এক ম্যাচে গাজি গ্রুপের তিন নায়ক

ছবি:

আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ টায় সাভারের বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে অলোক কাপালির ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ইমরুল কায়েসের গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক এবং ভারতীয় ব্যাটসম্যান গুরকিরাত সিংয়ের হাফ সেঞ্চুরিতেই মূলত ৫ বল হাতে রেখে রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে গাজি গ্রুপ।
এদিন শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান দেবব্রত দাসের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭৩ রান সংগ্রহ করেছিলো ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ১১২ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলে এই স্কোর গড়ার পেছনে সবথেকে বেশি অবদান রেখেছেন দেবব্রত।
অপরদিকে মাত্র ৩৬ বলে ৫৪ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি। আর এরই সুবাদে চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড়া করায় কাপালি বাহিনী। ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৩ রানে ওপেনার মেহেদি হাসানকে ফিরিয়ে দিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন খালেদ আহমেদ।
তবে এরপর ইমরুল কায়েস এবং মমিনুল হকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় গাজি গ্রুপ। রীতিমত টি টোয়েন্টি মেজাজে খেলে অর্ধশতক তুলে নেন ইমরুল। পাশাপাশি মমিনুলের সাথে ১১১ রানের জুটি গড়েন তিনি।
শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙ্গতে সক্ষম হন ব্রাদার্স ইউনিয়নের ইফতেখার সাজ্জাদ। ৫৬ বলে ৪টি ছয় এবং ৬টি চারের সাহায্যে ৬৫ রান করা ইমরুলকে ইয়াসির আলির হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠিয়েছেন তিনি।
ইমরুল ফিরে গেলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মমিনুল হকও। তবে এরপর বেশীক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। ৪৯ বলে ২ ছয় এবং ৫ চারের সাহায্যে ৫৭ রান করে অলোক কাপালির বলে হিট উইকেটের শিকার হন এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
মমিনুল ফিরে গেলে ৫ রানের ব্যবধানে নুরুজ্জামানের উইকেটটিও হারিয়ে বসে গাজি গ্রুপ। তবে এরপর ভারতীয় ব্যাটসম্যান গুরকিরাত সিং এবং জাকের আলি অনিকের ৫৩ রানের জুটিতে বিপদ কাটিয়ে উঠতে থাকে গাজি গ্রুপ। তবে দলীয় ১৯৭ রানে জাকের আলি আউট হয়ে গেলে আবারো বিপদে পড়ে দলটি।
এরপর দ্রুতই নাদিফ চৌধুরী, রাজিবুল ইসলাম এবং আবু হায়দার রনির উইকেট তিনটি হারিয়ে পরাজয়ের আশঙ্কায় পড়ে ইমরুল কায়েসের গাজি গ্রুপ। কিন্তু দলের শেষ ভরসা হিসেবে তখনও ক্রিজে ছিলেন গুরকিরাত সিং। তাঁর অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংসে ভর করেই শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে গাজিরা।

শেষের দিকে ১১ রান নিয়ে তাঁকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছিলেন নাইম হাসান।
ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে ২ টি করে উইকেট শিকার করেছেন খালেদ আহমেদ, মেহেদি হাসান রানা এবং নিহাদুজ্জামান। এছাড়াও ১টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন ইফতেখার সাজ্জাদ এবং অলোক কাপালি।
ব্রাদার্স ইউনিয়নের ইনিংসঃ-
এর আগে দিনের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপদের মুখে পড়েছিলো ব্রাদার্স ইউনিয়ন। রুহেল আহমেদের বলে মাত্র ১ রান করে ওপেনার মিজানুর রহমান যখন ফিরে যান সেসময় দলীয় স্কোর ছিলো মাত্র ৬। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওয়ান ডাউনে খেলতে নামা মাইশুকুর রহমানও। ৮ রান করে নাইম হাসানকে উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি।
তবে সেই পরিস্থিতিতি থেকে দলকে তুলে আনার দায়িত্ব নেন ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকি এবং ব্রাদার্সের ভারতীয় রিক্রুট দেবব্রত দাস। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলীয় ৮১ রানের মাথায় হাফসেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্ত থেকে জুনায়েদ ফিরে গেলে আবারো বিপদে পড়ে ব্রাদার্স।
একসময় জাতীয় দলের হয়ে খেলা জুনায়েদ নাইম হাসানের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ৪৩ রান করেছেন। অবশ্য জুনায়েদ ফিরে গেলেও ক্রিজে আশার প্রতীক হয়ে ছিলেন দেবব্রত। অধিনায়ক অলোক কাপালিকে সাথে নিয়ে তিনি ৭৮ রানের বড় একটি জুটি গড়েন।
আর এই জুটি গড়ার মধ্য দিয়ে নিজের হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক কাপালিও হাফসেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৫৯ রানের মাথায় ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। সেসময় তাঁর সংগ্রহ ছিলো ৪১ রান।
কাপালি ফিরে যাওয়ার পর নিজের ইনিংস লম্বা করতে থাকেন দেবব্রত। তুলে নেন টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও। আর তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ইয়াসির আলি। ৫৪ রান করে আউট হওয়ার আগে দলকে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন তিনি। আর এই দুই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই গাজি গ্রুপের সামনে বড় লক্ষ্য দাঁড়া করায় কাপালি বাহিনী।
গাজি গ্রুপের পক্ষে রুহেল আহমেদ এবং নাইম হাসান ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন। আর ১টি উইকেট পেয়েছেন আবু হায়দার রনি।
গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্স দল-
মেহেদি হাসান, ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), মমিনুল হক, নুরুজ্জামান, গুরকিরাত সিং, জাকের আলি অনিক, নাদিফ চৌধুরী, আবু হায়দার রনি, নাইম হাসান, রুহেল আহমেদ, রাজিবুল ইসলাম।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন দল-
মিজানুর রহমান, জুনায়েদ সিদ্দিকি, মাইশুকুর রহমান, দেবব্রত দাস, অলোক কাপালি (অধিনায়ক), ইয়াসির আলি, সোহরাওয়ার্দি শুভ, ইফতেখার সাজ্জাদ, নিহাদুজ্জামান, মেহেদি হাসান রানা, খালেদ আহমেদ।