লড়াই করেই হারল টাইগাররা

ছবি: ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আর মুশফিকুর রহিমের সহজ রানআউটের সুযোগ হাতছাড়ায় লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে দুই উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এদিনে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েও নিউজিল্যান্ডের স্নায়ুশক্তির কাছে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ২৪৪ রানের মাঝারি সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। তবে বোলারদের নৈপুণ্যে মাঝারি রান করেও সবসময় ম্যাচে ছিল টাইগাররা। মূলত কেন উইলিয়ামসনকে রানআউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল দিয়েছে দলটি।
মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেন দুই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো। মুনরো দেখেশুনে শুরু করলেও গাপটিল এক প্রান্তে চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন। ২৫ রান করা গাপটিলকে নিজের প্রথম বলেই তামিমের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন সাকিব।
গাপটিল ফিরে গেলেও কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে ৭ ওভারেই নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ অর্ধশতকে পৌঁছে দেন মুনরো। তবে, ২৪ রান করা মুনরো মিরাজের দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে আউট হয়েছেন সাকিবের বলে।
১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রান আউট হয়ে ফিরতে পারতেন উইলিয়ামসন। তবে থার্ড আম্পায়ার টিভি রিপ্লেতে দেখেন বল হাতে নেয়ার আগেই মুশফিকের হাত স্ট্যাম্পে লেগে বেল পড়ে যায়। ফলে নট আউট দেন থার্ড আম্পায়ার।
জীবন পাওয়ার পর তৃতীয় উইকেটে রস টেইলরকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান বাড়াতে থাকেন উইলিয়ামসন। ১৮ ওভারে তাঁরা দলীয় শতক পূরণ করে। একপ্রান্ত আগলে রেখে মাত্র ৪০ বলে অর্ধশতক তুলে নেন রস টেইলর।
মুশফিকের কাছে জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন থেমেছেন ৪০ রান করে। ৭২ বলের ইনিংসে মাত্র একটি চার মেরেছেন তিনি। মেহেদি মিরাজের বলে মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
ফেরার আগে টেইলরের সঙ্গে ১০৫ রানের জুটি গড়ে যান কিউই দলপতি। অবশ্য একই ওভারের শেষ বলে টম লাথামকেও খালি হাতে ফিরিয়েছেন মিরাজ। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।

সেঞ্চুরির কাছকাছি গিয়ে মোসাদ্দেকের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান টেইলর। ব্যক্তিগত ৮২ রানে ফিরেছেন তিনি। ৯১ বলের ইনিংসে ছিল নয়টি চারের মার।
এরপরে ম্যাচ জমিয়ে দেন সাইফুদ্দিন এবং মোসাদ্দেক। টানা দুই ওভারে দুই অলরাউন্ডারকে ফেরান তাঁরা। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (১৫) মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন সাইফুদ্দিন।
এরপরের ওভারে জেমস নিশামকে (২৫) ফিরিয়েছেন মোসাদ্দেক। এরপর সাইফুদ্দিন ম্যাট হেনরিকে (৬) ফেরালেও, জয় বঞ্চিত হয়নি কিউইরা। ১৭ বল হাতে রেখে দুই উইকেটে ম্যাচ জিতেছে তাঁরা।
টাইগারদের হয়ে আটটি উইকেট সমান দুই ভাগে ভাগ করে নেন মিরাজ, সাকিব, সাইফুদ্দিন এবিং মোসাদ্দেক। এনিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতল নিউজিল্যান্ড।
এই ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন উইলিয়ামসন। ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার।
এই দুজনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ রান। ইনিংসের নবম ওভারে ম্যাট হেনরির বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন সৌম্য। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। খানিক পর তামিম ইকবালকে ব্যক্তিগত ২৪ রানে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন লকি ফার্গুসন।
দুই ওপেনার ফিরে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের মত এই ম্যাচেও বাংলাদেশ দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। এই দুইজনের ব্যাটে দলীয় ১০০ পার করে বাংলাদেশ।
কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউটের ফাঁদে পড়তে হয় মুশফিককে (১৯)। এরপর মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে ইনিংস গড়ায় মন দেন সাকিব। শুরু থেকে দেখে শুনে খেলে মাত্র ৫৪ বলে অর্ধশতক তুলে নিয়েছিলেন সাকিব।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৬৮ বলে ৬৪ রান করে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে উইকেটের পেছনে লাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। সাকিব ফিরে গেলে পঞ্চম উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জুটি বেঁধে বাংলাদেশ দলের রানের চাকা সচল রাখেন।
তবে ২৬ রান করা মিঠুন ম্যাট হেনরিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন গ্র্যান্ডহোমের ক্যাচ হয়ে। এরপর মাহমুদুল্লাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি ২০ রান করে স্যান্টনারের বলে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।
মোসাদ্দেক হোসেন ১১ রান করে বোল্টের শিকার হয়ে আউট হন। বোল্টের করা ৪৯তম ওভারে ৭ রান করে উইকেটের পেছনে ল্যাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশ দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনিংসের শেষ ওভারে ১ রান করে হ্যানরিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন বোল্টের হাতে।
এরপর ২৯ রান করে সাইফুদ্দিন বোল্ড হলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৪৪ রানে। কিউইদের হয়ে ৪৭ রান খরচায় চার উইকেট নেন ম্যাট হেনরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাং???াদেশঃ ২৪৪/১০ (৪৯.২ ওভার)
(সাকিব ৬৪, সাইফুদ্দিন ২৯; হেনরি ৪/৪৭)
নিউজিল্যান্ডঃ ২৪৮/৮ (৪৭.১ ওভার)
(টেইলর ৮২, উইলিয়ামসন ৪০; মোসাদ্দেক ২/৩৩)