বোর্ডার - গাভাস্কার ট্রফি

পেসারদের উল্লাসনৃত্য, ব্যাটারদের বিষাদ এবং পার্থে একদিনে ১৭ উইকেট

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 17:07 শুক্রবার, 22 নভেম্বর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ওয়াকার মতো পেসারদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে না উঠলেও পার্থের অপ্টাসের উইকেটে বাউন্স এমনিতেই একটু বেশি। উইকেটে খানিকটা ঘাস থাকায় হয়ত পেস, বাউন্স, সুইং ও সিম মুভমেন্টের আশা ছিল সকাল থেকেই। তবে উইকেট যতটা ভয়ঙ্কর হওয়ার কথা এমনটা না হলেও অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে ভাবনার খোরাক মিটিয়ে শুরুটা করলেন মিচেল স্টার্ক, জশ হেজেলউড, প্যাট কামিন্সরা। নিখুঁত, লাইন লেংথে ভারতের ব্যাটারদের পরীক্ষা নিলেন, সাজঘরে ফেরালেন। কখনও উইকেটের পেছনে আবার কখনও স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা নাথান ম্যাকসুয়েনি কিংবা উসমান খাওয়াজার হাতে ক্যাচ বানিয়ে উইকেট তুলে নেয়ার উল্লাসে মেতে উঠলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা।

ভারতের ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ঋষভ পান্ত এবং নীতিশ রেড্ডি ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন। যতটা করতে পেরেছেন সেটাও বোধহয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশাল কিছু। যদিও শেষ পর্যন্ত হেজেলউডদের পেস তোপে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে যেতে হয়েছে সফরকারীদের। সকালের শুরুতে স্টার্ক-হেজেলউডরা যা করলেন দিনের তৃতীয় সেশনে ঠিকই সেটাই করে দেখালেন জসপ্রিত বুমরাহ। নিখুঁত লাইন লেংথের সঙ্গে গতিময় বোলিংয়ে খাওয়াজা, ম্যাকসুয়েনি, স্টিভ স্মিথদের সাজঘরে ফেরালেন। ভারতের অধিনায়কের প্রতিটা ডেলিভারিই যেন স্বাগতিক ব্যাটারদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে। ডানহাতি পেসারের আগুনে বোলিংয়ে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার।

কোথায় খেলবেন, কিভাবে খেলবেন সেটাই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। বুমরাহর অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে স্বাগতিকরা যখন পথ হারিয়ে খুঁজছিলেন তখন ছোঁবল দিলেন হার্শিত রানা, মোহাম্মদ সিরাজরা। ভারতীয় পেসারদের উল্লাসনৃত্যে অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে মাত্র ৬৭ রান তুলে। পার্থের প্রথম দিনে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মিলে ২১৭ রান তুলতে হারিয়েছে ১৭ উইকেট। উল্লাসে মেতে দিনের শুরুটা হলেও অস্ট্রেলিয়ার শেষ বিকেলটা ছিল বিষাদে ভরা। ৭ উইকেট হারানো অজিরা ভারতের চেয়ে ৮৩ রানে পিছিয়ে থাকায় স্বাগতিকরা খানিকটা বিপদেই।

পার্থে ভারতের ১৫০ রানের জবাব দিতে নেমে বুমরাহ ও সিরাজকে চার মেরে ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন ম্যাকসুয়েনি। তবে ডানহাতি ওপেনারকে অভিষেকের প্রথম ইনিংসটা রাঙাতে দেননি বুমরাহ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করেছিলেন ম্যাকসুয়েনি। বল প্যাডে আঘাত করলেও শুরুতে আউট দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার। পরবর্তীতে রিভিউ নিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে ১০ রান করা ম্যাকসুয়েনিকে ফেরান বুমরাহ। একটু পর ভারতের অধিনায়কের শিকার খাওয়াজা। ডানহাতি পেসারের বলে স্লিপে থাকা বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

পরের বলে বুমরাহর দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন স্মিথ। টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো গোল্ডেন ডাক মেরেছেন অজি ব্যাটার। এর আগে ২০১৪ সালে পোর্ট এলিজাবেথে স্মিথকে গোল্ডেন ডাকে ফিরিয়েছিলেন ডেল স্টেইন। পরপর দুই বলে খাওয়াজা ও স্মিথকে ফেরানো বুমরাহর সামনে হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল। ট্রাভিস হেডের বিপক্ষে দারুণ এক ইয়র্কার করলেও উইকেট তুলে নিতে পারেননি। ৩০ বছর বয়সী পেসারের এমন ডেলিভারি আটকে দিলেও হেডকে গলার কাটা হয়ে উঠতে দেননি হার্শিত। তরুণ পেসারের গুড লেংথে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ১১ রান করা হেড। টেস্টে ক্রিকেটে এটিই হার্শিতের প্রথম উইকেট। একটু পর মিচেল মার্শকে ফিরিয়েছেন সিরাজ।

ডানহাতি পেসারের বলে স্লিপে থাকা লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রান করা এই ব্যাটার। ১৯৮০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ৪০ রান তোলার আগে ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে হোবাার্টে। সেবার মাত্র ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল অজিরা। দলের রান পঞ্চাশ হওয়ার আগে ফিরেছেন মার্নাশ ল্যাবুশেনও। সিরাজের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৫২ বলে ২ রান করা অজি ব্যাটার। যদিও শুরুতেই ফিরতে পারতেন তিনি। বুমরাহর বলে স্লিপে থাকা কোহলি ক্যাচ মিস করায় জীবন পান ল্যাবুশেন। শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্সকে ফিরিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক বুমরাহ। তাতে ৭ উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। ভারতের হয়ে এদিন বুমরাহ চারটি, সিরাজ দুটি এবং অভিষিক্ত হার্শিত নিয়েছেন একটি উইকেট।

সকালের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ভারত। স্টার্কের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে না পারায় গালিতে থাকা ম্যাকসুয়েনির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন যশস্বী জয়সাওয়াল। উইকেটে অনেকটা সময় টিকে থাকলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি দেবদূত পাডিকাল। বাঁহাতি ব্যাটারকে রানের খাতা খোলার আগে ক্যারির হাতে ক্যাচ বানিয়েছেন হেজেলউড। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যারির গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। ব্যাট হাতে আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন কোহলি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না ভারতের এই ব্যাটারের।

সবশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে ৬ ইনিংসে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম টেস্টের ইনিংসে কোহলি ফিরেছেন ৫ রানে। হেজেলউডের চতুর্থ স্টাম্পের লাফিয়ে উঠা ডেলিভারিতে ব্যাটার কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে থাকা খাওয়াজার হাতে। বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন রাহুল। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে নামা ডানহাতি ব্যাটারকে ফিরিছেন স্টার্ক। বাঁহাতি পেসারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৭৪ বলে ২৬ রান করা রাহুল। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলেন না ভারতীয় ওপেনার। দলের রান পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার আউট হয়েছেন ধ্রুব জুরেলও। তরুণ ব্যাটারকে ল্যাবুশেনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন মার্শ।

ওয়াশিংটন সুন্দরও ফিরেছেন দ্রুতই। বাঁহাতি ব্যাটারও মার্শের শিকার হয়েছেন। এরপর অবশ্য জুটি গড়ে তোলেন পান্ত ও নীতিশ। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৮ রান। পান্তের বিদায়ে ভাঙে তাদের জুটি। কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন৭৮ বলে ৩৭ রান করা পান্ত। হার্শিত, বুমরাহও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। শেষ ব্যাটার হিসেবে নীতিশ ফিরলে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অল আউট হয় ভারত। অভিষেকে ৫৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেছেন নীতিশ। ভারতের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে আট কিংবা তার নিচে নেমে অভিষেকে ভারতের হয়ে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটারদের তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন হেজেলউড। বাকিদের মাঝে স্টার্ক, কামিন্স ও মার্শ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।