'ক্রিকেটার পরিচয় দেয়ার পরও আমাকে মাঠে ঢুকতে দেয়নি'

ছবি:

সম্প্রতি শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) রাজশাহী কিংসের জার্সিতে খেলেই সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তরুন পেসার হোসেন আলী। ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে সক্ষম এই পেসার কিংসদের জার্সিতে খেলেছেন মাত্র ৪টি ম্যাচ।
প্রতি ম্যাচে বোলিং গতির কারণে আলোচনায় এসেছেন। তবে এই তরুনের ক্রিকেটে উঠে আসার গল্পটা বাকিসব ক্রিকেটারদের থেকে একটু আলাদা। নরসিংদী শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামের হোসেন আলী ক্রিকেট খেলার কোন অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাই পায় নি। ছোট বেলা থেকেই পাড়ার ক্রিকেটে খেলে বড় হয়েছেন।
শুরুর দিকে বোলিংয়ের চেয়ে প্রাধান্য দিতেন ব্যাটিংকে। তার ব্যাটিং দেখেই গ্রামের অনেকে তাকে উপদেশ দিয়েছিলো ক্রিকেটে একাডেমি ভর্তি হতে। পরবর্তীতে বাসার অনুমতি নিয়ে ক্রিকেট কোচিংয়ে ভর্তি হন।
ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়মিত খেলার পর একদিন ম্যাচ চলাকালীন সময় দলের একজন বোলার কম ছিল। সেদিন কোচের কথায় বোলিংয়ে এসে কোচকে মুগ্ধ করেন তিনি। এরপরই কোচের উপদেশে বোলিং শুরু করেন তিনি।
সেখান থেকেই যাত্রা শুরু 'বোলার' হোসেন আলীর। বোলার হিসেবে খেললেও ব্যাটিং করতেন মাঝে মাঝে। পাড়ার ক্রিকেটে বেশ পরিচিত পেলেও বড় সুযোগ আসে বিকেএসপির আঞ্চলিক ক্রিকেটার অন্বেষণ কর্মসূচিতে। সেখানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এই পেসার।

এরপর চট্টগ্রাম বিকেএসপিতে ২ মাস ট্রেনিংয়েও নিজের জাত চেনান তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিকেএসপিতে ভর্তি হন নি তরুন হোসেন আলী। তবে ক্রিকেট যাত্রা থেমে যায় নি তার। লড়াই করে চালিয়ে গিয়েছেন ক্রিকেটে। হোসেনের পথযাত্রায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন করেছেন কোচ আমির বাবু।
তার উপদেশ মত চলেছেন বলেই এতোদূর আসতে পেরেছেন তিনি। মূলত কোচ আমির বাবুর সুপারিশেই ছোট শহরের ক্রিকেটের গন্ডী পার করে ঢাকার ক্রিকেটের স্বাদ পান তিনি। মানবজমিনের সাথে আলাপকালে এসবই জানান ১৯ বছর বয়সী এই পেসার। সেখানে তিনি জানিয়েছেন,
'আমি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছিলাম, একটি ম্যাচে কোচ আমির বাবু স্যার আমার বোলিং দেখে দারুণ প্রশংসা করে। তখন তিনি আমাকে ঢাকা নিয়ে এসে খেলানোর কথা বলেন। এরপর আমি স্যারের পেছনে লেগে থাকি। স্যারকে বিরক্ত করতে থাকি। স্যারও বলতেন যে সুযোগ হবে। একদিন স্যার আমাকে বলেন যে, নেট বোলার হিসেবে আমাকে সুযোগ করে দিবেন।
তিনি আমার কথা নান্নু স্যার (মিনহাজুল আবেদিন) ও বাশার (হাবিবুল বাশার সুমন) স্যারকে বলেছেন। আমি বাশার স্যারকে কল করি। তিনি আমাকে মিরপুরে আসতে বলেন। আমি এতটাই উত্তেজিত ছিলাম যে ২ ঘণ্টা আগে চলে আসি। তখন ২০১৬ সাল মাত্র শুরু। মিরপুর মাঠের গেটে এসে ভেবেছিলাম ক্রিকেটার বললে ঢুকতে দিবে। কিন্তু দিলো না, তখন বাশার স্যার এসে আমাকে নিয়ে যান।'
তবে হোসেন আলী কখনও ভাবেননি এতো তাড়াতাড়ি এতো বড় পরিসরে জায়গা পাবেন তিনি। কখনো ভাবেবনি এত দ্রুত জাতীয় দলের নেটে রুবেল, তাসকিনদের মত জাতীয় তারকাদের পাশাপাশি বল করবেন।
'আমি মাঠে এসে বসি। নেটে বল করার কথা। কিন্তু সব ব্যাটসম্যান অনুশীলন করে চলে যায়। তখন ভেবেছিলাম হয়তো বল করাবে না। কিন্তু আমাকে বল করার সুযোগ দেয় যখন বোলাররা ব্যাটিং অনুশীলন করতে আসে। আমি ৮ বল করেছি। প্রথম বল করতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে ঠিক ভাবেই করেছি। একটি বলের গতি এত বেশি ছিল যে রনির (আবু হায়দার) ব্যাটের নিচের অংশ ভেঙে যায়।
সেদিনই আমাকে জানিয়ে দেয়া হয় পর দিন যেন সকালে চলে আসি। আমি তারপর দিনও এক ঘণ্টা আগে চলে আসি। এসে দেখি বোর্ডে রুবেল ভাই, তাসকিন ভাইদের নামের নিচে ‘এইচ আলী লেখা’। আমি ভেবে ছিলাম এটা অন্য কারো নাম। তাই দূরে গিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ আমাকে ডেকে নেয়া হয়। তখন বুঝি যে সেটা আমার নাম। এরপর অনেক সুযোগ পেয়েছি। এনসিএল খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলেছি। এবার প্রথম বিপিএলে খেললাম।'
জাতীয় দলের নেটে আগুন ঝরা বোলিং করা হোসেন আলি পেছনে ফিরে তাকান নি। এক বছরের মাথায় খেলেছেন লিস্ট 'এ' ক্রিকেট। সুযোগ পেয়েছেন লিগ টাইটেল জেতা দল গাজি গ্রুপে। খেলেছেন নাসির, মমিনুলদের মত তারকাদের সাথে। চিটাগং ডিভিশনের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও ভালো নাম কুড়িয়েছেন হোসেন আলী।