টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের আরও কাছে বাংলাদেশ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 20:02 Thursday, June 13, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

উইকেট হারালেও বেশিরভাগ ওভারেই বাউন্ডারি মেরেছেন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা। বাউন্ডারি মারার সঙ্গে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও বেশ তৎপর ছিলেন তারা। ইনিংসের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচে অনেকটা এগিয়ে ছিল ডাচরা। তবে বোলিংয়ে এসে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। নিজের তৃতীয় ওভারে ফিরিয়েছেন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও বাস ডি লিডকে। শেষ ওভারে লগান ভ্যান বিককে। দুই ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তরুণ এই লেগ স্পিনার। ম্যাচ জিততে স্লোয়ার আর কাটারে রান আটকানোর দায়িত্বটা সামলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। হুমকি হয়ে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসকে ম্যাচ জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। শেষের দারুণ বোলিংয়ে ডাচদের ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইটের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

সেন্ট ভিনসেন্টে ১৬০ রান তাড়ায় সাবধানী শুরু করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের দুই ওপেনার মাইকেল লেভিট এবং ম্যাক্স ও’ডাউড। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে তাদের দুজনের জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসারের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন লেভিট। ডাচ এই ওপেনার ফিরেছেন ১৮ রানে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিবও।

ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে টেনে মেরে গিয়ে তানজিম সাকিবের হাতেই ক্যাচ দিয়েছেন ম্যাক্স ও’ডাউড। ফলো থ্রুতে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নিলে তাকে ফিরতে হয় ১২ রানে। উইকেট হারালেও প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি মেরে গেছেন ডাচ ব্যাটাররা। তিনে নামা বিক্রমজিত সিং ছিলেন শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক। নিজের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসে তার ঝড় থামিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। 

অভিজ্ঞ এই স্পিনারের বলে বিক্রমজিতকে ফিরতে হয়েছে লিটন দাসের কাছে স্টাম্পিং হয়ে। ঝড় তোলা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ১৬ বলে ২৬ রানে। তৃতীয় উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিলেন সাইব্র্যান্ড ও এঙ্গেলব্রেচ।। এমন মুহূর্তেই টানা দুই উইকেট তুলে নিয়ে ডাচদের চাপে ফেলেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের লাইন মিস করে আউটসাইড-এজড হয়ে কাভারে তানজিম সাকিবের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়েছেন তিনি।

ফলে ২২ বলে ৩৩ রান করে ফিরে যেতে হয় এঙ্গেলব্রেচকে। ফলে তাদের ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি ভেঙেছে। পরের ব্যাটার বাস ডি লিডকেও থিতু হতে দেননি ডি লিডকে। রিশাদের টার্নে পরাস্ত হন ডি লিড। উইকেটের পেছনে দ্রুতগতির লিটন করেছেন স্টাম্পিং। এরপর বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। স্লোয়ার অফ কাটারে এক্সস দ্য ব্যাট খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ২৩ বলে ২৫ রান করা এডওয়ার্ডস শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দিয়েছেন জাকের আলী অনিকের হাতে। শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানে থামে ডাচরা।

এর আগে বৃষ্টির কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বে এই ম্যাচের টস অনুষ্ঠিত হয়। টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নেদারল্যান্ডস। অবশ্য ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। আরিয়ান দত্তের করা দ্বিতীয় বলে সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ভিক্রমজিত সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। শান্তর ক্যাচ নিতে স্কয়ার লেগ থেকে মিড উইকেটে ছুটে গিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি।

তৃতীয় ওভারে ভিভিয়ান কিংমার ওভার থেকে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৮ রান নেন তানজিদ হাসান। যদিও এই লিটনের সঙ্গে তার জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি আরিয়ান। এই স্পিনারের টসড আপ ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে এলিংব্রেচের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। ফলে ২৩ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর লোগান ভ্যান বিকের ওপর চড়াও হয়েছিলেন সাকিব। তার ওভারে তিনটি চার হাঁকান তিনি। প্রথমটি ছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে। এক বল পর একই জায়গা দিয়ে আরেকটি চার মারেন সাকিব। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে টানা দুই বলে দুটি চার হাঁকান সাকিব। টপ এজ হয়ে বল চলে গিয়েছিল শর্ট ফাইন লেগে। সেখানেও ফিল্ডার নাগাল পাননি বলের। আর শেষ বলে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার মেরে ওভার শেষ করেন।

পরের ওভারের প্রথম দুই বলে টানা দুই চারে বাস ডি লিডকে স্বাগত জানান তানজিদ। ৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৭ রান। দারুণ শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ। তিনি ভ্যান মিকিরিনের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপে বাস ডি লিডের হাতে ক্যাচ দেন। ফলে ৫টি চার ও একটি ছয়ে সাজানো ৩৫ রানের ইনিংস শেষ হয়। দারুণ ছন্দে থাকলেও ডাচদের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। 

টিম প্রিঙ্গেলের স্কিড করা ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ৯ রান।  টিম প্রিঙ্গেলের করা ১৭তম ওভারে ১৬ রান তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি। যদিও প্রথম চারটি আসে লেগ বাই থেকে। ছক্কাটি মারেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। পরের বলেই সুইপার কাভার দিয়ে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ।

অন্যপ্রান্তে উইকেট হারালেও সাকিব বেশ ধীরস্থিরভাবেই খেলেছেন। ৩৮ বলে তুলে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে দিয়ে ১৯ ম্যাচ পর হাফ সেঞ্চুরির খরা কাটালেন তিনি। মিকিরিনের বলে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। পরের বলেই মাহমুদউল্লাহর উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

মিকিরিনের করা শর্ট বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও সীমানা ছাড়া করতে পারেননি এলিংব্রেচ সেখানে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ২১ বলে ২৫ রান করা বাংলাদেশি এই ব্যাটারকে আউট করেছেন। আর তাতেই সাকিবের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৪১ রানের জুটি ভাঙে। শেষ ওভারে বাস ডি লিডকে টানা দুই বলে দুটি চার মেরে বাংলাদেশের লড়াইয়ের পুঁজি নিশ্চিত করেন সাকিব। জাকের আলী শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ১৪ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ-   ১৫৯/৫ (২০ ওভার) (শান্ত ১, লিটন ১, তানজিদ ৩৫, সাকিব ৬৪*, মাহমুদউল্লাহ ২৫)

নেদারল্যান্ডস-  ১৩৪/৮ (২০ ওভার) (এঙ্গেলব্রেখট ৩৩, বিক্রমজিত ২৬, এডওয়ার্ডস ২৫; রিশাদ ৩/৩৩, তাসকিন ২/৩০)