আরও বড় স্বপ্ন দেখুক বাংলাদেশ

ছবি:

২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল তো সহজে ভুলে যাওয়ার মত নয়। বাংলাদেশ হেরেছিল জেতার খুব কাছে থেকে। কষ্ট পেয়েছি ক্রিকেটার, সমর্থকরা। কিন্তু সেই হারে আমাদের ক্রিকেট থেমে থাকে নি।
বরং ধাপে ধাপে এগিয়েছি আমরা। মাঝে হোঁচট খেয়েছি, কিন্তু থেমে থাকি নি। বড় বড় টুর্নামেন্ট গুলোতে আগের মত দুমড়ে মুচড়ে ফেলা দলের তকমা থেকে বের হয়ে এসেছি আমরা।
কিন্তু ওই যে বললাম, পথ সহজ ছিল না কখনই। আমরা ২০১২-১৩ মৌসুমের সাফল্যের পর ব্যর্থ হয়েছি ২০১৪ এশিয়া কাপ,টি-টুয়েন্টি বিশকাপে ।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে, খেলেছি কোয়ার্টার ফাইনালে, হেরেছি চেনা প্রতিপক্ষ ভারতের কাছে।
এক বছর বাদে সেই টি-টুয়েন্টির এশিয়া কাপে টি-টুয়েন্টির আনাড়ি দল হয়েও মাশরাফির বাংলাদেশ সেবার ২০১২ সালের ফাইনাল হারের প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তানকে হারিয়ে।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ফাইনালে আবার সেই ভারতের সাথে দেখা। কারতেল ওভারের সেই ফাইনালেও হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
আমরা দমে যাই নি... আমরা এগিয়ে গেছি। এক পা এক পা করে, এক একটি হার আমাদের এক এক ধাপ উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছে।
২০১২ সালে আমরা হেরেছিলাম, এবার আমরা চোয়াল শক্ত করে বড় কিছুর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এক বছর বাদেই প্রতিজ্ঞা বাস্তবে রূপ নেয়।

আমরা ইংল্যান্ডের অচেনা কন্ডিশনে মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলাম!
কিন্তু আবারো সেই ভারতের বিপক্ষে বড় মঞ্চে পেরে উঠতে পারলাম না আমরা। দুই বছরের মাথায় তিন নক আউট ম্যাচে পর পর ভারতের কাছে হার নিয়ে মাঠ ছাড়লাম আমরা।
তাতে উন্নতির মই বেঁয়ে আমাদের উপরে ওঠা কি থেমে গেছে? টি-টুয়েন্টি থেকে মাশরাফির বিদায়, কোচ হাথুরুসিংহের ইস্যু সহ আরও নানা বিতর্কে ক্রিকেট যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখনই আমরা ঘরের বাইরে প্রথমবারের মত কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিলাম।
তাও আবার অচেনা ফরম্যাট টি-টুয়েন্টিতে। দলে নেই সাকিন, নেই মাশরাফি। এক মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক ও রুবেল ছাড়া এক ঝাঁক নতুন মুখের দল নিয়ে শ্রীলঙ্কার কিভাবে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের ব্লু প্রিন্ট দখল করে নিল বাংলাদেশ।
প্রতিটি ম্যাচে ব্যাটিং শক্তির উদাহরণ সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ। ব্যাট বলের লড়াইেতর্জনী উঁচিয়ে দেখিয়ে দিল, আমরা এসেছি দাপট দেখাতে।
শ্রীলঙ্কার আঙ্গিনায় স্বাগতিকদের দর্শক বানিয়ে ছাড়তে এমন কিছুর দরকার ছিল। আবারো আরেকটি ফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি সেই ভারত।
ফের ব্যাটিং মাস্টারক্লাস নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশ ক্যাম্পে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে যা করেছিলেন মুশফিক, তামিম, রিয়াদ ও লিটনরা। সেটাই করলেও সাব্বির রহমান।
সত্তর ছাড়ানো ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে লড়াই করার মত পুঁজি এনে দিলেন। কিন্তু বোলাররা শুরুটা মন মত করতে পারল না। রান খরচা করে ম্যাচ অনেকটা হাতছাড়া হওয়ার মত অবস্থা।
কিন্তু ওই যে বললাম, আমরা এক ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ার মত দল নই। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে জেনে গেছি... কিভাবে ম্যাচ ফিরতে হয়ে তার পন্থা আমাদের জানা।
ম্যাচের মিডেল ওভারে রান আটকে উইকেট নেয়ার চেস্টা করে সফল হন সাকিবরা। কিন্তু ক্রিকেট বলে কথা, মোড় ঘুরতে সময় বেশি নেয় না এই অদ্ভুত খেলাটি।
পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচটি শেষ দুই ওভার পর্যন্ত নিজেদের নাগালে রেখেও কি থেকে কি হয়ে গেল। আমরা হারলাম কার্ত্তিকের শেষ বলের ছক্কায়।
বোলার সৌম্য লুটিয়ে পড়লেন প্রেমাদাসার উইকেটে। ভেঙ্গে পড়া এই তরুন ক্রিকেটাকে টেনে তুললেন দুই সিনিয়র সাকিব-মুশি। ভেজা চোখের সৌম্যর জন্য এমন হার সহ্য করা কঠিন ছিল হয়তো।
কিন্তু এমন হারই আবার সৌম্যদের বড় স্বপ্ন দেখতে শেখাবে। এভবেই ক্রিকেট এগিয়ে যায় এক পা এক পা করে। কে জানে, হয়তো নিকট ভবিষ্যতে কোন এক বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই ভারতকেই পেতে চাইবে বাংলাদেশ দল।
হয়তো এক বিশ্বকাপ ফাইনাল দিয়ে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের নক আউট ম্যাচের শোধ তুলে নিবে এই বাংলাদেশ।