promotional_ad

তরুণের জয়গানে জয়ের ভেলায় বাংলাদেশ

ছবিঃ বিসিবি
promotional_ad

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||


আগের রাত থেকেই বৃষ্টি ঝরছিল। শুক্রবার প্রায় পুরোদিনজুড়েই ছিল বৃষ্টির প্রতাপ। ফলে ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। আশা নিরাশার দোলাচলে থাকতে থাকতে সাড়ে ছয়টার ম্যাচ অবশেষে ৮টায় মাঠে গড়ায়। এবার আর বৃষ্টি নয়, মিরপুরে চলল বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ধুন্ধুমার লড়াই। এই ধুন্ধুমার লড়াইয়ে মিরপুরে বেজে গেল তরুণের জয়গান। যে জয়গানে অনেক দিন পর জয়ের ভেলায় ভাসলো বাংলাদেশ।


রুদ্ধশ্বাস লড়াই জিতে নেয়ার পথে দুজন যোদ্ধাকে পেল বাংলাদেশ, দুজনই তরুণ ‍তুর্কি। ধূসর হয়ে ওঠা জয়ের আশায় রং ছিটিয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় উপহার দিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান।


৬০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসা দলকে পথ দেখাতে গিয়ে এ দুজন খেললেন নির্ভীকচিত্তে। মোসাদ্দেক রয়েসয়ে খেললেও আফিফের তাণ্ডব দিক ভুলিয়ে দিল জিম্বাবুয়েকে। ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা তরুণ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান শুধু দলকে একটি জয়ই উপহার দিলেন না, উদ্ধার করলেন ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকেও।  


ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাওয়া তিন উইকেটের এই জয় বাংলাদেশের কাছে নিছকই একটি জয় হওয়ার কথা নয়। কারণ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সেই ম্যাচের পর থেকে কেবল হেরেই আসছিল বাংলাদেশ। কোনো ফরম্যাটেই জয়ের দেখা মিলছিল না। টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে টানা ছয় ম্যাচ হারে আত্মবিশ্বাসের ঝুলি খালি হওয়ার দশা। এমন সময় জয়ের ঘ্রাণ নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বাড়তি অক্সিজেনের যোগান দেবে!


প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলে অনেকে হয়তো স্বস্তির জায়গা খুঁজে পাবেন না। কিন্তু দিনশেষে একটি জয় দুঃসময়ে থাকা কোনো দলের কাছে যে কতোটা পরশ বুলিয়ে দেয়ার অনুভূতির মতো, সেটা এই পর্যায়ে লড়াই করা ক্রিকেটাররাই কেবল বুঝতে পারেন। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের কাছেও জয়টি নিশ্চয় তেমনই।



promotional_ad

শুক্রবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শুরুটা ভালো না হলেও শেষের দিকে রায়ান বার্লের ঝড়ো গতির ৫৭ রানের সুবাদের ১৮ ওভারের ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। জবাবে চরম অগোছালো শুরু করা বাংলাদেশকে পথ দেখিয়ে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ম্যাচ সেরা আফিফ ও তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া মোসাদ্দেক।   


১৮ ওভারে ১৪৫ রানের লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা নিশ্চয়ই পাহাড় ডিঙানোর মতো কোনো লক্ষ্য নয়। কিন্তু এই লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমেই দিশেহারা বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে লিটন দাস ও সৌম্য সরকার ২৬ রান যোগ করার পর পরই বাংলাদেশের ইনিংস ওলট-পালট। পরপর দুই বলে ফিরে যান ১৯ রান করা লিটন ও সৌম্য। দুই বল পর মুশফিকুর রহিমও সাজঘরের পথে।


স্বভাবতই রাজ্যের চাপ চেপে বসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাঁধে। কিন্তু এদিন দলকে পথ দেখাতে পারেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। দলকে ঘোর অন্ধকারে রেখে সাজঘরে ফেরেন তিনি। বিপর্যয় কাটিয়ে তুলতে ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমানের জুটিও স্বস্তি ফেরাতে পারেনি। ১৪ রান করে থামতে হয় মাহমুদউল্লাহকে।  


টি-টোয়েন্টির মেজাজ কেমন হয়, সাব্বির রহমান ১৫ রান করে ফিরে যাওয়ার পর সেটা বুঝিয়েছেন দুই তরুণ তুর্কি মোসাদ্দেক ও আফিফ। ধ্বংসস্তূপ থেকেও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেন তাঁরা। রান রেটের কথা মাথায় রেখে মারকুটে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকেন এ দুজন। ৬০ রান থেকে দলের হাল ধরা এই দুই ব্যাটসম্যান পাড়ি দিয়েছেন প্রায় শেষ পর্যন্ত।


পাহাড় সমান চাপকে জয় করে এই দুই তরুণ আলোক বর্তিকা হাতে এগিয়ে গেছেন। বিশেষ করে আফিফ ছিলেন খুনে চেহারায়। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ তাঁর ব্যাটকে পরিণত করেছিলেন খোলা তরবারিতে। মোসাদ্দেককে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পাওয়া আফিফ ২৫ বলেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নেন।


তাঁর ব্যাটে বাংলাদেশও তখন জয়ের খুব কাছে। এমন সময় বিদায় নেন ২৬ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রান করা আফিফ। এরপর অন্য পাশে মোসাদ্দেককে রেখে জয় তুলে নেয়ার কাজটি সারেন সাইফউদ্দিন। দুঃসময়ে দৃঢ়তার পরিচয় দেয়া মোসাদ্দেক ২৪ বলে দুটি ছক্কায় হার না মানা ৩০ রান করেন। সাইফউদ্দিন ২ বলে ৬ রান করেন।   



এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে শুরুটা ভালো করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই সফরকারী দলের ওপেনার ব্রেন্ডন টেলরকে ফিরিয়ে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন অভিষিক্ত তাইজুল ইসলাম। এই উইকেট নিয়ে রেকর্ড পাতাতেও নাম লিখিয়ে নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। তাইজুল হচ্ছেন ১৬তম বোলার, যিনি টি-টোয়েন্টি অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন।


শুরুতেই উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে চাপ সামলে উঠতে সময় নেয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে দলকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ক্রেইগ আরভিন। যদিও এই জুটি দীর্ঘ হয়নি। আরভিনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরে সাকিববাহিনী। ১২ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ের পরের তিন উইকেট তুলে নেন মোসাদ্দেক-সাইফউদ্দিনরা।


যদিও এতে খুব একটা ফায়দা হয়নি। ষষ্ঠ জুটিতে রীতিমতো শাসন করেছেন রায়ান বার্ল ও তিনোতেন্দা মুতোমবদজি। বিশেষ করে বার্ল ছিলেন অগ্নিমূর্তিতে। জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মিরপুরের ২২ গজে টর্নেডো বইয়ে দেন। 


সাকিবের করা ১৬তম ওভার (৬ ৪ ৪ ৬ ৪ ৬) থেকে ৩০ রান তুলে নেন বার্ল। শেষ পর্যন্তও তাঁকে থামানো যায়নি। ৫২ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৭ রানের ধুন্ধুমার এক ইনিংস খেলেন বার্ল। এ ছাড়া অপরাজিত ২৭ রান করেন মুতোমবদজি। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball