ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এ কী তামাশা!
ছবি: ছবিঃ বিসিবি , রতন গোমেজ

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||
টার্নিং উইকেট দেয়া হয়নি বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আফসোসের শেষ নেই। আফসোসটা কতো বড়, চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথাতেই বোঝা গেছে। অধিনায়ক হয়ে কেউ যখন বলেন, চাওয়া মতো উইকেট পাননি বলে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারেননি, তখন বুঝতে বাকি থাকে না একটি দলের ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কী চলছে। যেন কেবল উইকেটই কয়েক হাজার মাইল পিছিয়ে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের দলকে!
যদিও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, ফ্ল্যাট উইকেটেই আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিপক্ষে হাবুডুবু খাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। রশিদ-নবিদের স্পিন ভেল্কি সামলাতে দ্বিতীয় ইনিংসে রীতিমতো ওলট-পালট হয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। দুই একজন ব্যাটসম্যান ছাড়া সবাই নতুন নতুন জায়গা পেয়েছেন।
প্রথম ইনিংসে যেমন তেমন, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যে তরিকায় ব্যাটিং লাইন আপ সাজিয়েছে, সেটা রীতিমতো অবাক করা কাণ্ড। হয়তো অদুভুতও। ক্রিকেটের এই আধুনিক যুগে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন করতেই নাকি ঘরের মাঠের দলের এই হুড়োহুড়ি! কিন্তু এভাবে পরিকল্পনার ফলটা কী! আফগানদের শাসন মেনে নেয়াটাই তো অমোঘ নিয়তি থেকে গেছে!
হার যখন চোখ রাঙাচ্ছে, সাকিব আল হাসান তখন সংবাদ সম্মেলনে এসে তখন ব্যাটিং অর্ডার এলোমেলো করার কারণ জানালেন। এক মোহাম্মদ নবীর কারণেই নাকি তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের এমন জায়গা বদল।

সাকিব বলছেন, ‘নবি ভাই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সব সময়ই ভালো করেন। প্রথম ইনিংসে এমনই হয়েছে। তাঁকে আটকানোর জন্য আমরা ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন করেছি। ৪০০ রান তাড়া করার জন্য ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেই পরিকল্পনাতে মোসাদ্দেককে রাখা হয়। কারণ প্রথম ইনিংসে ও কিন্তু বেশ দারুণ ব্যাটিং করেছে।’
যদিও যার কারণে এতো ওলট-পালট, সেই নবি বাংলাদেশের যাওয়া ছয় উইকেটের মধ্যে মাত্র একটি পেয়েছেন। এতে আফসোস নেই সাকিবের। কারণ পরিকল্পনা কাজে লেগে গেলে তখন অন্য আলোচনা হতো বলে মনে করেন তিনি, ‘পরিকল্পনা ভুলও হতে পারে, ঠিকও হতে পারে। মোসাদ্দেক আজ ১০০ করে নটআউট থাকলে সবাই বলত, ওয়াও কী দারুণ সিদ্ধান্ত। যেহেতু পারেনি, তাই বাজে সিদ্ধান্ত।’
স্পিন, স্পিন বলে যপতে থাকা বাংলাদেশ দিক হারিয়েছে এই স্পিনেই। আফগান স্পিনারদের ছোবলে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেয়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে দলকে মাত্র ২০৫ রানের পুঁজি এনে দেন। অথচ সাকিব, মিরাজ, তাইজুল, নাঈমদের মতো স্পিনারদের সামলেও ৩৪২ রান তুলেছিল টেস্টের নবীন দল আফগানিস্তান। প্রথম ইনিংসেই ১৩৭ রানে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ তাই দ্বিতীয় ইনিংসে ধাঁধার খেলায় নেমেছিল।
যদিও তাতে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরেই ধাঁধায় পড়েছেন। প্রথম ইনিংসে ওপেনার ছিলেন সাদমান ইসলাম ও সৌম্য সরকার। তিনে নেমেছিলেন লিটন দাস। ৩৯৮ রানের বিশাল লক্ষ্য পেয়ে বাংলাদেশ এবার পেছনের সবকিছু ভুলে যেতে চাইলো। সৌম্যকে সরিয়ে সাদমানের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়া হলো লিটনকে।
বাংলাদেশের এই বিকল্প পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ৯ রান করেই সাজঘরের পথ ধরেছেন লিটন। তিন নম্বরেও পরিবর্তন। আর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চমক। বাঁহাতি সাদমানের সঙ্গে কম্বিনেশন করাতে পাঠিয়ে দেয়া হয় মোসাদ্দেককে। এই পরিকল্পনাও কাজে আসেনি। হয়তো রান তাড়ার কথা মাথায় রেখে উইকেটে যাওয়া মোসাদ্দেক উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিদায় নেন দলকে ঘোর সঙ্কটে রেখে।
দুটি-একটি পরিবর্তন হলেও এতোটা দৃষ্টিকটু দেখাত না। কিন্তু প্রায় সব ব্যাটসম্যানের জায়গাই বদলে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত জায়গা বদলে আগের ইনিংসে চারে নামানো মুমিনুল হককে আরও এক ধাপ অর্থাৎ, পাঁচে নামিয়ে দেয়া হয়। চারে তুলে আনা হয় মুশফিকুর রহিমকে।
এতোক্ষণে অনেকেই হয়তো সৌম্য সরকারের নাম খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ওপেনার সৌম্যতে ভরসা রাখা হয়নি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আটে। এমনকি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও জায়গা বদলে নেমেছেন ছয়ে। এক কথায় আফগানদের স্পিন সামলাতে পুরোপুরি বেসামাল বাংলাদেশ। যে বেসামাল অবস্থা কাটিয়ে তোলার মতো কান্ডারির দেখা মেলেনি। ৩৯৮ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে রীতিমতো ধুঁকছে বাংলাদেশ।
১৩৬ রান তুলতেই খোয়া গেছে ছয় উইকেট। জয় নামের ঘোলাটে স্বপ্নকে স্পষ্ট করে দেখতে বাংলাদেশের এখনও দরকার ২৬২ রান, হাতে মাত্র চার উইকেট। অধিনায়ক সাকিব ও সৌম্য উইকেটে থাকলেও কোনো কিছুর নিশ্চয়তা মিলছে না। বৃষ্টির হানা না থাকলে বাংলাদেশ যে সোমবার বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি হারতে যাচ্ছে, সেটা অনুমেয়ই। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা বলে এভাবে বলার সুযোগ সুযোগ হয়তো নেই, কিন্তু ম্যাচ বাঁচানোর রসদ যে বাংলাদেশের ভান্ডারে নেই, সেটা বলাই যায়!
চট্টগ্রাম টেস্ট পাঁচ দিনে গড়াবে, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে অনেকেই সেটা ভাবেননি। গড়াতোও না হয়তো, কিন্তু বৃষ্টি বাধায় বারবার খেলা বন্ধ হয়েছে। চুতর্থ দিনের প্রায় চার ঘণ্টা সময় চলে গেছে বৃষ্টির পেটে। ছয় উইকেট হারিয়ে দিকহারা বাংলাদেশ যখন দিগ্বিদিক ছুটছে, তখন আবারও বৃষ্টি এসে কিছুটা হলেও শান্ত করেছে স্বাগতিক শিবিরকে। এতে অন্তত এখনই হার মেনে নিতে হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের দলকে।