promotional_ad

শিক্ষা সফর— সফর আছে শিক্ষা নেই

আরও একটা আইসিসির টুর্নামেন্টে ব্যর্থ বাংলাদেশ
সময়টা ২০০৫ সালের ডিসেম্বর— আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি। বয়স কতই বা হবে, ছয় কিংবা সাত। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে প্রতি বছরের মতো সবাইকে নিয়ে শিক্ষকরা পিকনিকে যাবেন। তবে দূরের পথ হওয়ায় ক্লাস টুতে পড়া ছোট বাচ্চাদের রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যেতে পারব না ভেবে মন খারাপ করলাম। ওরকম বয়সে পিকনিকে যাওয়া মানেই নতুন জায়গা দেখা, পড়ার বাইরে সুন্দর একটা দিন কাটানো।

promotional_ad

তখন কী আর পিকনিক, বনভোজন কিংবা শিক্ষা সফরের মানে বুঝতাম। বয়স যখন একটু আধটু বাড়তে থাকল তখন আমারও শিক্ষা সফরের শিক্ষা বাড়ল। বুঝতে শুরু করলাম শিক্ষা সফর কিংবা বনভোজন মানে নতুন কোথাও শুধুমাত্র ঘুরে বেড়ানো নয়। এমনকি একবেলা পেট ভরে খাওয়াও নয়। নতুন জায়গা ঘুরে শিক্ষা কতটা নিতে পেরেছি সেটা বলা একটু কঠিনই বটে। পড়ার জীবন শেষ করে গাধার খাটুনি মানে চাকরি শুরু করার পর শিক্ষা আবার কী সফর করতেই যেন ভুলে গেছি।


আরো পড়ুন

ডিপিএল শুরুর আগে তামিমের চাওয়া, ক্রিকেটাররা যেন পারিশ্রমিক পায়

১৫ মিনিট আগে
ডিপিএল শুরুর আগে ফটোসেশনে অধিনায়করা, ক্রিকফ্রেঞ্জি

আমার যখন এমন দশা তখন ওয়াসিম আকরাম বনভোজনে পাঠালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। একটু চমকে উঠেছেন নিশ্চই? চমকে ওঠারই তো কথা। মাহমুদউল্লাহ এ বয়সে বনভোজনে যাবেন আর সেটা ওয়াসিম আকরাম পাঠাবেন এসব হয় নাকি? ওয়াসিম আকরাম যা বলেছেন আদৌতে তা হচ্ছে, ‘মাহমুদউল্লাকে দেখে মনে হচ্ছে, এখানে (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) বনভোজনে এসেছে। ব্যাটিং-বোলিং কিছুই হচ্ছে না।’


এমনটা শুনে আমি ভাবলাম ভদ্রলোক ওয়াসিম আকরাম বললেন কী। এ বয়সে কেউ বনভোজনে যায় নাকি। পরোক্ষণে মাথায় এলো ছোটবেলায় আমাদের সঙ্গে শিক্ষকরাও তো যেতেন। তাহলে মাহমুদউল্লাহর যেতে সমস্যা কোথায়। আসলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো আর বনভোজন নয় কিংবা ছোটবেলার সেই শিক্ষা সফরও নয়। তবে আমাদের ক্রিকেটারদের জন্য সেটাকে আপনি আদৌতে শিক্ষা সফরই বলতে পারেন।


আমাদের দেশে অবশ্য লম্বা সময় ধরে আইসিসির টুর্নামেন্টকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য শিক্ষা সফর হিসেবেই দেখে আসছেন। ক্রিকেটাররাও যে দেখছেন না সেটাও তো বোধহয় বলা যাবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পুরোটা জুড়ে বাংলাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা। পাশাপাশি ডট খেলার প্রবণতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বেশ।


চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অবশ্য এই তালিকায় ছিলেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সেখানে অবশ্য তাদের দায় না দিয়ে উইকেটে এসেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার তাড়নায় খেলতে নামাদেরই দায় বেশি। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় ৮ দলের টুর্নামেন্টে এগোনোর পথ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল কেবলই নিয়ম রক্ষার। বৃষ্টির কারণে অবশ্য সেটিও মাঠে গড়ায়নি। নয়ত ওই একটা পয়েন্টও কপালে জুটতো কিনা সন্দেহ।


ম্যাচ না হলেও দেশে ফেরার আগে ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ভারতের বিপক্ষে ১৫৯  এবং নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ১৮১ ডট বল খেলা বাংলাদেশের অধিনায়ককে কথা বলতে হলো সেটি নিয়েই। শান্ত যে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি সেটা তো অনুমান করাই যায়। যদিও কথা দিয়ে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় শেখার তাগিদটা দিয়ে রাখলেন দারুণভাবে।



promotional_ad

শান্ত বললেন, ‘অবশ্যই (স্ট্রাইক রোটেশন চিন্তার কারণ)… নেটে আমাদের ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। কীভাবে প্রান্ত বদলাতে পারি, ম্যাচে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা কীভাবে অনুশীলন করছি এবং ম্যাচে সেটা কতটা কাজে লাগাচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ছেলেরা বুঝতে পারবে, কী করা উচিত।’


আরো পড়ুন

ভারতের কারণে সেমি ফাইনালের আগে বিড়ম্বনায় অস্ট্রেলিয়া-সাউথ আফ্রিকা

৩ ঘন্টা আগে
সাউথ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া দল, আইসিসি

অর্থাৎ আরও একবার শিক্ষার পুরনো কথাই বলে গেলেন শান্ত। বাঁহাতি ব্যাটারেরই দায়টা বা কোথায়। বাংলাদেশের অধিনায়ক হতে হলে আপনাকে তো এমন কথা শিখতেই হবে। ‘আমরা এখনো শিখছি’, ‘আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই’ বা ‘শেখার আছে অনেক কিছু’ এসব তো আমাদের অধিনায়কদের মুখের বুলি। শান্ত না বলেই কোথায় আর যাবেন। উনি তো অধিনায়ক, বাংলাদেশের।


মাহমুদউল্লাহর কথা বলছিলাম, সেটা বেমালুম ভুলেই গেছি। বয়সটা ৩৯— চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে গেলেন, ভদ্রলোক ওয়াসিম আকরামের ভাষায় অবশ্য বনভোজনে। আইসিসির টুর্নামেন্টকে যদি আমরা শিক্ষা সফর হিসেবে ধরে নিই তাহলে আগেরগুলো থেকে তার খানিকটা শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা যে গ্রহণ করতে পারেননি সেটা তো নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই অনুমান করা গেল। এক যুগের বেশি সময় ক্রিকেট খেলার পরও ওমন সময়ে এমন শট! অবাক হয়েছিলেন না?


মুশফিকুর রহিম তখন কেবলই ফিরেছেন। জুটি গড়তে কিংবা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শান্তকে সঙ্গ দেয়ার বিকল্প ছিল না মাহমুদউল্লাহর সামনে। অথচ মাইকেল ব্রেসওয়েলকে আমাদের পাড়ার বোলার ভেবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে রাওয়ালপিন্ডি পার করতে চাইলেন। যা হবার তাই হলো, উইলিয়াম ও’রুর্কির হাতে সহজ একটা ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলেন। মুশফিকের কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। সেই ম্যাচের পর একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলাম।


আগে পেছনের গল্পটা একটু সামনে আনা যাক। রিভার্স সুইপ ‍মুশফিকের খুবই পছন্দের একটা শট। ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ম্যাচে কাজে লাগিয়েছেন। তবে রিভার্স সুইপ থেকে রান বের করে যত না প্রশংসিত হয়েছন তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন অসময়ে আউট হয়ে। বারংবার একই শটে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলার পরও মুশফিক জোর দিয়েই বলেছিলেন, ‘এটা আমার খুব পছন্দের শট, একই সঙ্গে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ শটও। তবুও আমি ভবিষ্যতে এই শট খেলা থেকে বিরত থাকব না।’


রিভার্স সুইপের মতো সুইপ শটও খেলতে পছন্দ করেন মুশফিক। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাঝে যারা সবচেয়ে ভালো সুইপ খেলেন, তাদের তালিকা করলে মুশফিকের নামটা বোধহয় সবার উপরেই থাকবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই পছন্দের সুইপ শটেই অবশ্য কপাল পুড়েছে ডানহাতি ব্যাটারের। ৯৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজছিলেন শান্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুশফিকই হয়ত সেরা অপশন। অভিজ্ঞ ব্যাটারকে দেখে শান্ত তথা পুরো বাংলাদেশের মুখে হাসি ফোঁটার কথা ছিল।



অথচ মাঠের ক্রিকেটে হলো ঠিক তার উল্টোটা। ব্রেসওয়েলে টানা দুই বলে রান নিতে না পারায় অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে  ডিপ মিড উইকেটে রাচিন রবীন্দ্রকে ক্যাচ দিয়ে গেলেন। পরের ম্যাচে খেললে হয়ত একই শট থেকে রান বের করতে পারবেন মুশফিক। বলা হয়ে থাকলে মানুষ যখন কোথাও ভুল করেন সেখান থেকে শিক্ষা নেন। তবে মুশফিক বোধহয় এত বছরের ক্যারিয়ারের সেটা ভালোভাবে নিতে পারেননি। নয়ত ম্যাচের কোন পরিস্থিতি কোন শট খেলতে হবে সেটা বুঝতে কেন ভুল করলেন।


‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী’ বলে একটা কথা আছে। আমি অল্প বিদ্যার মানুষ। এসব বলতেও ভয় হয়। কখন জানি মুশফিক আয়না দেখতে বলেন আবার কখন জানি নাজমুল শান্ত বলে বসেন কোন উইকেটে কোন শট খেলতে হবে সেটা তারা ভালো জানেন। শান্ত যেহেতু ক্রিকেটার তাই কোন উইকেটে কোন শট খেলতে হবে সেটা উনারই ভালো জানার কথা। তবে জেনে শুনে, শিখেও যখন সেটাকে কাজে লাগাতে পারে না প্রশ্নটা তো উঠে তখনই।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বলেছিলেন, ‘অসম্পূর্ণ শিক্ষায় আমাদের দৃষ্টি নষ্ট করিয়া দেয়—পরের দেশের ভালোটা তো শিখিতে পারিই না, নিজের দেশের ভালোটা দেখিবার শক্তি চলিয়া যায়।’ আমাদের সবার দশাটা আসলে ঠিক এমনই। না পারছি অন্যকে দেখে শিখতে না পারছি নিজেদের ভালোটা বের করতে। আমাদের আদৌতে বছরান্তর একটা করে শিক্ষাবিহীন সফর আছে।


আর কতকাল চলিবে সেটা হয়ত আমাদের অসম্পূর্ণ ক্রিকেটীয় ব্যবস্থাই বলতে পারবে। আরও একটা ব্যর্থ ‘শিক্ষা সফর’ শেষ করে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। না না, এভাবে তো এখনই বলা যায় না। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর মতো করে বলতে হচ্ছে ‘আমার ভুল হয়েচে’। কারণ পাকিস্তান ও দুবাইয়ে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ কতটা শিখেছে সেটার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত।


আপাতত তাকিয়ে থাকুন... অপেক্ষা করুন।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball