্চমুখ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।
তবে তামিম কাজটি করেছিলেন কোনো সুনাম অর্জন করার জন্য নয়, বরং নিজের কাছে সৎ থাকার জন্যই। দেশের শীর্ষ বাংলা দৈনিক ইত্তেফাককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টাইগার ওপেনার নিজেই জানিয়েছেন এমনটা। তামিম বলছিলেন, 'দেখুন, আমার মাথায় একটা জিনিস কাজ করছিল যে, কুপার ফেয়ার ওয়েতে আউট হয়নি। ফলে তাকে উইকেটে ফিরিয়ে আনা উচিত।'

কুপারকে ফিরিয়ে আনার পর একটা সময় মনে হচ্ছিলো ম্যাচটিতে জয় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার। জহুরুল ইসলাম এবং কুপার মিলে চেষ্টাও করেছিলেন যথাসাধ্য। কুপারকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি যদি শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার বিপক্ষে যেত সেক্ষেত্রে কি আপসোস করতেন তামিম?
এই প্রশ্নের জবাবে আবারো সেই বিচক্ষণ এবং সৎ তামিম ইকবালেরই আবির্ভাব ঘটলো। তামিম জানিয়েছেন ম্যাচের ফলাফলের থেকেও তাঁর কাছে সততা বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর কুপারের জায়গায় অন্য বড় ব্যাটসম্যান থাকলেও একই কাজ করতেন তিনি।
'আপসোস করার প্রশ্নই আসে না। একবারও আফসোস করতাম না। আমি তো ম্যাচের ফলাফল কী হবে, এটা ভেবে কুপারকে ফেরাইনি। ওর জায়গায় আরো বড় ব্যাটসম্যান থাকলেও আমি একই কাজ করতাম। ক্রিকেট অবশ্যই আমি জয়ের জন্য খেলি। কিন্তু খেলায় জেতা বা হারা আমার কাছে শেষ কথা নয়। এর চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, খেলাটা সততার সাথে খেলা।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তামিমকে অনেকেই মনে করেন আক্রমণাত্মক একজন ক্রিকেটার হিসেবে। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, শরীরী ভাষাতেও তামিম ইকবাল বেশ মারমুখী বলে পরিচিত অনেকের কাছে। তবে তামিম নিজে এমনটা মানতে চাইলেন না। ক্রিকেটকে একটি ভদ্রলোকের খেলা হিসেবেই বিবেচিত করতে চান তিনি বলে জানালেন। তামিমের ভাষ্যমতে,
'আমি একটা ব্যাপার বুঝি, ক্রিকেট ইস আ জেন্টলম্যানস গেম। আমি এই খেলাটা একজন ভদ্রলোক হিসেবেই খেলে যেতে চাই। তাতে যাই হোক না কেনো। আমি নিজের কাছে অসৎ হতে চাই না। লোকে অবশ্য আমার সম্পর্কে অন্যরকম মনে করে...'
নিজের সম্পর্কে মানুষের ধারণা কিরূপ সেটি নিয়ে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তামিম। মূলত খেলায় প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়ার মানসিকতাই অনেকের কাছে নিজেকে নেতিবাচক হিসেবে প্রমাণিত করেছে বলে ধারণা তামিমের। বললেন,
'আমি মাঠে তো অ্যাগ্রেসিভ ক্রিকেট খেলি। খেলায় কাউকে এক বিন্দু ছাড় দেই না। এটাও আমি মনে করি স্পোর্টসম্যানশিপের অংশ। এটা দেখে আবার অনেকে ধারণা করে, আমি বোধহয় জয়ের জন্য অসৎ হতেও পারি। এই ধারণাটা ভুল। আমি অবশ্যই জয়ের জন্য সবকিছু করবো। কিন্তু ক্রিকেটের সাথে, নিজের সাথে অসততা করবো না।'