মার্শ, সিমন্স, পাইবাস... কে কেমন কোচ?

ছবি:

কে হবে টাইগারদের নতুন কোচ? এই মুহূর্তে ক্রিকেট পাড়ায় কোচ ইস্যুটি প্রধান আলোচনার বিষয়। সামনে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের আগেই কি নতুন কেউ আসবে নাকি জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দিবে ২০১৮ সালের প্রথম সিরিজ।আপাতত নতুন কোচ হিসেবে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের ক্রিকেট কর্তাদের পছন্দের তালিকায় আছেন জিওফ মার্শ, ফিল সিমন্স এমনকি সাবেক টাইগার কোচ রিচার্ড পাইবাসের নাম।
বিসিবি'র তালিকায় থাকা কোচদের মধ্যে সবাই বেশ অভিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে সবারই। ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য বিসিবি'র তালিকায় থাকা কোচদের পরিচিতি তুলে ধরা হল।
জিওফ মার্শঃ
বিসিবি'র পছন্দের তালিকায় থাকা কোচদের মধ্যে অন্যতম হল সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার জিওফ মার্শ। ১৯৯৪ সালে ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন সাবেক এই অজি ব্যাটসম্যান। এরপরই কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেন মার্শ। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই দায়িত্ব পান স্টিভ ওয়াহ ও গ্লেন ম্যাকগ্রাদের। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারেরমত অজিদের একদিনের দলকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ান এই প্রতিভাবান কোচের কাঁধে।
কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই বাজিমাত করেন মার্শ। মাত্র তিনবছর অজি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েই জিতে নেয় ১৯৯৯-এর বিশ্বকাপ। মার্শের অধিনে বিশ্বকাপে টানা সাত ম্যাচ জিতে ১২ বছর পর দ্বিতীয়বারের মত অজিরা ঘরে তুলে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মর্যাদার এই শিরোপা। তবে নিজ দেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ৪ বছরের বেশি কোচিং করাতে পারেনি মার্শ।
তবে কোচিং থেকে সরে দাঁড়ায় নি সাবেক এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ২০০১ সালে যোগ দেন জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে। তার অধীনে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে তিন জয় তুলে নেয় স্ট্রিক-ফ্লাওয়ারের দলটি। তবে ২০০৪ সালে ব্যক্তিগত কারণে ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে দলের কোচ পদ থেকে সরে দাঁড়ান। মাঝখানে ৫ বছর কোন দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ না থাকলেও ২০০৯ সালে আবার ফিরেন কোচিংয়ে। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেন মার্শ।
এরপর ২০১১ সালে লঙ্কানদের কোচ হলেও দলের বাজে পারফরম্যান্সে একবছরের মাথায় আবার চাকরীচ্যুত হয় এই অজি কোচ। সবমিলিয়ে, ২৩ বছরের এই কোচিং ক্যারিয়ার বেশ উত্থান-পতনের সঙ্গে কাটিয়েছে ৫৮ বছর বয়সী মার্শ। তবে বিসিবি'র তালিকায় থাকা বিশ্বকাপ জয়ী এই কোচ বর্তমানে বেকার থাকলেও শেষ পর্যন্ত টাইগারদের দায়িত্ব পেলে কি করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ফিল সিমন্সঃ
জিওফ মার্শের সাথে টাইগারদের কোচ তালিকায় সমভাবে উচ্চারিত হচ্ছে ফিল সিমন্সের নাম। ২০০২ সালে ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে কোচিংয়ে আসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্স। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটা করেন জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলকে দিয়ে। ২০০৪ সালে জিওফ মার্শের স্থলাভিষিক্ত হন তখনকার তরুণ এই ক্যারিবিয়ান কোচ।
জিম্বাবুয়ের কোচিং করানোর কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল সিমন্সের জন্য। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের মত বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় অবসর নেওয়ায় টেষ্টে জিম্বাবুয়ের অস্তিত্ব রক্ষা করা প্রধান কাজ ছিল সিমন্সের। সেই জায়গায় সিমন্স খুব একটা সফল হয়নি। দুই বছরের মাথায় জিম্বাবুয়ের চাকরি থেকে অব্যহতি নেন এই ক্যারিবিয়ান। এর পরে যোগ দেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে। তার আমলে ২২৪ টি ম্যাচ খেলেছে আয়ারল্যান্ড।
তাতেই ১১ টি ট্রফি ঘরে তুলে নেয় দেশটি। তার অধীনে দলটিকে বাদ পড়তে হয়নি আইসিসি'র বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্ট থেকে। তবে সিমন্সের বিশেষত্ব ছিল ছোট দলের মাঝে লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করা। ফলাফল স্বরূপ ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তুলে ট্রেন্ট জনস্টনের দলটি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও সিমন্সের অধীনেই ইংল্যান্ডকে বধ করে উইলিয়াম পোটারফিল্ডের আয়ারল্যান্ড।
২০১৫ সালে আয়ারল্যান্ডের সাথে ৮ বছরের সু-সম্পর্কচ্ছেদ করে যোগ দেন নিজ দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তবে আয়ারল্যান্ডের পর সফলতা পেয়েছেন নিজ দেশের ক্রিকেটারদের কোচিং করিয়েও। ক্রিস গেইলদের প্রথমবার প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রথমবারের মত ২০১৬ সালে ঘরে তুলে নেয় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ।
শেষ কয়েকমাস আফগানদের ব্যাটিং উপদেষ্টা হিসেবে থাকলেও বর্তমানে বেকার আছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক কোচিং ক্যারিয়ারে বেশ সফলতা আছে এই কোচের। শেষপর্যন্ত তামিম সাকিবদের কোচ হলেও ৫৪ বছর বয়সী সিমন্স দেশের ক্রিকেটে কতটা উন্নতি সাধন করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।
রিচার্ড পাইবাসঃ
এর আগে ২০১২ সালে স্বল্পসময়ের জন্য টাগারদের কোচ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড পাইবাস। সেবার ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে তোলা প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল'র স্থলাভিষিক্ত হলেও এবার আবার চন্ডিকা হাথুরুসিংয়ের শূন্যতায় পুরনো পাইবাসকে নিয়ে আবার ভাবছে দেশের ক্রিকেট অভিভাবকরা।
ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটার কোন দেশের হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে নামা হয়নি। তবে মাত্র ৩২ বছর বয়সে এসেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মার্ক বাউচার ও মাখায়া এনটিনিদের কোচিংয়ের দায়িত্ব পায় তখনকার তরুণ এই কোচ। প্রথমবারের প্রশিক্ষণেই বাউচারদের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক একদিনের ঘরোয়া ক্রিকেটের ফাইনালে তোলেন এই কোচ।
এরপর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ওয়াসিম আকরামদের প্রধান কোচ হিসেবে ২ বছরের চুক্তিতে করেন পাইবাস। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেষ্ট সিরিজে হারায় মাত্র একমাসের মধ্যে চাকরি হারাতে হয় এই কোচকে। এরপর আবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আগের দলেই ফিরে যায় পাইবাস। পরবর্তীতে ২০০১ সালে পুনরায় পাকিস্তানের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেও অল্প কয়দিনের মাথায় নিরাপত্তার কারণে দ্বিতীয়বারের মত পাকিস্তানের চাকরি ছাড়েন তিনি।
তবে বারবার আকরাম-ওয়াকারদের চাকরি ছাড়লেও বিপদের দিনে দলটি যেন চেয়ে থাকে পাইবাসের দিকে। ২০০৩ এর বিশ্বকাপের আগে এই কোচের দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। কিন্তু বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় দলটি। এব???রও দলের বাজে পারফরম্যান্সে চাকরি বলিদান দিতে হয় পাইবাসকে। মাঝখানে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করালেও জাতীয় দলে আর দেখা যায়নি পাইবাসকে। দায়িত্বে থাকা দলকে বিশ্বকাপ কিংবা খুব আহামরি কিছু না দিতে পারলেও কোচ হিসেবে নতুনদের তুলে আনার ক্ষেত্রে ৫৩ বছর বয়সী পাইবাসের যেন জুড়ি নেই।
এদিকে, ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের প্রধান কোচ করা হয়। তার অধীনে টাইগাররা ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১২ টিতে জয় পায়। কিন্তু আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে বিসিবি'র সাথে মতের অমিল হওয়াতে চার মাসের বেশি টিকতে পারেনি এই কোচ। সবমিলিয়ে, যদি শেষপর্যন্ত পুরনো পাইবাসকে টাইগারদের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাকিব-তামিমদের পাশাপাশি নতুনদের নিয়ে দেশের ক্রিকেটকে কতটা এগিয়ে নিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।