|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ১৭৭/৩ (৬৬ ওভার) (লুইস ৯০*, আথানেজ ৫১*)
৯০ রানে জীবন পেলেন লুইস, আথানেজের হাফ সেঞ্চুরি-
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ ছন্দ খুঁজে পান লুইস ও আথানেজ। তাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৬১ ওভারের মধ্যেই দেড়শ পেরিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। তৃতীয় সেশনের প্রথম নয় ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫.৭৭ ইকোনমি রেটে ৫২ রান তোলে! দল ১৭০ রানের গণ্ডি পেরোনোর পর হাফ সেঞ্চুরি পান আথানেজ। ৮৫তম বলে ১১ টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। আথানেজ হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পরের বলেই জীবন পান লুইস। ৯০ রানে ব্যাটিংয়ের সময় তাইজুলের বলে কাট করতে গিয়ে লুজ শট খেলে ফেলেন এই ওপেনার। স্লিপে দাঁড়ানো মিরাজ ডানে ডাইভ দিয়ে সহজ ক্যাচটি হাতে স্পর্শ করলেও বাজেভাবে মিস করেন। মিস করার পর মাটিতে শুয়ে নিজের হাত দেখছিলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। সেই ওভারে একটি রিভিউ নষ্ট করে বাংলাদেশ। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট ছুঁয়েছে ভেবে কট বিহাইন্ডের রিভিউ নেয় মিরাজের দল। তবে ব্যাট নয়, থার্ড আম্পায়ার খুঁজে পায় লুইসের প্যাডে লেগেছিল বল।
আথানেজ রীতিমতো শাসন করেন বাংলাদেশের বোলারদের। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি বা ছক্কা ছিল তার। ওয়ানডে মেজাজে খেলেছেন তিনি। ১২৪ বলে জুটির পঞ্চাশ আসলেও এই জুটি একশ রান তোলে ১৭৬ বলে। ইনিংসের ৭১তম ওভারে দুইশ পার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ২২৬ রানে লুইসের উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। অভিষেক সেঞ্চুরি করা হলো না তার। ২১৮ বলে এক ছক্কা ও নয় চারে ৯৭ রান করেন এই ওপেনার। মিরাজের বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন লুইস। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে। মিরাজ ভুল করেননি শাহাদাত হোসেন। নব্বইয়ের ঘরে ২৬ বল আটকে থেকে আউট হন লুইস। ফলে ভেঙে যায় ২২১ বলে ১৪০ রানের জুটি।
৬৪তম ওভারে লুইসের রান যখন ৯০, আথানেজ তখন অন্য প্রান্তে ছিলেন ৪৯ রানে। লুইস এই পথে নিজের স্কোরে আরও ৭ রান যোগ করার সময় আথানেজ পৌঁছে যান ৮৯ রানে! তবে লুইস ফেরার পর ফিরে যান আথানেজও। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্কুপের মতো খেলেছিলেন আথানেজ। যদিও তেমন গতি না থাকায় তার ব্যাটে লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ উইকেটরক্ষক লিটন। দশটি চার ও একটি ছক্কায় ১৩০ বলে ৯০ রান আসে বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটে। তিন রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে লড়াইয়ে ফেরার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ।
লুইসের ধৈর্যশীল ইনিংসে দ্বিতীয় সেশন পার ক্যারিবিয়ানদের-
বিরতির পর ফিরে কিছুটা সময় নিয়ে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন লুইস। সপ্তম টেস্টে এটি তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ১০৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ক্যারিবিয়ান এই ওপেনার। প্রথম সেশনে আগুনে বোলিং করা তাসকিনের বলে চার মেরেই এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। এর কয়েক বল পরই হজের সঙ্গে তার জুটি পঞ্চাশ পেরিয়ে (১০২ বলে) যায়। একটু পরই রানআউট হন হজ।
মিরাজের বলটি লেগ সাইডে ঠেলে দিয়েছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার, এরপর প্রথম রানটি দ্রুত নিয়ে দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটেছিলেন তিনি। যদিও ফাইন লেগ থেকে আসা তাইজুল ইসলামের দারুণ থ্রো ধরে স্টাম্প ভাঙেন লিটন দাস। শেষমুহূর্তে ডাইভ দিয়েও লাভ হলো না। ৬৩ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে দলীয় ৮৪ রানে বিদায় নেন হজ। প্রতিভাবান এই ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে ১৩০ বলে ৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।
জুটি ভাঙার পর আবারও কিছুটা মন্থর গতিতে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুযোগ পেয়ে ক্যারিবিয়ানদের চেপে ধরেন তাসকিন-মিরাজ-তাইজুলরা। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে অ্যালিক আথানেজকে নিয়ে দলীয় শতকে পৌঁছান লুইস। একশ'তে পৌঁছানোর পর রানের খাতা ভালোই সচল রাখেন এই দুই ব্যাটার। তাদের ব্যাটে সাবলীলভাবেই দ্বিতীয় সেশন পার করে ক্যারিবিয়ানরা। এই সেশনে ৩১ ওভার ব্যাটিং করে এক উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তাসকিনের আলোয় প্রথম সেশন আলোকিত করল বাংলাদেশ-
টস জিতে বোলিংয়ে নেমে মেডেন ওভারে শুরুটা ভালো করলেন হাসান মাহমুদ। অন্যপ্রান্তে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও নিয়েছেন মেডেন ওভার নিয়েছেন। তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয় বলে গিয়ে নিজেদের প্রথম রানের দেখা পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাউন্ডারি পেতে স্বাগতিকদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪.৩ ওভার পর্যন্ত। হাসানের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরেছেন মিকাইল লুইস। উইকেটের দেখা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েট ও লুইসকে বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেছেন বাংলাদেশের দুই পেসার।
উইকেটে খানিকটা ঘাসের আচ্ছাদন থাকায় খানিকটা সিম মুভমেন্টও পাচ্ছেন পেসাররা। উইকেটের খোঁজে ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনা হয় তাসকিন আহমেদকে। তবে প্রথম ঘণ্টায় নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করেছেন ক্যারিবীয় ওপেনাররা। ড্রিংকস ব্রেকের এক ওভার পরই অবশ্য উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে সহজাত ডিফেন্স করেছিলেন ব্রাথওয়েট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে উরুতে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন।
যদিও তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ব্রাথওয়েট। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে আঘাত না করলে স্টাম্পে আঘাত হানতো। ফলে সকালের প্রথম ঘণ্টা অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া ডানহাতি ওপেনারকে ফিরতে হয় ৩৮ বলে ৪ রান করে। ব্রাথওয়েট ফেরার পর তিনে নেমে টিকতে পারেননি কেসি কার্টি। ডানহাতি ব্যাটারকেও ফিরিয়েছেন তাসকিন। উইকেটে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়ো করছিলেন তিনি। তাসকিনের মিডল এবং লেগ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করার চেষ্টায় লিডিং এজ হয়ে মিড অনে থাকা তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়েছেন কার্টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারকে ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খোলার আগেই।
প্রথম সেশন বাংলাদেশ পার করেছে তাসকিনের সফলতা নিয়েই। খেলা হয়েছে মোট ২৩ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ রান তুলেছে সেই দুই উইকেট হারিয়েই।
২ স্পিনার ও ৩ পেসার নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ-
পাকিস্তানে দুই টেস্টের সিরিজ জিতলেও ভারত সফরে বাংলাদেশের সময়টা একেবারেই ভালো কাটেনি। এমনকি ঘরের মাঠেও সাদা পোশাকের ক্রিকেট ভালো খেলতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হকরা। কাগিসো রাবাদা, কেশভ মহারাজদের বোলিং তোপে লড়াই ছাড়াই সিরিজ হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রের এটিই বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে শেষটা নিশ্চিতভাবেই রাঙিয়ে রাখতে চাইবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
যদিও কাজটা একেবারেই সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। এমন অবস্থায় জাকের আলী, শাহাদাত হোসেন দিপু ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনদের মতো তরুণদের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে সফরকারীদের। শান্ত না থাকায় অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের ৫০তম টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে জয় জিতেছেন তিনি।
সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার পেসারের বিপক্ষে দুজন স্পিনার ও তিনজন পেসার নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। স্পিনার হিসেবে অধিনায়ক মিরাজের সঙ্গে আছেন তাইজুল ইসলাম। পেসার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
বাংলাদেশ- মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেন দিপু, লিটন দাস, জাকের আলী, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ এবং শরিফুল ইসলাম।