যে শিক্ষা দিলেন মাশরাফি
ছবি:

ক দিন আগেই মোহাম্মদ আশরাফুল বলছিলেন, মাশরাফি পারলে আমি পারবো না কেনো?
এই কথাটা প্রায়ই বিভিন্ন জনের মুখে শোনা যায়। ইয়াসিন আরফাত মিশু এক ম্যাচে ৮ উইকেট নেওয়ার পর বলছিলেন, মাশরাফি ভাই পারলে আমারও পারা উচিত।
মাশরাফি তার জীবনের লড়াই দিয়ে অনেক আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছেন। অনেক আগে থেকেই থেকেই এই দেশের ফাস্ট বোলারদের আইডল তিনি। তবে এই মৌসুমে মাশরাফি একটু অন্যরকম একটা শিক্ষা দিলেন আমাদেরকে।
বোঝালেন, সত্যিই বয়সটা একটা সংখ্যা মাত্র। মাশরাফির বয়স যদি এখন ১৮ হতো, তাও যে পারফরম্যান্স করছেন, তাতে চোখ কপালে তুলতে হতো। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এর আগে কেউ কখনো ৩৮ উইকেট নিতে পারেনি।
সেই কাজটা করে ফেলেছেন মাশরাফি। মাত্র ১৫ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট; গড় মাত্র ১৪.২১। এই ১৫ ম্যাচের মধ্যে ৪ ম্যাচেই ৪টি বা তার বেশী উইকেট নিয়েছেন; দুই ম্যাচে নিয়েছেন ৫টি বা তার বেশী উইকেট। সেরা বোলিং ৪৪ রানে ৬ উইকেট।
মাশরাফির কৃতিত্বটা বোঝা যাবে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধীর দিকে তাকালে। এবার লিগের দ্বিতীয় সেরা দুই বোলার কাজী অনিক ও আসিফ হাসানের সংগ্রহ ২৮টি করে উইকেট; মাশরাফির চেয়ে ১০টি কম!

আবারও বলি, এই পারফরম্যান্স ১৮ বছর বয়সে করলেও সেটা হাতে তালি পাওয়ার যোগ্য ব্যাপার। মাশরাফি এই পারফরম্যান্সটা করছেন ৩৪ বছর পার করে এসে।
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার কথা যদি বলেন, তাহলে ৩৪ বছরটা এমন কোনো বয়স নয়।
এই বয়সে অনেকে নতুন করে জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নও দেখেন। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশে ৩৪ বছর বয়সের ক্রিকেটারকে সবাই বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়।
এই বয়সে যে যাই করুক, নতুন করে তাকে আর বিবেচনায় নেওয়ার সংষ্কৃতিই নেই আমাদের দেশে। তার ওপর মাশরাফির আছে ১১ অপারেশনের ইতিহাস। ফলে মাশরাফিকে ‘বুড়ো’ ভেবে ভুল করাটা আমাদের এখানে মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইনফ্যাক্ট সেটা করাও হয়েছে।
এই মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টিতে চলে না বলে কিছুদিন আগে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেই মাশরাফি যখন দ্বিগুন আলো ছড়াচ্ছেন, তখন আবার সবাই ধরাপড়া শুরু করেছে, ফিরে এসো।
মাশরাফি টি-টোয়েন্টিতে ফেরেননি বটে। কিন্তু মাঠে প্রতিটা দিন বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বয়সটা একটা সংখ্যা মাত্র। বয়সকে পারফরমাররা কখনো পরোয়া করে না। সেদিন মুখেও বলেছেন, বয়স তার অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, যেটা বরং তাকে উপকৃত করছে,
‘যদি আমার খেলার কথা বলেন, অনফিল্ডে আমার পারফরম্যান্সের কথা বলেন সে জায়গায় পার্থক্য তৈরি হয়নি। একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে ব্যবস্থাপনার ক্ষমতায়। এটা মাঠের বাইরেও হতে পারে। জিম, রানিং হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে হবে। এটা অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে হবে। আপনি যখন দীর্ঘদিন খেলবেন, আপনাকে অন ফিল্ডে সেটা সহায়তা করবে।’
তাহলে মাশরাফির এই কথা থেকে আমরা কী শিখলাম?
আমাদের শিক্ষাটা হলো, ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে তার পারফরম্যান্স দেখতে হবে; বয়স নয়। বয়স যদি দেখতেই হয়, সেটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে। কারণ, বয়স মানুষকে অভিজ্ঞ করে; বুড়ো করে না। বুড়ো হয় মানুষ মনে, বয়সে কেউ বুড়ো হয় না।
প্রিয় ক্রিকেট বোর্ড, এই শিক্ষাটা আসুন তুষার ইমরান, রাজ্জাকদের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাই। একবার অনুভব করি, তারা বুড়ো হননি, অভিজ্ঞ হয়েছেন।