নেদারল্যান্ডসের ধাক্কায় গঙ্গায় ডুবল বাংলাদেশের তরী

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
জাতীয় দলের ছায়া কোচিং প্যানেল চান সুজন
৬ ঘন্টা আগে
কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। তবুও টানা হারের পর ক্লান্ত সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পাওয়ার। ডাচদের বিপক্ষে জয় না পাওয়ার কোন কারণও ছিল না বাংলাদেশের। সব দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও টাইগার সমর্থকদের সব আশা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। টানা চার হারে প্রায় ডুবতে থাকা বাংলাদেশের তরী শেষ পর্যন্ত ডুবে গেল কলকাতার গঙ্গায়, ডাচদের ধাক্কায়। স্কট এডওয়ার্ডসের দলকে ২২৯ রানে আটকে দিলেও সাকিব আল হাসান, লিটন দাসদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ হারল ৮৭ রানে। তাতে করে সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া টাইগারদের থামতে হচ্ছে গ্রুপ পর্বেই।
২৩০ রান তাড়ায় ভালো শুরুর প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার মিলে সাবধানী শুরুর চেষ্টাও করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আরিয়ান দত্তের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে পারেননি লিটন দাস। তবে বল তার গ্লাভসে লেগে উপরে উঠে গেলে সহজেই তা লুফে নেন উইকেটকিপার স্কট এডওয়ার্ডস। পরের ওভারে আউট হয়েছেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
লোগান ভ্যান বিকের গুড লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে এডওয়ার্ডসের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার আউট হয়েছেন ১৫ রানে। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর ডাচ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটার পেরেছিলেনও খানিকটা। তবে নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে আবারও চাপে বাংলাদেশ।
পল ভ্যান মেকেরিনের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ওপেন ব্যাটে খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন শান্ত। ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা এই ব্যাটার ডাচদের বিপক্ষে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি। শান্তর মতো ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ের অফ ফর্ম কাটাতে নিজের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে ঢাকা ফিরেছিলেন তিনি। যেখানে নিজের শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে তিন ঘণ্টা করে দুদিন ব্যাটিং সেশন করেছিলেন।
যদিও ডাচদের বিপক্ষে সেই টোটকা কাজে আসেনি একটুও। ভ্যান মেকেরিনের লাফিয়ে উঠা লেংথ ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে এডওয়ার্ডসের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ৫ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ক। সাকিবের বিদায়ের পর আউট হয়েছেন এক প্রান্ত আগলে রাখা মিরাজও। বাস ডি লিডের বলের উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৩৫ রান করা এই ব্যাটার। টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। ভ্যান মেকেরিনের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর খানিকটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন শেখ মেহেদী ও মাহমুদউল্লাহ। তবে রান আউটে কাটা পড়ে হতাশায় পুড়তে হয় মেহেদীকে। দ্রুত রান নিতে গিয়ে ডি লিডের দারুণ থ্রোতে ফিরে যেতে হয়েছে ১৭ রান করা এই ব্যাটারকে। মেহেদী আউট হওয়ার পর চাপে পড়ে রান বের করতে গিয়ে ফিরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। ডি লিডের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে আউট হয়েছেন ২০ রান করা এই ব্যাটার। শেষ দিকে মুস্তাফিজের ২০ এবং তাসকিনের ১১ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে।

এর আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ৩৩ বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পায়। নিজের প্রথম ওভারেই বিক্রমজিত সিংকে ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিন রান করা বিক্রমজিত।
নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পান শরিফুল ইসলাম। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ম্যাক্স ও ডাউড'কে ফেরান এই পেসার। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরে লাফিয়ে ওঠা বল ও'ডাউডের ব্যাটে লেগে প্রথম স্লিপে তানজিদ হাসান তামিমের মুঠোয় চলে যায়। শূন্য রানে ফিরেন ডাচ এই ওপেনার।
চার রানে দুই উইকেট পড়ার পর চাপে পড়ে ডাচরা। তারপর অবশ্য ওয়েসলি ব্যারেসি এবং কলিন অ্যাকারম্যানের ৫৯ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে তারা। অবশ্য বিপজ্জনক হওয়ার আগেই ব্যারেসিকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এই পেসারের বলে লং অফে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ব্যারেসি। যদিও মিস টাইমিং হওয়ায় উইকেটের উপরেই ক্যাচ উঠে যায়। যা লুফে নেন সাকিব। ফলে ৪১ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে তার। পরের ওভারে সাকিব নিজেই ফেরান অ্যাকারম্যানকে। ১৫ রান করা অ্যাকারম্যান চেয়েছিলেন সাকিবকে সুইপ করতে। যদিও ফাইন লেগে ক্যাচ উঠে যায়, তা লুফে নেন মুস্তাফিজ। ফিরতে হয় অ্যাকারম্যানকে।
৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানো ডাচদের পথ দেখাচ্ছিলেন বাস ডি লিড ও এডওয়ার্ডস। এই দুজনে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছেন ৪৪ রান। তাদের জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে অফ সাইডে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ডি লিড। যদিও শুরুতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। সাকিব রিভিউ নিলে দেখা যায় বল স্পষ্ট এজ হয়েছে। ফলে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়েছে ৩২ বলে ১৭ রান করা ডি লিডকে।
১০৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানো ডাচদের ইনিংস এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেন অধিনায়ক এডওয়ার্ডস। তার সঙ্গে যুক্ত হন এঙ্গেলব্রেচ। এই জুটিতে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এডওয়ার্ডস। সাকিব, শরিফুল, তাসকিনদের বলে সিঙ্গেলস-ডাবলসের পশরা সাজিয়ে বসেন এই দুজন, জুটি গড়েন ৭৮ রানের।
এই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার ওয়াইড ইয়র্কার বুঝতেই পারেননি এডওয়ার্ডস। বল তুলে দিলে সেটা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের তালুবন্দি হয়। ফেরার আগে ৮৯ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন ডাচ অধিনায়ক।
এর তিন বল পর নতুন ওভারে ফিরে যান এঙ্গেলব্রেচও। ৬১ বলে ৩৫ রান করা এঙ্গেলব্রেচকে লেগ বিফোর উইকেটে ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন শেখ মেহেদী। শেষদিকে লোগান ভ্যান উইক ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ক্যামিও খেললে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় ডাচরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
নেদারল্যান্ডস- ২২৯/১০ (৫০ ওভার) (এডওয়ার্ডস ৬৮, ব্যারেসি ৪১; মুস্তাফিজ ২/৩৬)
বাংলাদেশ- ১৪২/১০ (৪২.১ ওভার) (তানজিদ ১৫, শান্ত ৯, মিরাজ ৩৫, সাকিব ৫, মেহেদী ১৭, মাহমুদউল্লাহ ২০, মুস্তাফিজ ২০)