promotional_ad

যেতে হবে বহুদূর...

সংগৃহীত
promotional_ad

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||


জীবন কাকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে তা বলা মুশকিল... সামিত সাদমান মির্জার কথাই ধরুন, তিনি কি কখনও ভেবেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শখের বসে ধারাভাষ্য দিতে দিতে একদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচে শোনা যাবে তার কন্ঠ? কিংবা হাজার পথ পাড়ি দিয়ে শত বাধা পার করে আসা সমন্বয় ঘোষ কি কখনও চিন্তা করেছিলেন যে ইংল্যান্ডে বসে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে ধারাভাষ্য দেবেন?


স্বপ্নের পরিধি আকাশ ছুঁলেও এক সময় এগুলো হয়তো ছিল শুধু তাদের কল্পনাই। সেই কল্পনা বাস্তব হয়ে গেলে কার না ভালো লাগে। একটা সময় পর্যন্ত ধারাভাষ্য কক্ষে আথার আলী খান বাংলাদেশের হয়ে লড়াই করেছেন। আইসিসির আসরগুলোতে দেশের সম্মান আরও উচ্চতায় নিতে প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন।


আইসিসি টুর্নামেন্টে না গেলেও ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সিরিজগুলোতে এক সময় পর্যন্ত আথার সঙ্গী হিসেবে নিয়মিত পেয়েছেন শামীম চৌধুরীকে। আলোচনা-সমালোচনা ছাপিয়ে এদের দুজনের কন্ঠই শুনেছে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে থাকা দর্শকেরা। মাঝে মেহরাব হোসেন জুনিয়র-শাহরিয়ার নাফিসদের মত সাবেক ক্রিকেটাররাও মাঝে মাঝে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। তবে সেই ধারা অব্যাহত রাখেননি বা রাখতে পারেননি।


সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে চলেছে। কিন্তু ধারাভাষ্য কক্ষে এতোদিন পর্যন্ত শুধু ছিলেন আথার-শামীমরাই। কিন্তু এ চিত্র এক পাল্টাতে শুরু করেছে। সমন্বয় ঘোষ-মাজহার উদ্দিন অমিরা এখন হাল ধরছেন দেশের হয়ে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও ধারাভাষ্যে এসেছে নতুন মুখ। এমনকি ভারত-বাংলাদেশ নারীদের সিরিজেও অভিষেক হয়েছে দুই নতুন ধারাভাষ্যকারের।


যাদের কণ্ঠ শুনে অভ্যস্ত, তাদের ছাপিয়ে এখন নতুনদের গলার আওয়াজ শোনার দিন চলে এসেছে। সাদমান মির্জা, শাহ্‌নূর রাব্বি ও সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামিদের নিয়ে ভবিষ্যতের ভাবনা গড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুধু তাই নয় নারীদের ক্রিকেটের জন্য প্রমিলা ধারাভাষ্যকার খোঁজার রাস্তাও বের করতে নামছে বোর্ড।


এ প্রসঙ্গে বিসিবির এক কর্মকর্তা ক্রিকফ্রঞ্জিকে বলেন, 'দেখুন এক সময় তো ধারাভাষ্য কক্ষে শুধু শামীম ভাই ও আথার ভাইরা ছিলেন। এখন তো খেলা বাড়ছে... দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলা চলছে। রাজশাহীতে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট চলছে, মিরপুরে নারীদের সিরিজ চলছে। আবার আমাদের আন্তর্জাতিক খেলাও চলছে... ইমার্জিং এশিয়া কাপ হচ্ছে। এই অবস্থায় তো ধারাভাষ্য কক্ষে নতুনদের প্রয়োজন।'



promotional_ad

'তাই শাহ্‌নূর, সামি এবং সামিতকে নিয়ে আসা। আমরা অনেক কিছু দেখেই তাদের নিয়োগ দিয়েছি। অনেকে শুধু এই ম্যাচের জন্য, আবার অনেকে পুরো সিরিজ করবে। বিসিবি খুব করে চাইছে ধারাভাষ্য কক্ষে নতুনরা আসুক, উৎসাহিত হোক। শুধু তাই না, আমরা চাই নারীরাও যেন ক্রিকেটের পাশাপাশি ধারাভাষ্যে আগ্রহী হয়।'


ধারাভাষ্যকক্ষে শামীম-আথারদের নিয়মিত সঙ্গী হয়ে ওঠা মাজহার এই মুহূর্তে আছেন সিলেটে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি তার আরেকটি পরিচয়ও আছে। তিনি একজন ক্রীড়া সাংবাদিক এবং উপস্থাপক। কিন্তু তার ধারাভাষ্যে আসার গল্পটা আরও ৬ বছর পুরনো।


ছোট থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা মাজহার চোটের কারণে দেশের হয়ে খেলতে পারেননি। সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে বেছে নিলেও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে ধারাভাষ্য কক্ষের দরজা খোলে তার জন্য। নতুন যাত্রার শুরুটা সে সময় হলেও দ্বিতীয় সুযোগটা এই পেশায় তিনি পান ২০২০ সালের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে।


এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে উন্নত করে এখন নিয়মিতই ধারাভাষ্য দিয়ে যাচ্ছেন মাজহার। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে তিনি বলেন, 'আমি ২০১৭তে প্রথমবার ধারাভাষ্য দেই। কিন্তু সে সময় কোন কিছু তেমন বুঝে উঠতে পারিনি। নতুন ছিলাম, আর তেমন কোন ধারণা ছিল না কিভাবে কি করতে হয়। এরপর ২০২০ এ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সুযোগ আসে, মাঝের সময়টাই নিজেকে নিয়ে কাজ করেছিলাম।'


'ধীরে ধীরে কিভাবে কি করতে হয় তা বুঝতে শিখলাম। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি করে আজ এই পর্যায়ে। তবে কাজটাকে যতটা সহজ ভেবেছিলাম ততটা না। অনেক কিছু আছে এখানে যা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না, তাই কাছ থেকে যখন দেখলাম মনে হল কোন কিছুই সহজ না। এখানে অনেক উন্নতির প্রয়োজন, আমারও অনেক কিছুটা উন্নতি করতে হবে।'


মাজহার উদ্দিনের মত ধারাভাষ্য কক্ষে এখন পরিচিত মুখ সমন্বয় ঘোষ। তবে তার যাত্রাটাও সহজ ছিল না। নানা চড়াই উত্রাই পাড়ি দিয়ে আজ এতোদূর এসেছেন। ধারাভাষ্য দিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ সফরেও। আয়ারল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজ চলাকালীন তার সঙ্গে আইসিসি থেকেও যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তা বেশিদূর আগায়নি এখনও।


সমন্বয় অবশ্য আশাবাদী আজ না হোক একদিন তিনি আইসিসিতে বাংলাদেশের হয়ে লড়বেন। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে তিনি বলেন, 'আয়ারল্যান্ড সিরিজ চলাকালীন কয়েকজনের সঙ্গে আইসিসিতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু তা এখনও আগায়নি। আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন কিভাবে উন্নতি করা যায়, নিজেকে ভেঙে গড়া যায়। উন্নতির অনেক জায়গা আছে, তবে বিশ্বাস করি একদিন আইসিসি ইভেন্টে আমি ধারাভাষ্য দেব।'



বাংলাদেশ ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার যুবাদের সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ধারাভাষ্যে আছেন শাহ্‌নূর রাব্বানী। পেশায় সাংবাদিক হলেও তিনি নতুন পেশায় কাজটা ভালোভাবেই করছেন। অন্যদিকে সৈয়দ আবিদ হোসেন সামি পেশায় ক্রিকেট বিশ্লেষক ও উপস্থাপক। তিনি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন ভারত-বাংলাদেশ নারীদের সিরিজে।


এই দুজনের সঙ্গে আছেন আরেকজন। যিনি একেবারেই নতুন। সামিত সাদমান মির্জার এতোদূর আসার গল্পটা একটু ভিন্ন। শখের বসে টেলিভিশন দেখে ধারাভাষ্য দিতে দিতে আজ তিনি আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্য কক্ষে। বন্ধুর অনুপ্রেরণা ও ব্রেন্ডন ম্যাকলামকে দিয়ে ধারাভাষ্যের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল সামিতের। ব্যাংকে চাকরি করলেও ইংরেজিদের পারদর্শী হওয়ায় এই সিরিজে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।


প্রথম দিন ধারাভাষ্য কক্ষে গলা ফাটিয়েছেন। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে শুনেয়েছেন নিজের যাত্রার গল্প। সামিত বলেন, 'আমি আসলে ভাবিনি আমি আজ এখানে থাকব। ২০২০ সালে আমার বন্ধু আমাকে একটা ট্রাইপড এনে দেয়, বলে তুই নিজে নিজে ধারাভাষ্য দিবি। ফেসবুকে দিবি, তোকে দিয়ে অনেক কিছু হবে। ওর থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি নিউজিল্যান্ডের এক ম্যাচে টিভির সাউন্ড কমিয়ে ধারাভাষ্য দেই।'


'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো সাড়া পাই। এরপর থেকে নিয়মিতই করতে থাকি। ধীরে ধীরে কিভাবে উন্নতি করা যায় এ রাস্তা খুজতে থাকি, তো আমি আজ এখানে। কখনও ভাবিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধারাভাষ্য দেব। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া, বিসিবিকে ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। আমি শুধু এই ম্যাচেই আছি, আশা করছি সামনে আরও অনেক সুযোগ আসবে।'


আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে মাঠে প্রতিনিধিত্ব করাটা যেমন গর্বের। তেমনই ধারাভাষ্য কক্ষে বহু বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছেন আথার, শামীম বা মাজহাররা। কিন্তু শাহ্‌নূর-সামিতদের এভাবে ধারাভাষ্যে আসা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball