promotional_ad

গোলাপি বলে নির্মম অভিজ্ঞতা

ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ
promotional_ad

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||


চারদিকে সাজ সাজ রব। দলে দলে ইডেনে ছুটে আসা মানুষের মুখে ক্রিকেটের জয়গান আর চোখেমুখে গোলাপি বলে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার ফরম্যাটের লড়াই দেখার রোমাঞ্চ। যদিও এই জয়গান বা রোমাঞ্চের অংশ হওয়া হয়নি বাংলাদেশের। টেস্ট ক্রিকেট বলতে যা বোঝায়, সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নামটি এখন বড়ই বেমানান! সিটি অব জয়-এর শহর কলকাতার মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু তাই বিরাট কোহলি আর তাঁর দল।


শুভ্র-সাদা পোশাকে গোলাপি বলের ধুন্ধুমার লড়াই দেখতে ইডেনে আসা ক্রিকেটমোদীরা বাংলাদেশকে নিয়ে যারপরনাই হতাশ। দুই দিন ও পৌনে এক ঘণ্টায় ইনিংস ও ৪৬ রানে হেরে যাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে আরেকটু উচু ধারণা ছিল তাদের। প্রতিপক্ষ হলেও বাংলাদেশের কাছ থেকে আরও ভালো লড়াই আশা করেছিলেন তারা। এমন দলের বিপক্ষে জিতে নাকি মজা মেলে না! ভারতীয় সমর্থকদের ভাষায়, ‘লড়াইয়ের আগেই ফল পক্ষে চলে এলে লড়াইয়ের মজাটাই থাকে না।’


স্বভাবতই প্রথম কোনো কিছু নিয়ে রোমাঞ্চ কাজ করে। নিজেদের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে ভারতের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঝেও সেই রোমাঞ্চ দেখা গেছে। কিন্তু এ রোমাঞ্চ হতাশায় রূপ নিতে একদমই সময় লাগেনি। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেই আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিতে দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। মুমিনুল হকের দলের ইনিংস শেষ হয়ে গেছে নিমেষেই।



প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট, খেলা গোলাপি বলে। অনেক কিছুই হয়তো কল্পনায় এঁকেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে মেলেনি, এমনকি ধারে কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি। উল্টো প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে খেলতে নেমে নির্মম অভিজ্ঞতা হলো ‍মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের। ম্যাচ শুরুর পর হয়তো একবারও জেতার চিন্তা করার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। মান বাঁচানোর চিন্তা করতেই সময় শেষ হয়ে গেছে মুমিনুল হকের দলের।


গোলাপি বল এখন তাই বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম, অস্বস্তির প্রতীক। গোলাপি রঙে পুরো কলকাতা সাজলেও সেই রং প্রতিফলিত হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে ফিরে এসেছে নিকষ কালো আধার হয়ে। যে আধারে পথ খুঁজতে গিয়ে কোনো দিশা মেলেনি। অসহায় আত্মসমর্পণ করে মেনে নিতে হয়েছে বিশাল এক হার।



promotional_ad

বাংলাদেশের এই হার অবশ্য অনাকাঙিক্ষত কিছু নয়। কারণ ইন্দোর টেস্টেও ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে দুই দলই প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে যাচ্ছিল বলে অনেক হিসাব-নিকাষ কষা হয়েছে। ভারতের জন্য যা নতুন, বাংলাদেশের জন্যও তো তাই- এমন থিওরি থেকে মুমিনুল হকের দলকে কেউ-ই পিছিয়ে রাখেনি। কিন্তু ম্যাচ মাঠে গড়াতেই বোঝা গেছে, এটা প্রথম বা অনেক ম্যাচ খেলার ব্যাপার নয়। এটা কৌশল, সামর্থ্যের ব্যাপার। যেখানে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।



ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ম্যাচটি যে তিনদিনে গড়িয়েছে, সেটাই এক ধরনের বিস্ময়! ক্রিকেট ঈশ্বরও হয়তো চাননি, দুই দিনেই ম্যাচটি ফল দেখুক। গোলাপি বলে খেলতে নেমে প্রথমবারের মতো দুই দিনেই ইনিংস হারের মুখে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে দলের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের কল্যাণে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিছুটা সময় সঙ্গ দিলেও মুশফিকই ছিলেন কান্ডারির ভূমিকায়। না হলে ২৩ নভেম্বরই হার মেনে নেয়া লাগতে পারতো বাংলাদেশকে।


বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গেলেই ইডেনের গ্যালারি থেকে উহ, ইশ আওয়াজ এসেছে। অর্থাৎ একটুর জন্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেঁচে যাওয়ায় হা-হুতাশ করেছেন ভারতীয় সমর্থকরা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা লড়াইয়ের ছিটেফোটাও দেখাতে পারেননি। প্রতিটা ব্যাটসম্যানের ব্যাটিংয়ের বেসিকই এখন রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ। টেস্টের মেজাজটা তাঁরা বোঝেন কিনা, এটাই এখন একমাত্র প্রশ্ন। পাঁচদিন লড়তে হবে যে ম্যাচে, সেই ম্যাচের শুরুতেই শট খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ার দৃশ্য সেটাই প্রমাণ করে।


টেস্ট ক্রিকেটে বল ছেড়ে দেয়ার সুযোগ আছে, এটা হয়তো এখনও অজানা বাংলাদেশের কাছে। বল কীভাবে ছাড়তে হয়, সেটাও হয়তো শেখা হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার দৃশ্য দেখা গেছে ইডেন গার্ডেন্সে। লড়াইটা যেখানে টিকে থাকা, সেখানে রানের পেছনে ছোটার দৃশ্যই বলে দেয় বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের আসল চিত্র।



বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১০৬ রানে। একই উইকেটে ভারতের ব্যাটসম্যানদের একটুও নড়বড়ে মনে হয়নি। ৪৩ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারালেও স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে ৩৪৭ রান জমা করে স্কোরকার্ডে। ‍অধিনায়ক বিরাট কোহলি খেলেন ১৩৬ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস। চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্কা রাহানেও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ইনিংস (১৯৫) মিলিয়েও এই রান পেরেনো হয়নি বাংলাদেশের।



একইভাবে বল হাতেও ভারতীয়দের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। মূলত পেস আক্রমণের দিক থেকে ব্যবধানটা ছিল পরিষ্কার। ভারতীয় তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামির তোপে উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। উল্টো বাউন্সারের আঘাতে আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লিটন দাস ও নাঈম হাসানকে।


বল হাতে জবাব দিতে গিয়ে শুরুটা অবশ্য একেবারে মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। দলকে ভালোই শুরু এনে দেন দুই পেসার আল আমিন হোসেন ও এবাদত হোসেন। ৪৩ রানের মধ্যেই ভারতীয় ওপেনারদের ফিরিয়ে দেন এ দুজন। কিন্তু এই তোপ ধরে রাখতে পারেননি তারা্। একইভাবে আবু জায়েদ রাহিও পারেননি দলকে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দিতে। ভারতের ৯জন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে পারলেও সেটা তেমন কাজে আসেনি। এই তিন পেসারের সাধারণ বোলিংয়ের বিপক্ষে ঠিকই রানের চাকা ঘুরিয়ে গেছেন কোহলি-রাহানেরা।



প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট বলে দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনার সীমা ছিল না। দর্শকে ঠাসা ছিল পুরো ইডেনের গ্যালারি। প্রথম দিন টিকেট না পেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরেও দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক হাজার দর্শক। পরের দুদিনেও দর্শকের কমতি ছিল না। কিন্তু দর্শকরা লড়াইয়ের মজাটা নিতে পারেননি। তৃতীয় দিনে তো তারা বাংলাদেশের সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন। মাঠে আরেকটু সময় থাকার অভিলাষ ভারতীয়দের বানিয়েছিল বাংলাদেশের সমর্থকে।


তৃতীয় দিন বাংলাদেশ যখন ইনিংস হারের খুব কাছে, তখনও মুশফিক-আল আমিনদের একেকটি চারে ফেটে পড়ছিল ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারি। বাংলাদেশ টিকলেই তো আরেকটু সময় মাঠে থাকা যাবে, এমন ভাবনা ভারতের ‘কট্টর’ সমর্থকদেরও করে তুলেছিল ক্রিকেটের পতাকা বাহক। যদিও এই সমর্থনে বিফলে গেছে, কিছুক্ষণ পরই ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।  



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball