‘জাকের জানে কখন কী করতে হবে’
ছবি: তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪১ বলে অপরাজিত ৭২ রান করে জয়ের নায়ক জাকের আলী, ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ব্যাটিং ও সিনিয়র সহকারী কোচের কথার জের ধরে পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা আবার একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। অ্যান্টিগা টেস্টে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেছিলেন জাকের। পরের ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩১ রান। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের কথা বলতে হলে জ্যামাইকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের দিকে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হক যখন ফিরলেন তখনও মাটি কামড়ে উইকেটে পড়েছিলেন জাকের।
ডানহাতি ব্যাটারের সঙ্গী তখন কেবল হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানা। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ৯.২ ওভার ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। টেইলএন্ডারদের নিয়ে যোগ করেছিলেন ৫৭ রান। শেষ ব্যাটার হিসেবে নিজে আউট হওয়ার আগে ১০৬ বলে খেলেছিলেন ৯১ রানের ইনিংস। চাইলেই সেঞ্চুরি করতে পারতেন জাকের। তবে দলের প্রয়োজনে নিজের সেঞ্চুরি বিসর্জন দিয়ে চার-ছক্কা মেরে গেছেন অবিরত। আর সেটা করতে গিয়ে আউট হতে হয়েছে তাকে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলাম ম্যাচসেরা হলেও কারও কারও মতে, সেদিনের ম্যাচসেরা ছিলেন জাকের। তাঁর ওমন ইনিংসেই জয়ের রসদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দুই ম্যাচে খুব বেশি রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেখানে দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৭ ও ২১ রান করেছিলেন। শেষ টি-টোয়েন্টিতে যা করেছেন সেটা তো অবিশ্বাস্য। ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৪১ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ১৮৯ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন।
শেষের দিকে চার-ছক্কায় ম্যাচের পুরো আলো নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। ওবেদ ম্যাককয়কে শেষ ওভারেই মেরেছিলেন ৩ ছক্কা। পুরো সফরে জাকের প্রায় প্রতি ম্যাচেই নিজের ব্যাটিং ম্যাচিউরিটি দেখিয়েছেন। সালাহউদ্দিনও তাই সেটার প্রশংসাই করলেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিভিন্ন ভূমিকায় খেলে অভ্যস্ত হওয়ায় নিজের কাজটা জাকের ভালো জানেন বলে ধারণা দেশসেরা এই কোচের।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেখুন, জাকেরকে আমি অনেকদিন ধরেই চিনি। আমার মনে হয় সে অনেক সেনসেবল, সে সেভাবেই গড়ে উঠেছে। ঢাকা লিগ বলেন, বিপিএল বলেন সে বিভিন্ন পজিশনে খেলে অভ্যস্ত এবং সে জানে কোন ভূমিকায় তাকে কিভাবে খেলতে হয়। এটা তাঁর নিজস্ব যোগ্যতায় হয়েছে, ওইভাবে চিন্তা করেই বড় হয়েছে এবং সে জানে কখন কি করতে হবে। এই ম্যাচুরিটিটা আমার মনে হয় আমাদের অন্যান্য ব্যাটারদের মাঝে আসবে। এটা যদি আরও সবার মাঝে আসে আরও ভালো দল হবো।’
২২ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন দুটিই একটু করে দেখেছেন জাকের। অভিষেকটা রঙিন হলেও পরবর্তীতে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারায় সমালোচনায় তাকে ধুয়ে দিচ্ছিলেন নেটিজেনরা। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো করায় প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তরুণ এই ব্যাটার। সালাহউদ্দিন মনে করেন, জাকের যেভাবে এখন খেলছেন সেটা ধরে রাখতে পারলে সে বহুদূর যাবে।
তিনি বলেন, ‘জাকেরের কথা পরে আমি আসলে প্রত্যেকটা ছেলেকেই ভালো অবস্থায় দেখতে চাই এবং ভবিষ্যতে যেন তারা আরও ভালো অবস্থায় যায়। এখানে পুরো দলটাই তো আমার এখানে নির্দিষ্ট কেউ নিজের খেলোয়াড় না। জাকের যেভাবে খেলতেছে, ব্যাটার হিসেবে যে ম্যাচিরিটিটা আছে পরিস্থিতি বুঝে যে ক্রিকেট খেলা বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার যে সামর্থ্যটা আছে যেটা তাকে হয়ত অনেক বহুদূর নিয়ে যেতে পারে।’