promotional_ad

আবার সেই ভুতের পদশব্দ!

ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ
promotional_ad

|| দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ||


বিপিএল নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতে পারে। 


এখনও দর্শক টানতে পারছে না এবারের বিপিএল। অনেক কিছুই এখনও অগোছালো আছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মজাটা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এসব সমালোচনার মধ্যেও একটা জিনিস মানতে হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ভুতটা অন্তত তাড়াতে পেরেছিলো। 


গত কয়েক বছর ধরে বিপিএলে অন্তত সেই ভুতের নাম শোনা যায়নি-ফিক্সিং ভুত। কিন্তু আবার সেই ভুতের পায়ের শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে। 


চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সিলেট থান্ডার্সের বোলার ক্রিসমাস সান্তোকি একই ওভারে বিশাল একটি ওয়াইড দিয়েছেন এবং এরপর বিষ্ময়কর ব্যবধানে একটি পায়ের নো বল করেছেন। তার এই পায়ের নো বলটার সাথে ২০১০ সালে মোহাম্মদ আমিরের করা কুখ্যাত সেই নো বলের তুলনা করা হচ্ছে। আর ছবি বলছে, সান্তোকি এখানে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। 



এই ধরণের বিশাল ব্যবধানে ‘নো-বল’ করলে সন্দেহ তৈরী হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। সাধারণত, স্পট ফিক্সিংয়ের ক্ষেত্রে এমন কাণ্ড ঘটে। আগে থেকে ঠিক করা থাকে, এই বলটা নো-বল করা হবে। আর সেটা নিশ্চিত করতে বোলার কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখেন না; করেন দীর্ঘ ব্যবধানের নো বল।



promotional_ad

ফলে সেই নো-বলের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সন্দেহটা ডানা মেলেছে। ফেসবুক-টুইটার তো বটেই, সংবাদ মাধ্যমেও সন্দেহ করা হচ্ছে যে, সান্তোকি কী তাহলে ইচ্ছে করে নো-বল করলেন?


এই সন্দেহ করাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বিসিবি পরিচালক এবং সিলেট দলের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা তানজিল চৌধুরী স্বয়ং। তিনি কালের কণ্ঠ পত্রিকাকে বলেছেন, তারও মনে হচ্ছে, এই নো-বলটা সন্দেহজনক। তানজিল চৌধুরীর অভিযোগ এখানেই থেমে গেলে কথা ছিলো। তিনি এরপর অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এই সিলেট দলটার স্পন্সর জিভ্যানি ফুটওয়ারের কর্মকর্তাদের দিকেও। তিনি বলেছেন, সান্তোকিকে এবং এরকম মানের কিছু খেলোয়াড়কে জোর করে দলে কেনার ব্যাপারটাই তার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। আর এটা নিয়ে তিনি আগেই বিসিবির কাছে লিখিতভাবে নিজের সন্দেহের কথা বলেছেন। 


সন্তোকির নো-বল নিয়ে বলতে গিয়ে তানজিল চৌধুরী বলছিলেন,‘সান্টোকির মতো কিছু কিছু খেলোয়াড়কে স্পন্সররাই নিয়ে এসেছে। এজেন্টদের সঙ্গে ওরাই যোগাযোগ করেছে। সান্টোকি এমন একটি নো বল দিয়েছে, যেটি খুবই সন্দেহজনক। আমি স্পন্সরদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা প্রথম একাদশ গড়া নিয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেছেন কি না। ওনারা বলেছেন ‘না’। এখন টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। জানতে হবে সান্টোকিকে খেলানোর বিষয়ে কেউ তাদের প্রভাবিত করেছে কি না। কারণ এই ছেলেটি তো মনে হচ্ছে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত।’


এখন তানজিল চৌধুরীর এই অভিযোগ সত্যি হলে, সেটা বিপিএলের জন্য নতুন করে মারাত্মক একটা ধাক্কা হবে। 


বিপিএল একবার এই ধাক্কা হজম করেছে। ২০১৩ সালে এরকম এক ফিক্সিং ধাক্কায় কেঁপে উঠেছিলো বিপিএল।


২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচগুলোর দিকে চোখ রাখার জন্য বিসিবি ও আইসিসির মধ্যে এক চুক্তি হয়। আর সেই চুক্তির ফলে আইসিসির দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু) প্রতিটি ম্যাচে তদন্ত করে ঢাকা গ্ল্যাডিয়ের্সের কমপক্ষে দুটি ম্যাচ সন্দেহজনক বলে রায় দিয়েছিলো। এরপর অধিকতর তদন্তশেষে চাঞ্চল্যকর ভাবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের অন্যতম সেরা তারকা মোহাম্মদ আশরাফুলসহ কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম বেরিয়ে আসে। 


এরপর দীর্ঘ গুঞ্জনের পর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরেই আইসিসি ও বিসিবি সংবাদ সম্মেলন করে বলে ৯ জন খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত।



এরপর সে বছরই ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রশীদকে ডিসিপ্লিনারি কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত করে বিসিবি। পরে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন কমিটির বাকি ১০ সদস্যকে। এরপর ১০ নভেম্বর ওই ডিসিপ্লিনারি কমিটি সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য ছিলেন আজমালুল হোসেন কিউসি এবং সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাশেম।


কয়েক দফা শুনানির পর ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক রায় ঘোষণা করেন সেই ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের দায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটির গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পরে সে শাস্তি অবশ্য কমে আসে। এ ছাড়াও শাস্তি পেয়েছিলেন কয়েক জন। 


বর্তমান বিসিবি সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন, বিপিএলকে শুদ্ধ না করে আর এই খেলা মাঠে গড়াবেন না। এই কথাটা তিনি রেখেছিলেন। বিপিএলে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে তবে এই খেলাটিকে আবার মাঠে ফিরিয়েছিলেন। অনেক রকম দুর্বলতা থাকলেও এরপর থেকে বিপিএলে আর কখনো ফিক্সিংয়ের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। 


পৃথিবীর প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগের বিপক্ষে অভিযোগ হচ্ছে, কমবেশী স্পট ফিক্সিং হয়। সেখানে বিপিএলের এই কয় বছর ধরে নিষ্কলুষ থাকা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সেই ব্যাপারটায় আবারও একটা কালির ছিটে পড়ার ভয় পাওয়া যাচ্ছে। 


আমরা আশা করি, তানজিল চৌধুরীর বক্তব্য ও সেদিন ম্যাচের ফুটেজ আমলে নিয়ে বিসিবি দ্রুত এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করবেন। যদি কেউ দোষী থেকে থাকেন, নিশ্চয়ই তাদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেই সাথে এই ফিক্সিংয়ের ভুতকে অন্তত বাংলাদেশের সীমানা থেকে আরেকবার দূর করে দিতে হবে। 


আমাদের চিয়ার লিডার নাচা জাকজমকপূর্ন বিপিএলের দরকার নেই। আমাদের বহু তারকা দরকার নেই। আমরা একটা নিষ্কলুষ বিপিএল চাই। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball