ব্যাট হাতে হতাশার দিনে উইকেট নিতেও ব্যর্থ বাংলাদেশ
ছবি:
|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
কিংস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ক্যারিবিয়ান পেসারদের আগুনে পুড়লেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়েছে দলটি। দ্বিতীয় দিন ৯৫ রান যোগ করতেই শেষ আট উইকেট হারায় টাইগাররা। মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল হোসেন মিলে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১১৬ বল খেলেন, ব্যাট হাতে এ দিন টাইগারদের লড়াই ওইটুকুই। জবাবে প্রথম ইনিংসে এক উইকেটে ৭০ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখনও ৯৪ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসেও শুরু থেকে উত্তাপ ছড়ায় বাংলাদেশের পেসাররা। নাহিদ রানা, তাসকিন আহমেদরাও ডিউক বলের বাড়তি সুইং আদায় করে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানতার সঙ্গেই খেলতে থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও মিকাইল লুইস। বিনা উইকেটে ১৬ রান করে এই দুজন চা-বিরতিতে যান।
বিরতির পর নাহিদের তোপ সামলাতে পারেননি লুইস। প্রথম টেস্টে অসাধারণ এক ইনিংস খেলা এই ওপেনার নাহিদের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন। লুফে নিতে ভুল করেননি লিটন। ৪৭ বলে ১২ রানে ফিরে যান তিনি। ঘণ্টা প্রতি দেড়শ কিলোমিটারের আশেপাশে প্রতিনিয়তই বোলিং করে যাচ্ছিলেন নাহিদ। লুইসকে ফেরানোর পরও সেটি অব্যাহত রাখেন তিনি।
উইকেটে তাকে বেশ দেখেশুনে খেলছিলেন ব্র্যাথওয়েট এবং কার্টি। আলগা বল ছেড়ে দিচ্ছিলেন দুজনই। নাহিদ রানার তোপ এবং তাইজুল ইসলামের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং কিছুই কাজে আসছিল না। এরমধ্যে একটি রিভিউও নষ্ট করে বাংলাদেশ। তাইজুলের দারুণ ডেলিভারির লাইনে খেলতে পারেননি ব্র্যাথওয়েট। তার ব্যাটের বাইরের কানা ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল। টিভি স্ক্রিনে দেখে মনে হচ্ছিল বল অবশ্যই ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক লিটনের গ্লাভসে গেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিয়ে মিরাজ বুঝলেন বল ব্যাট স্পর্শই করেনি।
রিভিউ নষ্টের পর ২৬ রানে ব্র্যাথওয়েটকে 'জীবন' দেন মিরাজ। তাইজুলের বলে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের ক্যাচ ছাড়েন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত নেতা। তাইজুলের বলে লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দেন ব্র্যাথওয়েট। মিরাজ লাফ মেরে বলে হাত ছোঁয়ালেও তা মুঠোয় নিতে পারেননি। ক্যাচটি কঠিন হলেও মিরাজের হাত ছোঁয়ায় বাংলাদেশের আফসোস বাড়িয়ে দেয়।
৩৩তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নেন মিরাজ। সেই ওভারে তার বলে সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন ক্যারিবিয়ান দলপতি। বলটি তার পায়ে লাগলে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আবেদন করে, আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। যদিও রিভিউ নিয়ে দেখা যায় ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। আম্পায়ারও নিজের ভুল বুঝতে পারেন। ৩২ রানে থাকা অবস্থায় রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ক্যারিবিয়ান দলপতি। এর একটু পরই খেলা শেষ হয়। ১১৫ বলে ৩৩ রান নিয়ে উইকেটে আছেন ব্র্যাথওয়েট। তার সঙ্গে তৃতীয় দিন শুরু করবেন ৬০ বলে ১৯ রান করা কার্টি।
১৬৪ রানেই অলআউট বাংলাদেশ-
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের দিয়ে ভয়টা ছিল আগে থেকেই। সকালের শুরুতে খেলতে নেমেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিটে ছোবল দেন শামার জোসেফ। সাবধানী শুরুর চেষ্টা করলেও নবম ওভারেই উইকেট হারাতে হয়েছে সফরকারীদের। শামার জোসেফের মিডল অ্যান্ড অফ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন শাহাদাত হোসেন দিপু। ১২ রান নিয়ে দিন শুরু করা ডানহাতি ব্যাটার ফিরেছেন ২২ রানে। পাঁচে নেমে টিকতে পারলেন না লিটন দাসও। জেইডেন সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
জায়গায় দাঁড়িয়ে খানিকটা আলসে ভঙ্গিতে ড্রাইভ করায় এজ হয়ে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে থাকা কাভেম হজের কাছে। বাংলাদেশের উইকেটকিপারকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে মাত্র ১ রানে। অ্যান্টিগায় রানের দেখা পেলেও জ্যামাইকায় প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ জাকের আলী অনিক। দ্রুতই দুই উইকেট হারানোয় সাদমানের সঙ্গে জুটি গড়ার বিকল্প ছিল না তার সামনে। তবে বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটারকে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শামার জোসেফ। ডানহাতি পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে থাকা জশুয়া ডি সিলভাকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
জাকেরের বিদায়ে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর পানি বিরতিতে যায় দল। ফেরার পর প্রথম বলেই সাদমান ইসলামের উইকেট হারাল বাংলাদেশ। শামার জোসেফের বলে কট বিহাইন্ড হন আগের দিন দুবার ক্যাচ দেয়া এই ওপেনার। এ দিন অবশ্য ঠিকমতই খেলছিলেন সাদমান। কিন্তু শামারের অফ স্টাম্পের বাইরে আউটসুইং হওয়া ডেলিভারিটি তার ব্যাটের কানায় লেগে জশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে চলে যায়। ১৩৭ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় সাদমান করেন ৬৪ রান।
তারপরও অব্যাহত ছিল শামারের দুর্দান্ত বোলিং। কেমার রোচ, জেইডেন সিলসরাও তার সঙ্গে যোগ দেন। বাকি সময়টা অবশ্য প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। দুজনের নৈপুণ্যে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। শেষদিকে কাভেম হজ আক্রমণে আসলেও ধীরলয়ে খেলতে থাকেন এই দুজন। প্রথম সেশনে খেলা হয় ২৮ ওভার, বাংলাদেশ তোলে ৫৩ রান। এর মধ্যে প্রথম ঘণ্টায়ই চার উইকেট হারায় তারা।
প্রথম সেশনে একের পর এক শর্ট বল করে যায় ক্যারিবিয়ানরা। দ্বিতীয় সেশনেও চলছিল এভাবেই। কিন্তু আচমকা উল্টো পথে হাঁটেন আলজারি জোসেফ। তার বাউন্সারে ক্যাচ তুলে দেন তাইজুল। সময় মতো সরে না যাওয়ায় সেই বলটি খেলে ফেলতে হয় তাইজুলকে। সহজ ক্যাচ ওঠে তৃতীয় স্লিপে। জাস্টিন গ্রেভসের তা লুফে নেন অনায়সে। ফেরার আগে মিরাজের সঙ্গে ১১৬ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন তাইজুল। ৬৬ বলে একটি চারে ১৬ রান করেন তিনি। তাইজুল ফেরার একটু পরই দেড়শ ছাড়ায় বাংলাদেশ।
মাত্র ৫ রানে শেষ ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৫৯ রানে বিদায় নেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম সেশনে নয়টি মেইডেন দেয়া জেইডেন সিলসের বলে আগ্রাসী হয়ে মারতে গিয়ে ফিরে যান তিনি। প্রথমে তাসকিনের ক্যাচটি লুফে নিতে যাচ্ছিলেন জশুয়া দা সিলভা। লাফ দিয়েও পারেননি তিনি। তার হাত ছুঁয়ে বল চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে, ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন অ্যালিক আথানেজ।
সেই ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করেন মিরাজ। টাইমিং করতে না পারায় ফাইন লেগের দিকে বল উঠিয়ে দেন তিনি। দৌড়ে এসে ক্যাচ লুফে নেন শামার। ৭৫ বলে ৩৬ রান করে বিদায় নেন মিরাজ। তারপর নাহিদ রানাকে বোল্ড করে বাংলাদেশের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন সিলস। ১৫.৫ ওভারে ১০ মেডেন নিয়ে পাঁচ রানে চার উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার সিলস। শামার নেন তিন উইকেট। দুটি উইকেট নেন রোচ, একটি উইকেট নেন জোসেফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১৬৪/১০ (৭১.৫ ওভার) (সাদমান ৬৪, মিরাজ ৩৬, শাহাদাত ২২, তাইজুল ১৬; সিলস ৪/৫, শামার ৩/৪৯ )
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ৭০/১ (৩৭ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৩৩*, কার্টি ১৯*, নাহিদ ১/২৮)