ফিজ ম্যাজিকের পরও পরাজয়ের বৃত্তে মুম্বাই

ছবি:

আইপিএলের এবারের আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। টানা দুই ম্যাচে ১ উইকেটের পরাজয় মেনে নেয়া পারতপক্ষে কষ্ট সাধ্যই বৈকি। চেন্নাই এবং হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে সেই পরিণতিই বরণ করে নিতে হয়েছে মুস্তাফিজ-রোহিতদের দলটিকে।
টুর্নামেন্টের তৃতীয় ম্যাচে তাই আজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলো মুম্বাই। কিন্তু ভাগ্যদেবী এবারও মুখ তুলে চাইলো না তদের দিকে। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত হতে হয়েছে মুস্তাফিজদের দলকে।
আর মুম্বাইকে হারিয়ে এবারের আইপিএলে নিজেদের প্রথম জয় পাওয়ার আনন্দে ভেসেছে দিল্লি। তবে মুম্বাই হারলেও আজ বল হাতে খুব একটা খারাপ করেননি টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগের ম্যাচে সাকিব আল হাসানদের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিজের দখলে নিয়েছিলেন ফিজ।
গত ম্যাচের ধারাবাহিকতা আজও বজায় রেখেছিলেন টাইগারদের কাটার মাস্টার। ১টি উইকেট শিকার করলেও ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৫ রান দিয়েছেন তিনি। টি টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিচারে যা যথেষ্ট মিতব্যয়ী বলা চলে। যদিও তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের কাতারেই নাম লেখাতে হলো মুম্বাইকে।
এদিন ম্যাচের শেষ ওভার মুম্বাইয়ের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্যে পৌঁছুতে দিল্লির প্রয়োজন ছিলো ১১ রানের। ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট মুস্তাফিজের হাতেই সেই ওভারটি করার জন্য বল তুলে দেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত। কিন্তু ওভারের প্রথম বলেই ৪ হাঁকান ইংলিশ ব্যাটসম্যান জ্যাসন রয়।
এরপর দ্বিতীয় বলটি লং অনের ওপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। ফলে জয়ের জন্য প্রয়োজন থাকে ৪ বলে ১ রান। পরবর্তী ৩ বল ডট দিয়ে সেসময় রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেন ফিজ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ষষ্ঠ বলে একটি রান নিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন জ্যাসন রয়। আর পরাজয়ের গ্লানিতে আবারো পুড়তে হলো রোহিতের মুম্বাইকে।
এর আগে এই ম্যাচের শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নামতে হয়েছিলো রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে। ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় ওপেনার সুরিয়াকুমার যাদব এবং ক্যারিবিয়ান এভিন লুইসের ব্যাটিং তান্ডবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯৪ রানের পাহাড় দাঁড়া করায় মুম্বাই। লুইস ২৮ বলে ৪৮ রান করে আউট হলেও হাফসেঞ্চুরি তুলে নিতে সক্ষম হন সুরিয়াকুমার।

মাত্র ৩২ বলে ৫৩ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। অবশ্য লুইস এবং যাদব ছাড়াও ঝড় তোলার দিক থেকে কম যাননি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইশান কিশানও। মাত্র ২৩ বলে ৪৪ রানের দারুণ আরেকটি ক্যামিও উপহার দিয়েছেন তিনি। দিল্লির পক্ষে মোটামুটি সব বোলারই কম বেশি রান দিয়েছেন।
২টি করে উইকেট শিকার করেছেন কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট, অজি ড্যান ক্রিস্টিয়ান এবং ভারতের রাহুল তেওয়াতিয়া। ১৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন দিল্লির ইংলিশ রিক্রুট জ্যাসন রয় এবং অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর।
এই দুই ব্যাটসম্যান উদ্বোধনী জুটি গড়েন ৫০ রানের। তবে এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলে গম্ভীরকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু আনেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজ। দুর্দান্ত একটি লেন্থ ডেলিভারি দিয়ে দিল্লির অধিনায়ককে পরাস্ত করেন ফিজ। ব্যাকফুটে থেকে মুস্তাফিজের বলটি পুল করতে চেয়েছিলেন গম্ভীর।
কিন্তু ১৩৫ কিলোমিটার ঊর্ধ্ব গতির বলটি ব্যাটে ঠিকভাবে না লাগাতে পারায় মিডউইকেটে রোহিত শর্মার তালুবন্দি হন তিনি। অধিনায়ক আউট হলেও রয় এবং নতুন ক্রিজে নামা উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান রিশাভ পান্টের ব্যাটে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলো দিল্লি। ৬৯ রানের জুটি গড়ে মুম্বাইকে ভালোই ভগাচ্ছিলেনেই দুইজন।
অবশেষে দলীয় ১১৯ রানের মাথায় ৪৭ রান করা পান্টকে ফিরিয়ে দিয়ে এই জুটি ভাঙ্গতে সক্ষম হন ক্রুনাল পান্ডিয়া। অফ ষ্ট্যাম্পের বাইরে একটি স্লোয়ার ডেলিভারি দিয়ে পান্টকে বোকা বানান ক্রুনাল। লং অফ দিয়ে বলটি তুলে মারতে গিয়ে কাইরন পোলার্ডের হাতে ধরা পরেন তিনি।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অজি তারকা ব্যাটসম্যান গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলও। মাত্র ১৩ রান করে ক্রুনালের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকেও। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হার্দিক পান্ডিয়ার তালুবন্দি হয়ে আউট হয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। এবারও সেই স্লোয়ার ডেলিভারিতে অজি তারকাকে পরাস্ত করেছেন ক্রুনাল।
ম্যাক্সওয়েল ফেরার পর শেষ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭ উইকেটের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। রয় ৫৩ বলে ৯১ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। এই ইনিংসটি খেলতে তিনি হাঁকিয়েছেন ৬টি চার এবং ৬টি ছয়। রয়ের সাথে ২০ বলে ২৭ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন স্রেয়াশ আইয়ার।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স একাদশ-
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), এভিন লুইস, ইশান কিশান (উইকেট রক্ষক), সুরিয়াকুমার যাদব, ক্রুনাল পান্ডিয়া, কাইরন পোলার্ড, হার্দিক পান্ডিয়া, মায়াঙ্ক মারকান্দে, জাসপ্রিত বুমরাহ, আকিলা ধনঞ্জয়া, মুস্তাফিজুর রহমান।
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস একাদশ-
গৌতম গম্ভীর (অধিনায়ক), জ্যাসন রয়, রিশাভ পান্ট (উইকেট রক্ষক), শ্রেয়াশ আইয়ার, গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল, বিজয় শঙ্কর, ড্যান ক্রিস্টিয়ান, রাহুল তেওয়াতিয়া, শাহবাজ নাদিম, মোহাম্মদ শামি, ট্রেন্ট বোল্ট।