promotional_ad

বুক চিতিয়ে লড়েও মিলল না জয়ের দেখা

ছবিঃ বিসিবি
promotional_ad

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||


১৪ বছরের পুরনো সুখস্মৃতিতে রংয়ের প্রলেপ মেখে সেটাকে তাজা করার তেমন কোনো মানে নেই। তবু প্রলেপ পড়েছিল। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলে কার্ডিফের সেই ঐতিহাসিক জয় হয়ে উঠেছিল আলোচনার তাজা উপকরণ। মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য সেই সুখস্মৃতি থেকে বিশেষ কিছু নেওয়ার দেখেননি। তবে তেমন একটি দিন ফেরাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। কিন্তু সেটা হলো না। বুক চিতিয়ে লড়েও মেনে নিতে হলো হার। শুধু হারই নয়, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের স্বপ্নও কিছুটা ধূসর হয়ে উঠল বাংলাদেশের।


দুর্দান্ত প্রতাপে ট্রেন্ট ব্রিজের ২২ গজে শাসন কায়েম করা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ লড়াইও যথেষ্ট হলো না। বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ট ম্যাচে ৪৮ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।


ম্যাচটা জেতা মানে সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দেওয়া, অজিদের ব্যাটিংয়ের পরই সেটা বুঝে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নটিংহ্যামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিংয়ের বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের চোখ ধাঁধানো ১৬৬ রানের সুবাদে ৫ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার তোলা ৩৮১ রান ছিল মাশরাফিবাহিনীর জন্য রীতিমতো রান পাহাড়। যে রান পাহাড় জয় করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ধুন্ধুমার ৬৯ রানের পরও বাংলাদেশকে থামতে হলো ৩৩৩ রানে।


এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান করেও হেরে যাওয়া নিশ্চয়ই অন্যান্য হারের চেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক। আর এই যন্ত্রণায় জড়িয়ে থাকলো বল হাতে আরেকটু কম খরুচে হতে না পারার চরম আফসোসও।


জিততে হলে বিশ্বকাপের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করতে হতো বাংলাদেশকে। আগের ১১টি আসরে যে কাটাযুক্ত পথ কোনো দলই পাড়ি দিতে পারেনি, বাংলাদেশকে জয় করতে হতো সেই পথ। এতো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড বিশ্বকাপে নেই। ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার যে রেকর্ডটি আয়ারল্যান্ডের দখলে, সেই রেকর্ড গড়তে তাদেরকে টপকাতে হয়েছিল ৩২৭ রান।  


সামনে বিশাল লক্ষ্য। স্বভাবতই দ্রুত রান তোলার ব্যাপারটি চাপ হয়ে ভর করেছিল বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ওপর। যে চাপ বইতে পারেননি সৌম্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটের শিকার হতে হয় ১০ রান করে সাজঘরের পথ ধরা সৌম্যকে।


promotional_ad

দলীয় ২৩ রানেই উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য বুঝতে হয়নি বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে যোগ দিয়ে চাপ সামলে নেন বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকেই সুপারম্যানের ভূমিকায় নিজেকে হাজির করা সাকিব আল হাসান। এই জুটির গড়া ৭৯ রানে দলীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করে বাংলাদেশ। কিন্তু এই ম্যাচে ত্রাতা হয়ে ওঠা হয়নি শেষ চার ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরি ও দুই সেঞ্চুরি করা সাকিবের। ৪১ রান করে বিদায় নেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।


তামিম ইকবাল একপাশ আগলে ছিলেন। সেইসঙ্গে দারুণ কিছু করার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। যদিও এই জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ১৪৪ রানে তামিমের বিদায়ে আবারো ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ইনিংসে। অজি পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৭৪ বলে ৬টি চারে ৬২ রান করেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ওপেনার।


এরপর বিপাকেই পড়তে হয় বাংলাদেশকে। কারণ কিছুক্ষণ পরই সাজঘরের পথে হাঁটেন ২০ রান করা লিটন দাস। তবে ম্যাচের সবচেয়ে ঝলমলে অংশটুকু দেখা তখনো বাকি ছিল। মুশফিকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ এমন ব্যাটিং শুরু করেন যে, অনেকে ম্যাচ জেতার স্বপ্ন পর্যন্ত দেখতে শুরু করেন। এ সময় অজি বোলারদেরকে পাত্তাই দেননি মাহমুদউল্লাহ।


যাকে সামনে পেয়েছেন, তার বলই আছড়ে ফেলেছেন বাউন্ডারির ওপাশে। মুশফিকও সময়ের দাবি মিটিয়ে ব্যাট চালিয়েছেন। এই জুটিতে ৩০০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। আর মাহমুদউল্লাহ তখন রূদ্রমূর্তিতে। এমন সময় বাংলাদেশ শিবিরকে হতাশায় ডোবান অজি পেসার কল্টার নাইল। খেপাটে স্টাইলে ব্যাট চালাতে থাকা মাহমুদউল্লাহকে থামান তিনি। তাঁর বিদায়ে ভাঙে ১২৭ রানের জুটি।


বিশাল লক্ষ্য তাড়া করার পথে আশার প্রদীপ তখনও মিটমিটিয়ে জ্বলছিল, মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে সেটা নিভে যায়। ফেরার আগে ৫০ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৯ রানের দাপুটে এক ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।


পরের বলে আউট হন সাব্বির রহমান। তবে অসাধারণ ব্যাটিং করে মুশফিক তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম ও বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি। ৯৭ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ১০২ রানের হার না মানা ঝলমলে ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন কল্টার নাইল। এ ছাড়া মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস ও অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট পান।   


এরআগে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া দাপটের সঙ্গে ইনিংস শুরু করে। প্রথম কয়েক ওভার দেখেশুনে খেললেও ক্রমেই ব্যাটকে খোলা তরবারিতে পরিণত করতে শুরু করেন দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। এই দুই ব্যাটসম্যানের সামনে বাংলাদেশের কোনো বোলারই বাধার দেয়াল তুলতে পারেননি। ওয়ার্নার-ফিঞ্চ মিলে দ্রুত গতিতে স্কোরকার্ডে রান যোগ করতে থাকেন।


উদ্বোধনী জুটিই মূলত অস্ট্রেলিয়াকে রান পাহাড়ের পথ দেখিয়ে দেয়। এই জুটিতে ১২১ রান পেয়ে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেটাও ২০.৫ ওভারে। কোনো বোলারই যখন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং দূর্গে আঘাত হানতে পারছিল না, এমন সময় সৌম্য সরকারকে বোলিংয়ে টানেন মাশরাফি।


বোলিংয়ে গিয়েই অধিনায়কের চাওয়া পূরণ করেন সৌম্য। নিজের প্রথম ওভারেই অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে নিজের শিকারে পরিণত করেন অনিয়মিত এই পেসার। ৫১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানের ইনিংস খেলা ফিঞ্চকে হারিয়েও বেগ পেতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। বরং পরের জুটি থেকে সবচেয়ে বেশি রান পেয়েছে তারা।


ওয়ার্নারের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৯২ রান যোগ করেন উসমান খাওয়াজা। এই জুটি গড়ার মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেওয়া ওয়ার্নার। ব্যাট হাতে এতটাই সাবলীল ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান যে, মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যেতে পারেন তিনি। কিন্তু আবারও সৌম্য কান্ডারি হয়ে বাংলাদেশকে পথ দেখান।


ওয়ার্নারকেও সাজঘরের পথ দেখান ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার। যদিও এরআগেই ১৪৭ বলে ১৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৬৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে ফেলেন ওয়ার্নার। খাওয়াজাও ছিলেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের পথে। কিন্তু অজি ব্যাটিং লাইনআপকে জ্বালা দেওয়া সৌম্যর কারণে তিন অংকে পৌঁছানো হয়নি খাওয়াজার। সৌম্যর তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৭২ বলে ১০টি চারে ৮৯ রান করেন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।


এরপর উইকেটে গিয়েই তাণ্ডব চালান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। টর্নেডো স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন খেপাটে এই ব্যাটসম্যান। যদিও রান আউটের শিকার হয়ে দ্রুতই থামতে হয় তাকে। এরআগে মাত্র ১০ বলে ৩২ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ফিরলে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মার্কাস স্টয়নিসের ১৭ ও অ্যালেক্স ক্যারির ১১ রানে ৩৮১ রান জমা হয় অজিদের স্কোরকার্ডে।


বাংলাদেশের কোনো বোলারই এদিন বল হাতে প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলতে পারেননি। ইকোনমি রেটই যার প্রমাণ। সবচেয়ে কম রান খরচ করা মেহেদী হাসান মিরাজের ইকোনমিও ছিল ৫.৯০। এর মাঝেও অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকার সর্বোচ্চ সাফল্য আদায় করে নিয়েছেন। ৮ ওভারে ৫৮ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান নেন একটি উইকেট। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball