৪ ম্যাচে গড় ১১১.৬০!

ছবি:

২০০৭ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা তুষার ইমরানের বর্তমান বয়স ৩৪ বছর। কিন্তু এই বয়সে এসেও যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারের থেকে ঢের বেশি ভালো খেলে যাচ্ছেন তিনি। জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের জানান প্রতিনিয়তই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
চলমান বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) আসরে বলতে গেলে ফর্ম যেন উপচে পড়ছে তুষারের। এখন পর্যন্ত বিসিএলে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলেছেন তুষার। যেখানে ৬ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৪টিতেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। আর তাঁর গড় রীতিমত বিস্ময়কর। ১১১.৬০!
সর্বশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন শুক্রবার সিলেট পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে। এর আগে ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও তুলে নিয়েছিলেন আরেকটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। এরই সাথে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩তম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড গড়লেন তুষার।
শুধু তাই নয়, তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরির রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তবে তুষারের শুক্রবারের সেঞ্চুরিটির মহিমা অন্য জায়গায়। ১০৩ রানের ইনিংসটি খেলার আগেই যে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়েছিলেন তুষার! কিন্তু সেই ইনজুরি নিয়েও দাঁতে দাঁত চিপে ব্যাটিং করে গেছেন সেঞ্চুরির লক্ষ্যেই।

দিন শেষে নিজের এই কীর্তি প্রসঙ্গে তুষার কথা বলেছেন দৈনিক প্রথম আলোর সাথে। জানিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য ছিলো অন্তত ২ ঘন্টা ক্রিজে ব্যাটিং করা। আর তেমনটা করতে পারলেই সেঞ্চুরি অসম্ভব নয়। তুষার বলেছেন,
‘শত কষ্ট হলেও যদি দুই ঘণ্টা ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে সেঞ্চুরি করতে পারব, সেভাবেই খেলেছি। চোটের কারণে তিন রানের জায়গায় দুই নিয়েছি, দুইয়ের জায়গায় এক। সেঞ্চুরি করলে ভালো লাগে। তবে জানতাম না, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করেছি।’
এই বয়সে এসেও এমন চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সের রহস্য সম্পর্কেও মুখ খুলেছেন তুষার। এক্ষেত্রে নিজের আদর্শ হিসেবে লঙ্কান লিজেন্ড কুমার সাঙ্গাকারা, পাকিস্তানের মিসবাহ-উল হক এবং ইউনুস খানের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তুষার বললেন,
‘উপমহাদেশে অনেক ব্যাটসম্যান আছেন যেমন: মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, মিসবাহ-উল-হক, ইউনিস খান—তাঁদের দেখে অনেক কিছু শিখেছি। প্রায় প্রত্যেকেই ৪০ পেরোনোর পরও খেলেছেন। আমি এখনো অন্তত তিন বছর চালিয়ে যেতে চাই। ৪০ পেরোনোর পর সিদ্ধান্ত নেব কী করব।'
শুধু তাই নয়, ফিটনেস নিয়েও খুব একটা চিন্তা নেই তুষারের। তাঁর মতে ফিটনেস ভালো থাকলে যেকোনো বয়সেই রান করা সম্ভব। রান করার ক্ষেত্রে বয়সকে ফ্যাক্টর হিসেবে মানতে নারাজ দক্ষিণাঞ্চলের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তাঁর ভাষ্যমতে,
'ফিটনেস হচ্ছে ২২ গজের ভেতরের ব্যাপার। আপনি যদি রান করেন, ফিটনেসের বিষয়টা এমনিই চলে আসে। আর যদি রান না করেন, পেছন থেকে কথা হবে, নিজের কাছেও খারাপ লাগবে। রান করলে বয়স কোনো ব্যাপার না। রান যেকোনো বয়সে করা যায়। ৩০-এর পরে ব্যাটসম্যানদের অভিজ্ঞতা বাড়ে।'
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে যাওয়ার পরও জাতীয় দলের দুয়ার এখনও বন্ধ রয়েছে তুষার ইমরানের। তবে দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন এখনও ঠিকই ভেতরে লালন করেন তিনি। বলছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে গত দুই বছর যেভাবে রান করছি, একটা সুযোগ নির্বাচকেরা দিতে পারেন। আমি চেষ্টা করছি। রান করলে কারও সহানুভূতি লাগবে না। রান করতে থাকলে একটা সুযোগ দিতে পারেন নির্বাচকেরা।’