মিরাজ ও সানজামুলের ঘূর্ণিতে জয়রথ থামলো কাপালিদের

ছবি:

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ১৫ তম ম্যাচে আজ অলোক কাপালির ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১৩৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে নাসির হোসেনের আবাহনী লিমিটেড। আর এরই সাথে টানা দুই ম্যাচে জয়ের পর পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো কাপালি বাহিনীরা। এর আগে নিজেদের গত দুই ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলো কাপালির ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
এদিন ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে আবাহনীকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রাদার্সের দলপতি অলোক কাপালি। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক সাইফ হাসানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ২৬৬ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় আবাহনী। সাইফ ছাড়াও আরেক ওপেনার আনামুল হক বিজয় ৪১, নাজমুল হাসান শান্ত ৩৮ এবং অধিনায়ক নাসির হোসেন ৩১ রান করেন।
আবাহনীর ছুঁড়ে দেয়া ২৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সানজামুল ইসলামের ঘূর্ণিতে মাত্র ১৩০ রানে অলআউট হয়ে গেছে কাপালির ব্রাদার্স। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা এদিন ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার মিজানুর রহমান এবং জুনায়েদ সিদ্দিকি। ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন তাঁরা।
তবে ২৪ রান করা জুনায়েদকে বোল্ড করে এই জুটি ভেঙ্গে দেন আবাহনীর স্পিনার সানজামুল ইসলাম। এরপর মাত্র ৯ রানের ব্যবধানে মিজানুরকেও ফেরান সানজামুল। এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে তাঁকে আউট করেন এই স্পিনার। মিজানুর আউট হয়ে গেলে দ্রুতই জন সিম্পসন এবং মাইশুকুর রহমানের উইকেট দুটি খুইয়ে বসে ব্রাদার্স।
মাইশুকুর সানজামুলের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন। অপরদিকে সিম্পসনকে ফিরতে হয়েছে নাসির হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে। মাত্র ৬৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা ব্রাদার্সের ত্রাণকর্তা হিসেবে ক্রিজে ব্যাটিং করতে নামেন প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৭৯ রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক অলোক কাপালি।
কিন্তু এই ম্যাচে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ৬ রান করে সাকলাইন সজীবের বলে উইকেটরক্ষক আনামুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন কাপালি। আর অধিনায়ককে হারানোর মাত্র ৮ রানের মাথায় রান আউটের শিকার হয়ে ফিরতে হয়েছে নতুন ক্রিজে আসা ব্যাটসম্যান সোহরাওয়ার্দি শুভকে (৫)।
টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান রানাও। ব্রাদার্সের এই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন জাতীয় দলের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে। রানার বিদায়ের পর অবশ্য ব্যাট হাতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন আগের ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানো ইয়াসির আলি।

৩৫ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিতও থাকনে তিনি। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেননি অন্য কোনো ব্যাটসম্যানই। শেষের দিকে শুধু ওয়াহিদুল আলম ১৫ রান করতে সক্ষম হন। দলীয় ১১২ রানে ওয়াহিদুলকে ফিরিয়ে দিয়ে ব্রাদার্সের পরাজয় আরো ত্বরান্বিত করেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ৮৬ বল হাতে রেখেই মাত্র ১৩০ রানে গুঁটিয়ে গেছে ব্রাদার্স।
আবাহনীর পক্ষে সবথেকে সফল বোলার ছিলেন জাতীয় দলের দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সানজামুল ইসলাম। মিরাজ মাত্র ৬ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন। অপরদিকে ১০ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন সানজামুল। এছাড়াও ৪.৪ ওভারে ৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন সাকলাইন সজীব।
আবাহনীর ইনিংস-
এর আগে সকালে ব্রাদার্সের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার আনামুল হক বিজয় এবং সাইফ হাসানের ব্যাটে শুভ সূচনা পেয়েছিলো আবাহনী নাসিরের দল। এই দুই ব্যাটসম্যান জুটি গড়েছিলেন ৮৪ রানের। কিন্তু ৪১ রান করা বিজয়কে নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন ব্রাদার্সের অধিনায়ক কাপালি।
এরপর নাজমুল হাসান শান্তকে সাথে নিয়ে ৯৩ রানের আরেকটি বাম্পার জুটি গড়েন সাইফ। তবে দলীয় ১৭৭ রানে দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউটের শিকার হয়ে ফিরতে হয়েছে শান্তকে। তবে শান্ত ফিরলেও দারুণ ব্যাট করে চলমান ডিপিএলে নিজের প্রথম শতক ঠিকই তুলে নেন সাইফ হাসান।
যদিও সেঞ্চুরির পর আর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ১০৮ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন যুব দলের অধিনায়ক। সাইফ আউট হলে তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান।
শেষ পর্যন্ত ব্রাদার্সের বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে ২৬৬ রানে অলআউট হয়ে যায় আবাহনী। যদিও পুরো ওভার খেলতে পেরেছে তারা। আবাহনীর পক্ষে অধিনায়ক নাসির হোসেন ৩১ এবং শেষের দিকে মাশরাফি বিন মর্তুজা খেলেছেন ১৬ রানের ইনিংস।
আর ব্রাদার্সের দুই বোলার খালেদ আহমেদ এবং রনি হোসেন উভয়ই ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়াও ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সোহরাওয়ার্দি শুভ এবং অধিনায়ক অলোক কাপালি।
আবাহনী লিমিটেড একাদশ-
আনামুল হক বিজয়, সাইফ হাসান, নাজমুল হাসান শান্ত, নাসির হোসেন (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিথুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সানজামুল ইসলাম, সাকলাইন সজীব, তাসকিন আহমেদ।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন একাদশ-
মিজানুর রহমান, জুনায়েদ সিদ্দিকি, মাইশুকুর রহমান, অলোক কাপালি (অধিনায়ক), জন সিম্পসন, ইয়াসির আলি, সোহরাওয়ার্দি শুভ, মেহেদি হাসান রানা, ওয়াহিদুল আলম, খালেদ আহমেদ , ইফতেখার সাজ্জাদ।