মাঠে মাশরাফিদের দাপট, কাউন্টারে ‘সোল্ড আউট’

ছবি: সংগৃহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||
‘আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না’
১৩ মার্চ ২৫
দুপুর তখন কেবলই দুটো পেরিয়েছে, কাউন্টারের সামনে তখনও লাইনে দাঁড়িয়ে অসংখ্য ক্রীড়া সমর্থক। গলায় সাংবাদিকের কার্ড থাকায় একেবারে সামনে যেতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে ২৭ জানুয়ারির টিকেট চাইতেই ভেতর থেকে একজন বলে বসলেন, 'ভাই সোল্ড আউট।' আলোচনা বাড়াতে শেষ পর্যন্ত কাউন্টারে থাকা টিকেট বিক্রেতা বলে বসলেন, ‘ভেতরে আসুন, টিকেট পেলে টাকা ছাড়াই নিয়ে যেতে পারবেন।’
তার এমন আত্মবিশ্বাসী কথা শুনে বুঝতে বাকি রইলো না টিকেটের জন্য কতটা হাহাকার করছে সিলেটের মানুষ। সকাল ৯ টায় মাঠে ঢুকতে চোখে পড়েছিল বেশ লম্বা লাইন। সেটা পর্যন্ত টিকে না রইলেও বিকেল পাঁচটা নাগাদও কাউন্টারের সামনে দেখে মিলেছে সমর্থকদের ভিড়। তবে তখন কেবলই ২৮ জানুয়ারির টিকেট বিক্রি চলছিল। বিপিএলে যখন দর্শকের হাহাকার তখন সিলেটের এমন পরিস্থিতি নিশ্চয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) জন্য স্বস্তিদায়ক। কারণ বিপিএলে চাহিদা অনুযায়ী দর্শকের দেখা মেলে না।
একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। ঢাকার দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে গ্যালারিতে খুব বেশি দর্শকের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে মাঠের বাইরে সমালোচনা ছাপিয়ে ২২ গজের লড়াই জমে উঠায় স্টেডিয়ামমুখী হতে শুরু করেছেন সমর্থকরা। ২০১৯ বিপিএলের কথা মনে আছে নিশ্চয়? সেবার বিপিএলে দর্শক টানতে ঢাকায় টানা দুদিন মাইকিংও করেছিল বিসিবি। তাতেও ফায়দা হয়নি। সিলেটেও দর্শকরা বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। তবে সিলেটে হঠাৎ কেন এমন পরিবর্তন?

দর্শকদের এমন আগ্রহের একটা কারণ হতে পারে। ২০১৯ সালের পর এবারই প্রথম বিপিএলে সিলেটের মাঠে দর্শক ফিরছে। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ বিপিএল মাঠেই গড়ায়। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু বিপিএল হলেও মাঠে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পারফরম্যান্স। বিপিএলের বেশিরভাগ আসরে সিলেটের দল থাকলেও কখনই প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি তারা। নিকোলাস পুরান, ডেভিড ওয়ার্নারদের মতো তারকারা খেলে গেলেও ভাগ্য বদলায়নি দলটি।
বিপিএলে শাস্তি পেয়ে ডিপিএলে ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ সাকিব
৩১ জানুয়ারি ২৫
সেই সঙ্গে প্রতিবার দলের নাম পরিবর্তনে হয়তো খানিকটা বিরক্ত সিলেটবাসী। তবে বিভাগীয় শহরটির মানুষের পুরোনো সব গ্লানি হয়তো মুছতে শুরু করেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের পারফরম্যান্স। বিপিএলে কখনও ফাইনাল খেলতে না পারা সিলেট এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিরোপা জেতার। তরুণদের সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে গড়া দলটি টেক্কা দিচ্ছে সবাইকে। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে ৬ জয় নিয়ে এখন টেবিল টপার চায়ের দেশ নামে পরিচিত শহরটি।
মাশরাফি-নাজমুল শান্তদের এমন পারফরম্যান্সে তাই সিলেটের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে টিকেটের জন্য। গ্যালারিতে বসে বোধহয় এবারই প্রথম এতটা আনন্দ-উল্লাস আর স্বস্তি নিয়ে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন এই শহরের সমর্থকেরা। সেটার জন্যই বোধহয় সকাল নয়টা থেকে শুরু হওয়া লাইন টিকেছিল বিকেল পাঁচটা অবদি। টিকেটের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারে। ভেতর থেকে সোল্ড আউট বলা হলেও অনেকের ধারণা, দর্শক নয় টিকেট দেয়া হয়েছে কালোবাজারিদের হাতে।
টিকেট না পেয়ে আহনাফ আব্দুল্লাহ নামের একজন সমর্থক ক্রিকফ্রেঞ্জিকে বলেন, ‘আমরা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেছিলাম কাল বন্ধের দিন তাই নিজের শহরের খেলা দেখবো আর মাশরাফি-মুশফিকদের জন্য গলা ফাঁটাবো। কিন্তু টিকেটই পেলাম না। কাউন্টারে গেলে তারা বলছে সব বিক্রি হয়ে গেছে। তবে আমাদের মনে হয় তারা কিছু টিকেট কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিয়েছে।’
এদিকে নানা সমালোচনার মাঝে চলতে থাকা বিপিএল বোধহয় সিলেটে ফিরে খানিকটা প্রাণ ফিরে পাবে। বিসিবিও নিশ্চয় এমন কিছুর স্বপ্নই বুনছে গেল কিছুদিন হলো। তবে বিপিএলে প্রাণ ফিরিয়ে আনায় সবকিছুর জন্য মাশরাফির সিলেটকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে বিসিবি।