নির্বাচকরাও ফিরলেন, বিসিবির কোচরা কোথায়?

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
শ্রাবণের দুপুর হলেও রোদ বেশ চড়া। তপ্ত রোদেই ঘর্মাক্ত হয়ে মঙ্গলবার জাতীয় দলের দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার চক্কর কাটলেন গোটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। প্রথমে মূল মাঠে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচক। তারপর চলে গেলেন ইনডোরে। সৌম্য সরকার তখন ইনডোরে ব্যাটিং করছিলেন। ইনডোর থেকে দুই নির্বাচক চলে যান বিসিবি একাডেমি মাঠে।
ভর দুপুরে একাডেমি মাঠের মাঝের মূল উইকেটে বোলিং করছিলেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনার লম্বা সময় বোলিং করে কাটালেন। নির্বাচকরা যখন একাডেমি মাঠ ছাড়েন তখন সময় সোয়া ১২টা। নান্নু-হাবিবুলরা যাওয়ার পরও তাইজুলের বোলিং সেশন চলছিল। মজার বিষয় তখন এই স্পিনারের বোলিং সেশনটা পরিচালনা করছিলেন সাব্বির খান।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের কেতাদুরস্ত ম্যানেজার হিসেবেই এখন পরিচিত এই সাবেক ক্রিকেটার। খেলোয়াড়ী জীবনে জাতীয় দলে খেলেননি। তবে ৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, ৫১টি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেছিলেন সাব্বির খান। ছিলেন অফস্পিনার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১৩ উইকেট রয়েছে তার ঝুলিতে।
তাইজুলের বোলিং অ্যাকশন সম্প্রতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। অবিকল না হলেও কিছুটা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির অ্যাকশনের আদল পরিলক্ষিত হচ্ছে তার বোলিংয়ে। বাংলাদেশের বোলিং কোচ ভেট্টোরির দ্বারা প্রভাবিত হতেই পারেন তাইজুল।

উইকেটে দুটি স্টাম্প পোতা, আর গুড লেন্থ জায়গায় দুটি স্টাম্প রেখে দেয়া হয়েছে। এই দুই স্টাম্পের মাঝেই বল ফেলছেন তাইজুল। সাব্বির খান, প্রতি বলের পর কথা বলছেন তাইজুলের সঙ্গে। আবার গিয়ে ভিডিও করছেন বোলিং। আবার কখনও ব্যাটসম্যান হয়ে শ্যাডো করে দেখাচ্ছেন, এই বলটা ব্যাকফুটে গিয়ে কাট করে দিতে পারবে ব্যাটসম্যান। প্রখর রোদে তাদের এই সেশন অনেকক্ষণ চলল।
করোনাকালীন সময়ে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় বিসিবির ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশ জুড়ে অনুশীলন করছেন অনেক ক্রিকেটার। ঈদের আগে দিন দশেক অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহিম-ইমরুল কায়েসরা। ঈদের পর অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল, সৌম্যরাও। দুদিন হলো নারী ক্রিকেটাররা শামিল হয়েছেন অনুশীলনে।
বিসিবির করে দেয়া রুটিন অনুযায়ী সবাই নিজের মতো করে অনুশীলন করছেন। এতদিন এই অনুশীলনে নজর ছিল না কারোই। মঙ্গলবার নির্বাচকরা মাঠে নেমেছেন। কিন্তু ক্রিকেটারদের অনুশীলন তত্ত্বাবধানে নেই কোনো কোচ! বিসিবির কয়েকজন ট্রেনার শুধু পালাক্রমে ক্রিকেটারদের সঙ্গ দিচ্ছেন।
জাতীয় দলের বিদেশি কোচরা সবাই নিজ নিজ দেশে। তা??ের না থাকাটা প্রত্যাশিত। কিন্তু বিসিবির দেশীয় তথা স্থানীয় কোচরা কোথায়? নির্বিবাদে তারা থাকতে পারতেন ক্রিকেটারদের অনুশীলনে। যদিও তাদের দেখা নেই। বিসিবির স্থানীয়দের মধ্যে সিনিয়র কোচ হিসেবে কাজ করছেন ওয়াহিদুল হক গণি, জাফরুল এহসান ও মিজানুর রহমান বাবুল।
গতকাল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খেলাধুলা চালু করা যাবে। আজকের পর থেকে করোনার বিশেষ বুলেটিনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটাররা নেমে গেছেন অনুশীলনে। বিসিবি কার্যালয়ও সচল হয়েছে। কর্মকর্তারা অফিস করছেন নিয়মিত। সেখানে করোনার ভীতি নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে।
বিসিবির ট্রেনার, ফিজিওরা ঈদের আগে থেকেই কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শুধু বিসিবির স্থানীয় কোচরা এখানে অদৃশ্য। তাদের দেখা মিলছে না কোথাও। কোচহীন এই সময়ে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে থাকতে পারতেন তারা। তাতে নিজেদের উপকৃত হওয়ার সুযোগও রয়েছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগে নিজের উৎকর্ষকতা সাধন করতে পারতেন তারা।
করোনাকালে বিসিবির বেতনভুক্ত কোচরা গত ৫ মাস কাজহীন সময় কাটিয়েছেন। যদিও বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচরা ভিডিও সেশন করেছেন বলে জানা গেছে। ২২ আগস্ট শুরু হবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প। বিসিবি অনায়সেই পারতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাফরুল এহসান-মিজানুর রহমান বাবুলদের ক্রিকেটারদের অনুশীলনে যুক্ত করতে।
তাতে ক্রিকেটাররাও উপকৃত হতে পারতেন। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে স্কিলের উন্নতির জন্য কাজ করার সুযোগ পেতেন। এহসান-বাবুলরা এখনও গৃহবন্দী বলেই তাইজুলদের বোলিং সেশন পরিচালনা করতে হচ্ছে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির ম্যানেজারকে।