অল্পতেই গুঁটিয়ে গেলো বাংলাদেশ
ছবি: ছবি- বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও যথারীতি ব্যাটিং বিপর্যয় অব্যাহত রেখেছে সফরকারী বাংলাদেশ। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ২১১ রানে অলআউট হয়েছে টাইগাররা।
দলের পক্ষে এক তামিম ইকবাল ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যানই কিউই পেসারদের সেভাবে সামলাতে পারেননি। তামিম ৭৪ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস।
বাংলাদেশ শিবিরে ধস নামানোর কাজটি করেছেন কিউই পেসার নিল ওয়াগনার। একের পর এক বাউন্সারে রীতিমত নাকাল করে ছেড়েছেন তিনি টাইগারদের। একই সাথে ২৮ রান খরচায় তুলে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ট্রেন্ট বোল্টও ছিলেন হন্তারকের ভূমিকায়।
এদিন ম্যাচটির শুরুতে টসে জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছিলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এরপর ব্যাটিং করতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলটি কাভার ড্রাইভ করে সীমানা ছাড়া করার মাধ্যমে রানের খাতা খুলেছিলেন ওপেনার তামিম। এরপরই অবশ্য দেখেশুনে খেলার দিকে গুরুত্ব দেন তিনি।
তবে শুরুতে কিছুটা দেখে শুনে খেললেও ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা শুরু করেন তামিম। বোল্টের করা পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে টানা দুটি চার হাঁকান তিনি। সাদমানের সাথে ৭৫ রানের দারুণ একটি জুটিও গড়েন এই ওপেনার।
কিন্তু এই জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ইনিংসের ২১তম ওভারের চতুর্থ বলটি সাদমানের ব্যাটের কানায় লাগলে প্রথম স্লিপে ফিল্ডিংরত রস টেইলর তা লুফে নেন। এর ফলে ২৭ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে।

তবে সাদমান আউট হওয়ার পর দারুণ ব্যাটিং করে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ম্যাট হেনরির করা ২৪তম ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
অবশ্য ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন মমিনুল হক। নিল ওয়েগনারের করা ৩৩তম ওভারের তৃতীয় বলটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিউই পেসারের শর্ট বলটি মমিনুলের গ্লাভস ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে ধরা পরে। ফলে ১৫ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আর ১১৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগে বাংলাদেশ শিবিরে দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত হানেন ওয়েগনার। মমিনুল হকের পর এবার মোহাম্মদ মিঠুনের উইকেটটিও তুলে নেন তিনি। তাঁর করা শর্ট বলটি ব্যাক ফুটে থাকা মিঠুন ঠিকমতো বুঝতে না পারায় সেটি ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক ওয়াটলিংয়ের হাতে ধরা পরে। ফলে ৩৫ ওভারের মাথায় ৩ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
লাঞ্চ বিরতির পর ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবালের উইকেটটি হারাতে হয় বাংলাদেশকে। এবারও শর্ট বলে উইকেটটি নিয়েছেন নিল ওয়েগনার। তাঁর ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলটি পুল করতে চেয়েছিলেন টাইগার ওপেনার। কিন্তু স্কয়ার লেগ অঞ্চলে টিম সাউদির হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফলে ৭৪ রানের দারুণ ইনিংসটির পরিসমাপ্তি ঘটে তামিমের।
তামিমের পর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি সৌম্য সরকার। ম্যাট হেনরির ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলটি ঠিকমতো ব্যাটে বলে করতে পারেননি তিনি। ফলে শর্ট বলটি ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক ওয়াটলিংয়ের গ্লাভসে ধরা পড়ে। আর ২০ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় সৌম্যকে।
ইনিংসের ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে বাংলাদেশ শিবিরে চতুর্থবারের মতো আঘাত হানেন ওয়েগনার। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে (১৩) ফিরিয়ে দেন এবার তিনি। তাঁর করা বলটি স্কয়ার লেগ অঞ্চলে মারতে চেয়েছিলেন রিয়াদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের তালুবন্দি হন তিনি।
১৬৮ রানের মাথায় ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস এবং তাইজুল ইসলাম। তাঁদের ব্যাটে ২০০ রানের কোটা পার করতে সক্ষম হয়েছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের করা ৫৯তম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হয়ে ফিরতে হয় তাইজুলকে। বোল্টের করা বলটি সরাসর??? তাইজুলের প্যাডের মাঝে আঘাত করায় জোরালো আবেদন ওঠে এলবিডব্লিউয়ের। কিউইদের সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাইজুল। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার টিভি রিপ্লে দেখার পর আউটের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। ফলে ৮ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাইজুলকে।
তাইজুলের আউটে ক্রিজে নেমেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু বোল্টের করা একটি বলই মাত্র খেলতে পেরেছেন তিনি। কিউই পেসারের একই ওভারের শেষ বলটি মুস্তাফিজের স্ট্যাম্প সরাসরি ভেঙ্গে দিলে রান শুন্য থেকে মাঠ ছাড়তে হয় মুস্তাফিজকে। ফলে ২০৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
তাইজুল এবং মুস্তাফিজ আউট হওয়ার পর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসও। ৩৩ রান করে টিম সাউদির অফসাইডের বাইরে করা একটি বলে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে নেমে একটি চার হাঁকিয়ে বোল্টের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন আবু জায়েদ রাহি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ২১১/১০ (৬১ ওভার) (তামিম-৭৪, লিটন-৩৩; ওয়েগনার- ৪/২৮, বোল্ট-৩/৩৮)