promotional_ad

স্বপ্নের পথে হুইল চেয়ারও বাধা নয়

ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি
promotional_ad

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||


শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের কলার উঁচু করে চলেছে হুইল চেয়ার ক্রিকেট দল। মোহাম্মদ মহসিনের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ৫টি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ২টিতে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ হুইল চেয়ার ক্রিকেট দল। বাকি তিনটিতে রানার্স আপ হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন মহসিন-নাহিয়ানরা।


২০১০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা দলটি বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছে। পুরুষদের ক্রিকেটের পাশাপাশি নারীদের হুইল চেয়ার ক্রিকেট দল গঠন করা হয়েছে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় হুইল চেয়ার বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার প্রত্যয় রাখছে দলটি।


হুইল চেয়ার দল গঠন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বড় ভূমিকা রেখেছে। ফেসবুকের মাধ্যমে দলের বাকি খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করেছেন অধিনায়ক মহসিন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব তথ্য দেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।


বিসিবির কাছ থেকে এদিন উপহার হিসেবে ২১টি স্পোর্টস হুইল চেয়ার পেয়েছে মোহাম্মদ মহসিনের দল। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরই) আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মঙ্গলবার বিকেলে মহসিন ও তাঁর সতীর্থদের কাছে হুইলচেয়ার বুঝিয়ে দেন।


নতুন হুইল চেয়ার নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ভারতের উত্তরখন্ডে চার জাতির একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছে মহসিনের দল। ২০-২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এই  টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, আফগানিস্তান ও নেপাল।



promotional_ad

হুইল চেয়ার পাওয়ার আগে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে মহমিন নিজেদের এই যাত্রার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার যাত্রা শুরু ২০১০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে। আমি সেখানে একটা ছবি পোস্ট করি। সেখান থেকে লোকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী দল আছে কিনা। আমি নিজেও বন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম, সেখান থেকেই আরকি এই যাত্রাটা শুরু। ২০১৪ সালে ভারতে একটা দল নিয়ে যাই আমরা। সেখানে তাজমহল ট্রফি জিতে আসি। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সংবর্ধনা দেন। এখান থেকেই আমাদের উন্নতির যাত্রা শুরু।’ 


‘২০০ হুইল চেয়ার ক্রিকেটার আছে সারা বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত ৫টা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি আমরা। যার মধ্যে ২টায় চ্যাম্পিয়ন এবং ৩টায় রানার্স আপ হয়েছি। আমাদের নারী একটা দল আছে। পাশাপাশি ইউএস অ্যাম্বাসির একটা প্রজেক্টে কাজ করি আমরা। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ উত্তরখন্ড কাপ টু একটা টুর্নামেন্ট খেলব। চার জাতি টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল এবং ভারত সেখানে খেলবে।’ 


কীভাবে এতো পথ পাড়ি দেয়া গেল, সেই গল্প বলে যাচ্ছিলেন মহসিন। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ব্যাটে-বলে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে চলা মহসিন বলেন, ‘নিজের ইচ্ছাশক্তি থেকেই এতোদূর আসা। আমার কলিগ এবং সঙ্গীদের সাপোর্টের কারণে এতোদূর আসা। বিসিবি আমাদের বিমান টিকেট এবং ক্রিকেটের সরঞ্জাম দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বেক্সিমকো, সামিত পাওয়ার এগুলো থেকে সাহায্য পাই। আমার স্বপ্ন হচ্ছে হুইল চেয়ার ক্রিকেট পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। বিপিএলের মতো বাংলাদেশ হুইল চেয়ার বিপিএল হবে। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ আছে, সেখানে ভালো একটা ফলাফল আশা করছি।’ 


মহসিনের সঙ্গে এসেছিলেন তার দুই সতীর্থ আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং নূর মোহাম্মদ মুন্সি। ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের ওয়াসিম-ওয়াকার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু করেন বোলার আল মামুন।


তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে মহসিনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। তখন সে আমাকে হুইল চেয়ার ক্রিকেটে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বলে। সেখান থেকে এই যাত্রা শুরু। ছোট থেকে আমি ক্রিকেট খেলতাম। হুইল চেয়ার ছাড়াই খেলা শুরু করি। স্বপ্ন ছিল ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসদের মতো হওয়ার। সেখান থেকেই এখানে আসা। এ কারণেই আমি একজন বোলার।’


নূর মোহাম্মদ মুন্সী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। ২০১৬ সাল থেকে হুইল চেয়ার দলের সঙ্গে আছেন এই ব্যাটসম্যান। খুলনার হয়ে বিভাগীয় টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে জিতেছেন শিরোপা। 



নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে মহসিনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। সেখানে তার কিছু ছবি দেখি। এরপর যোগাযোগ করে নিজের ব্যাপারে সব খুলে বলি। সেখান থেকেই হুইল চেয়ার ক্রিকেটে দলের সঙ্গে যাত্রা শুরু। আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতাম তাই আমার জন্য সহজ হয়েছে।’


‘২০১৬ সালে আমাদের একটা বিভাগীয় একটা টুর্নামেন্ট হয়। সেখানে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম অংশ নেয়। সেখানে খুলনার হয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। এখান থেকেই শুরু মূলত। ২০১৬ সাল থেকে এই দলের হয়ে খেলছি। আমি কখনও কল্পনা করতে পারিনি যে ক্রিকেটার হব। ব্যাটিংটা ভালো করি আমি।’ যোগ করেন নূর মোহাম্মদ।


মহসিন-নূর মোহাম্মদরা যে হুইল চেয়ার দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন, সেটা দিয়ে রানিং করতে সমস্যা হতো। যে কারণে বাকি দলগুলোর থেকে পিছিয়ে পড়তেন তাঁরা। এসব বিবেচনা করে তাঁদেরকে ২১টি হুইল চেয়ার দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 


এই বিষয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘এদের একটা জিনিসের অভাব ছিল যে হুইল চেয়ারটা স্পোর্টস গ্রেডের নয়, অন্যরা যেগুলো দিয়ে খেলে ওগুলো একটু ভিন্ন ধরনের হয়। সে জন্য তাদের একটা চাহিদা ছিল যে এ রকম যদি পাওয়া যায়, সিআরআই থেকে বেসিক্যালি প্রথমে আমাদেরকে জানায় এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করা যায় কিনা।’ 


‘পরে আমরা এ নিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করি। তারা বলেছে এগুলো বানায় না। নির্দিষ্ট কারও চাহিদা অনুযায়ী বানানো হয়, কিন্তু আমাদের তো এতো বেশি প্রয়োজন নাই, তাই সে পথে আর যাইনি। বিকল্প হিসেবে উনারাই (ডিসেবল দল) এটা পছন্দ করে দেয়, এগুলো দিয়েও অনেকটা একই রকম কাজ করবে।' 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball