টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

রোমাঞ্চ জাগিয়ে ৪ রানে হারল বাংলাদেশ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 20:06 Monday, June 10, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকাকে হারালে সুপার এইট প্রায় নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশের। সেই সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে শেষ পর্যন্ত ৪ রানে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের। শেষ ৬ বলে বাংলাদেশ ১১ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি। উল্টো ২ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে।

অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কভার দিয়ে চার মেরে কাগিসো রাবাদাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। পরের বলে বাঁহাতি এই ওপেনার চার মেরেছিলেন ব্যাক ওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে। তবে বেশি আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে শেষ বলে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। রাবাদার অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বলে তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তানজিদ। আম্পায়ার আউট দেয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে আলোচনা করলেও রিভিউ না নিয়েই সাজঘরের পথে হেঁটেছেন।

টিভি রিপ্লেতে অবশ্য দেখা যায় বল ব্যাটে ছুঁয়েই উইকেটকিপারের গ্লাভসে গিয়েছে। তানজিদ আউট হয়ে ফেরেন ৯ রানে। তানজিদ ফেরার পর লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত। এক উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে তুলেছে ২৯ রান। যদিও পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কেশভ মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে একটু ব্যাকফুটে গিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলতে চাওয়া লিটন ক্যাচ দিয়েছেন কভারে থাকা ডেভিড মিলারের হাতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রান করা লিটন এদিন ফিরেছেন ৯ রানে।

চারে নেমে উইকেটে থিতু হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। অ্যানরিখ নরকিয়ার শর্ট ডেলিভারিতে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফিরেছেন ৩ রান। লম্বা সময় টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ফিরে গেছেন শান্ত। নরকিয়ার শর্ট ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে খেলার চেষ্টায় মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪ রান। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাওহীদ হৃদয় মিলে যোগ করেন ৪৫ বলে ৪৪ রান। 

আর তাতেই বাংলাদেশ জয়ের রশদ পেয়ে যায়। অবশ্য আম্পায়ার্স কলের সুবাদে হৃদয়ের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদার করা গুড লেংথের ডেলিভারিতে লেগ সাইড দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন হৃদয়। তবে বলের লাইন মিস করে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। আম্পায়ার সঙ্গেই আউট দিয়ে দেন প্রোটিয়াদের আবেদনে সাড়া দিয়ে। বাংলাদেশও রিভিউ নেয়। রিভিউতে দেখা যায় অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল লাইনে ইমপ্যাক্ট করলেও লেগ স্টাম্প ছুয়ে চলে গেছে। ফলে আউট হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে।

এরপর বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার দায়িত্ব পড়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাঁধে। তাকে সঙ্গ দিতে এসেছিলেন জাকের আলী অনিক। মহারাজ ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করেন লেগ সাইডে ওয়াড দিয়ে। পরের বলে সিঙ্গেল। এরপর ফুলটস পেয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মেরেছিলেন জাকের। তবে ২ রানের বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহকে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে প্রোটিয়ারা।

তৃতীয় বলে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে গিয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন জাকের। এরপর রিশাদ স্লগ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন। উঠেছিল এলবিডব্লিউয়ের আবেদন। সাউথ আফ্রিকা রিভিউ নিলে দেখা যায় বলের ইমপ্যাক্ট ছিল বাইরে। হলে লেগ বাই থেকে এক রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ ২ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২ রান। 

মাহমুদউল্লাহ পেয়েছিলেন ফুলটস। তবে তিনি সীমানা ছাড়া করতে পারেননি। সীমানার কাছে ক্যাচ নেন এইডেন মার্করাম। আউট হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ। শেষ বলে ছয়ের আশায় বেঁচে ছিল বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন। তাসকিনও ফুলটস পেয়েছিলেন। তবে সেটাও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ফলে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।

এর আগে তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে সাউথ আফ্রিকাকে ১১৩ রানে আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বল হাতে শুরু থেকেই প্রোটিয়া ব্যাটারদের চাপে রেখেছেন তানজিম। অন্যপ্রান্ত থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তাসকিন। তবে পঞ্চম উইকেটে হেইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলারের ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটিতে লড়াইয়ে পুঁজি পায় সাউথ আফ্রিকা। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন তানজিম। দুটি উইকেট পান তাসকিন।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে তানজিমের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে রানের খাতা খুললেন কুইন্টন ডি কক। পরের বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মেরেছেন চারও। তবে প্রান্ত বদল করতেই উইকেট হারায় সাউথ আফ্রিকা। তানজিম সাকিবের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন রিজা হেনড্রিক্স। পেছনের পায়ে বল লাগার পর আবেদন করতেই আউট দেন অনফিল্ড আম্পায়ার। গোল্ডেন ডাকে ফিরতে হয় ডানহাতি এই ওপেনারকে।

পরের ওভারে তাসকিনের বিপক্ষেও ছক্কা মেরেছিলেন ডি কক। তবে বাঁহাতি এই ওপেনারের ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি তানজিম সাকিব। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন  তিনি। তবে ব্যাটে-বলে করতে না পারায় বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় ১৮ রান করা ডি কককে। তিনে নামা এইডেন মার্করামকে থিতু হতে দেননি তাসকিন আহমেদ।

ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন মার্করাম।। সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক ফিরেছেন ৮ বলে ৪ রানে। পরের ওভারে বোলিং এসে ট্রিস্টিয়ান স্টাবসকে নিজের শিকার বানিয়েছেন তানজিম সাকিব। তরুণ এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে সামনে ঠেলে দিতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।

এরপর হ্যাইনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে প্রোটিয়াদের হাল ধরেন ডেভিড মিলার। এই দুজনের জুটির মাঝেই নিজের বোলিং কোটা পূরণ করেন তানজিম সাকিব। তিনি ১৮ রান দিয়ে নিজের বোলিং শেষ করেন। ক্লাসেনকে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন আহমেদ। এর ফলে ৭৯ রানের জুটি ভাঙে ক্লাসেন-মিলারের।

৪৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যেতে হয় ক্লাসেনকে। তাসকিনের গুড লেংথের বল ক্লাসেনের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্প ভেঙে দেয়। ফলে ফিরে যেতে হয় এই প্রোটিয়া ব্যাটারকে। ১৯তম ওভারে এসে মিলারকে বোল্ড করে প্রোটিয়াদের রানের লাগাম টেনেছেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হন এই প্রোটিয়া তারকা। শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান মাত্র ৪ রান খরচা করলে সাউথ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

সাউথ আফ্রিকা- ১১৩/৬ (২০ ওভার) (ডি কক ১৮, ক্লাসেন ৪৬, মিলার ২৯; তানজিম ১৮/৩, তাসকিন ২/১৯)

বাংলাদেশ- ১০৯/৭ (২০ ওভার) (শান্ত ১৪, হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ২০; রাবাদা ২/১৯, নরকিয়া ২/১৭, মহারাজ ৩/২৭)