মানুষ, মিডিয়ার কথায় কিছুই যায় আসে নাঃ সাকিব
ছবি: ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||
বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানে মিডিয়ার অবদান আছে; পরিমাণটা যেমনই হোক, অবদানের ব্যাপারটি স্বীকার করে নেন সাবেক-বর্তমান অনেক ক্রিকেটারই। একইভাবে ভক্ত, মাঠে গিয়ে খেলা দেখা দর্শকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বেশিরভাগ ক্রিকেটার। তবে এই মিডিয়া ও সমর্থকদের কথায় খুব একটা যায় আসে না বলে জানালেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
মাঠে গিয়ে দলকে সাহস যোগানোর অনুরোধ করে থাকেন, এমন ক্রিকেটারের তালিকায় সাকিবও আছেন। ভক্ত-সমর্থকদের উৎসাহ দলকে অনুপ্রেরণা যোগায়- এমন কথার সঙ্গে দ্বিমত নন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। কিন্তু আলোচনাটা যখন প্রশংসা করা নিয়ে, সাকিব তখন কারো দিকে চেয়ে থাকছেন না। কে প্রশংসা করল, কে করল না; তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই বাংলাদেশ অধিনায়কের।

দল জিতলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ক্রিকেটারদের, ড্রেসিংরুমের চেহারা রঙিন হয়। এ পথে নিজেরাই নিজেদের প্রশংসা করেন বলে জানাচ্ছেন সাকিব। যে কারণে অন্য কারো কাছ থেকে প্রশংসা শোনার ব্যাপারটি বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের কাছে প্রায় মূল্যহীন। যদিও মূল্য নেই, সেটাও আবার বলা কঠিন। কারণ প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! নিশ্চয় সাকিবও ব্যতিক্রম নন। তবে প্রশংসায় ভাসতেই হবে, এভাবে ভাবেন না তিনি।
একমাত্র টেস্টে ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতা, শক্তি, কন্ডিশন; সবকিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ যে এগিয়ে, আর সবার মতো আফগানরাও সেটা মেনে নিচ্ছে। যে কারণে আগে থেকেই বাংলাদেশের গায়ে জয়ী দলের সিল লাগিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ। আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে সেটা স্বাভাবিক ব্যাপারই হবে। তাতে হয়তো প্রশংসার বন্যা বয়ে যাবে না। তবে হারলেই বিপত্তি। সমালোচনার তীর ধেয়ে যাবে সাকিবদের দিকে।
বুধবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাকিবকে। টেস্ট অধিনায়ক স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই জানিয়ে দিলেন, এসব নিয়ে ভাবার সময় কই তাঁর! সাকিব বলছেন, ‘প্রশংসা হয় না, আমার কাছে মনে হয় ভুল ধারণা। আমরা ক্রিকেটাররা জানি এটা কত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এবং প্রতিটি ম্যাচ জিততে হলে কতটা পারফর্ম করতে হয় ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা আমাদেরকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি। মানুষ বা আপনারা কতটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেন, এতে আসলে আমাদের খুব একটা যায় আসে না।’
এসব নিয়ে না ভেবে ম্যাচে নজর দিচ্ছেন সাকিব। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের মতো নবীন টেস্ট দল হলেও তাঁর কাছে জয়টাই আসল। জয়টা বড় না ছোট, তা নিয়েও ভাবতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ, ভালোভাবে আর খারাপভাবে নয়। ১ রানে জিতলেও সেটা জয়, ১০০ রানে জিতলেও একই। ১ উইকেট হোক বা ১০ উইকেট, জয় জয়ই। জেতাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
সাকিব কারো প্রশংসার জন্য অপেক্ষা করেন না। এমনকি সমালোচনাও তাঁকে সেভাবে ছুঁতে পারে না। সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়ে যান তিনি। হয়তো এ কারণেই তিনি বাংলাদেশের প্রাণ ভোমরা। সব সরিয়ে রাখার সামর্থ্য না থাকলে সাকিবও হয়তো দিক হারাতে পারতেন। কারণ সমালোচনার আঘাত যে কাউকে অনেক পিছিয়ে দিতে পারে, বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারকে দেখেও সেটার প্রমাণ পাওয়া গেছে।