রাদারফোর্ডের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের দেয়া বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে শুরু করেছিলেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইস। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে অষ্টম ওভার পর্যন্ত। তানজিম হাসান সাকিব এলবিডব্লিউ করে ফেরান ব্র্যান্ডন কিংকে। পরের ওভারে প্রথম বলে আরেক ক্যারিবীয় ওপেনার লুইসকে এলবিডব্লিউ বানিয়ে ফেরান নাহিদ রানা। এরপর পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশকে আর কোনো সুযোগ দেননি কেসি কার্টি ও শাই হোপ। দুজনে মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস টানতে থাকেন। যদিও তাদের দলীয় একশ হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে ব্যাক থ্রু এনে দেন রিশাদ হোসেন।
এই টাইগার স্পিনারের বলে মিড উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়েছেন কার্টি। তাতেই হোপের সঙ্গে তার জুটি ভেঙেছে ৬৭ রানে। অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখে হোপ ৬০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। তবে হোপ ও রাদারফোর্ড আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে সেই চাপ কমিয়েছেন। নাহিদ রানাকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে হাফ ৪৭ বলে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান রাদারফোর্ড।
সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন হোপ। তাকে নিজের শিকার বানিয়েছেন মিরাজ। ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোপ। ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৮৮ বলে ৮৬ রানে ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে। এর ফলে রাদারফোর্ডের সঙ্গে তার ৯৯ রানের জুটি ভাঙে। হোপ ফিরে গেলেও বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা করেছেন রাদারফোর্ড ও জাস্টিন গ্রিভস।
৪৭তম ওভারে সৌম্য সরকারের বলে স্কয়ারে ঠেলে দুই রান নিয়েছিলেন রাদারফোর্ড। এরপর ওভার থ্রোতে আরও চার রান উপহার পেয়ে ৭৭ বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন রাদারফোর্ড। সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর সৌম্যকে টানা দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। যদিও অতিআক্রমণাত্মক হতে গিয়ে চতুর্থ বলে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে নাহিদ রানাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৮০ বলে ১১৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। ৮টি ছক্কার সঙ্গে এই ইনিংসে রাদারফোর্ড মেরেছেন ৭টি চারও। এরপর রস্টন চেজ ও গ্রিভস মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
এর আগে এই ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে আলজারি জোসেফের বিপক্ষে একটু দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। তবে পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে জেইডেন সিলসের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারতে ভুল করেননি তানজিদ। পরবর্তীতে প্রতি ওভারেই একটি করে বাউন্ডারি বের করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ভালো শুরু পেলেও ইনিংসের পঞ্চম ওভারে এসেই উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশকে।
আলজারির ওভারের প্রথম চার বলে সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছিল দুটি চার। তবে আগ্রাসী হয়ে উঠতে শুরু করা সৌম্যকে টিকতে দেননি ডানহাতি এই পেসার। আলজারির অফ স্টাম্পের একটু বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটকিপার শাই হোপের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা সৌম্য। নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় তিনে ব্যাটিং করতে এসেছেন লিটন দাস।
চোটের কারণে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়ক না থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তিনে নেমেছিলেন লিটন দাস। তবে সুযোগটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। আলজারি জোসেফের বিপক্ষে অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বলে বারবার খোঁচা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের এই উইকেটকিপার।
পরের ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে লিটনের বিপক্ষে সেই অফ স্টাম্পের একটু বাইরেই যেন ফাঁদ পাতলেন রোমারিও শেফার্ড। ডানহাতি পেসারের বেরিয়ে যাওয়া ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে এজ হয়ে লিটন ক্যাচ দিয়েছেন হোপের গ্লাভসে। লিটন আউট হয়েছেন মাত্র ২ রানে। তানজিদকে সঙ্গ দিতে চারে ব্যাটিং করতে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেফার্ডের বিপক্ষে খেলা নিজের দ্বিতীয় বলেই ফিরতে পারতেন তিনি। রিভিউ নিয়ে অবশ্য বেঁচে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক।
শেফার্ডের মিডল স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাটে বলে করতে না পারায় তা আঘাত করে মিরাজের প্যাডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা আবেদন করতেই আউট দেন আম্পায়ার। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন মিরাজ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যেতো। ফলে বেঁচে যান মিরাজ। ব্যক্তিগত এক রানেও ফিরতে পারতেন তিনি। শেফার্ডের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে থার্ডম্যান দিয়ে আপার কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে সীমানায় দাঁড়িয়ে সেটা লুফে নিতে পারেননি কেসি কার্টি।
লিটন ফেরার পর দু’বার জীবন পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে টেনেছেন তানজিদ। এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। সবশেষ আফগানিস্তান সিরিজে ভালো করতে না পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। রস্টন চেজের বলে লং অনে ঠেলে দিয়ে ৪৬ বলে বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তানজিদ। ১৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এটি তাঁর তৃতীয় পঞ্চাশ। তরুণ এই ওপেনারের হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশও একশ ছুঁয়ে ফেলে।
দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তানজিদ। তবে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬০ রানের ইনিংস খেলা তানজিদকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্বস্তি দিয়েছেন আলজারি জোসেফ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে থাকা চেজকে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন। তানজিদের বিদায়ে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি ভেঙেছে। নতুন ব্যাটার হিসেবে উইকেটে এসেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
রোমারিও শেফার্ডের শর্ট বল পুল করে ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। দ্রুত তানজিদ ও লিটনের উইকেট হারালেও মিরাজ ও আফিফ মিলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড সচল রেখেছিলেন। তবে আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন আফিফ। শেফার্ডের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জেইডেন সিলসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ২৮ রান করা আফিফ। আফিফ মিরাজের জুটি ভেঙেছে ৫৪ রানে। এরপর মিরাজও বেশিদূর এগোতে পারেননি ব্যক্তিগত ৭৪ রানে তিনি সিলসের বলে টপ এজ হয়ে শেফার্ডকে ক্যাচ দেন মিড অফে।
মিরাজ ফিরে গেলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী মিলে বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছেন শেষ দশ ওভারে। দুজনের ৯৬ রানের জুটিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৪ রান। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই শেফার্ডকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে মিড অনে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে ৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান। জাকের আলীও পেতে পারতেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। তিনি ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ডিপে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যক্তিগত ৪৮ রানে। সহজ ক্যাচ নিতে ভুল করেননি ব্র্যান্ডন কিং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ২৯৪/৬ (৫০ ওভার) (সৌম্য ১৯, তানজিদ ৬০, লিটন ২, আফিফ ২৮, মিরাজ ৭৪, জাকের ৪৮, মাহমুদউল্লাহ ৫০*)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ২৯৫/৫ (৪৭.৪ ওভার) (লুইস ১৬, কার্টি ২১, হোপ ৮৬, রাদারফোর্ড ১১৩; সৌম্য ১/২৪, রিশাদ ১/৪৯)