ম্যালকম মার্শালঃ সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ফ্রাইডে স্পেশাল ||
আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বলা হত ফাস্ট বোলারের খনি। সেই খনি থেকে উঠে আসা অসংখ্য ফাস্ট বোলারের মাঝে তিনি নিজের জাতটা চিনিয়েছিলেন আলাদা করে। কেবল জাত চিনিয়েই ক্ষান্ত হন নি, নিজেকে নিয়ে গেছেন গ্রেটদের কাতারে। একটা সময় যিনি গ্রেট থেকে হয়ে উঠেছেন গ্রেটেস্ট! বলছিলাম তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার ম্যালকম মার্শালের কথা।
উন্মত্ত গতি, বুনো আগ্রাসন, বিষাক্ত সুইং, নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর পিলে চমকানো বাউন্সার মিলিয়ে মার্শাল ছিলেন এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ। সাথে বৈচিত্র্য হিসেবে ছিল ফাস্ট ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কার ও লেগ কাটার। সম্ভবত তাঁর চাইতে বিপজ্জনক ও ভীতিকর ফাস্ট বোলার ঐ সময় আর কেউ ছিল না। উইজডেনের ভাষায়, “He was brutally fast, ruthlessly accurate.”
ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলারদের একটা সহজাত ক্ষমতা ছিল, তারা প্রায় ফুল লেন্থ থেকে বুক সমান উচ্চতায় বল ওঠাতে পারত। মার্শালও এর ব্যতিক্রম নন। তবে মার্শালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র ছিল 'স্কিডি বাউন্সার'। মাঝে মাঝে 'রাউন্ড দ্য উইকেট' থেকে শরীর তাক করে বাউন্সার ছুঁড়তেন, ব্যাটসম্যানদের জন্য যেগুলো ছিল ‘নো এস্কেপ ডেলিভারি’! সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেংসরকার, গ্রাহাম গুচ, অ্যালান বোর্ডার, মার্টিন ক্রো'র মতো টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটসম্যানরাও অল্প পানিতে খাবি খাওয়া মাছের মতো ছটফট করতেন।
কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামের ভাষায়, “নিজের দিনে মার্শাল ছিল কার্যত আনপ্লেয়েবল। তীব্র গতির সাথে যেকোন দিকে ইচ্ছেমত সুইং করাতে পারত ও। তাছাড়া ওর ছিল স্কিডি বাউন্সারের মত প্রাণঘাতী ডেলিভারি যার ভয়ে তটস্থ থাকত ব্যাটসম্যানরা।”
১৯৮৬ সালে একবার ইংলিশ অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংকে বাউন্সার মেরে নাকমুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন মার্শাল। রক্তমাখা বলের গায়ে নাকি ভাঙা হাড়ের কুচি লেগে ছিল। কী ভয়ানক ব্যাপার!
ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই গ্রীল ছাড়া হেলমেট পড়তেন গ্যাটিং। অন্তত মার্শালের বিপক্ষে এই দুঃসাহসটা তাঁর না দেখালেও চলত।
অবশ্য হেলমেট পরেও রেহাই পাননি সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি লয়েড। জীবনের প্রথম টেস্টেই মার্শালের বাউন্সারে কানের নিচে আঘাত পেয়ে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যায় তাঁর। আঘাতটা নাকি এতই গুরুতর ছিল যে হাসপাতালে বেড রেস্টে থাকতে হয়েছিল দুই সপ্তাহ!
ম্যালকম মার্শালের উচ্চতা ছিল মাত্র ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। গার্নার-হোল্ডিংদের তুলনায় যথেষ্ট কম। তবে খর্বাকৃতির হওয়ার একটা সুবিধাও ছিল; বল প্রচুর স্কিড করত, স্কিডি বাউন্সার দিতে পারতেন। সাধারণ বাউন্সারের তুলনায় অনেক বেশি ইফেক্টিভ ছিল এই স্কিডি বাউন্সার।
ক্রীড়ালেখক মাইক শেলভির মতে, “Swing and cut, speed and bounce, and smarts above all - Maco had everything except height, and even that lack he turned into an asset.”
কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ও প্রয়াত ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর মতে, “মার্শালের ছিল চমৎকার ফ্লুইড একশন। খুবই বিপজ্জনক বোলার, ন্যাচারাল স্কিডার অফ দ্য বল। একই লেংথ থেকে বিভিন্ন উচ্চতায় বল তুলতে পারত ও। বলের গতি এবং বাউন্সের তারতম্যের কারণে যেকোন ব্যাটসম্যানেরই ওকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হত।”
সাবেক অলরাউন্ডার ও ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগ বলছেন, “মার্শালের ছিল কোণাকুণি রানআপ। ওপেন চেস্টেড, কুইক আর্ম আর কিছুটা রঙ-ফুটেড অ্যাকশন। ফাস্ট, অ্যাকুরেট এবং ডিসেপ্টিভ। ব্যাটসম্যানদের প্রায়ই পেসে বিট করতেন।”
লিলির মত মার্শালও পারদর্শী ছিলেন লেগ কাটারে। সম্ভবত লিলিই শিখিয়েছিলেন তাঁকে। বিশেষ করে সাবকন্টিনেন্টের স্পিন সহায়ক 'ডাস্টি' উইকেটে এই লেগ কাটার ব্যবহার করেই সফলতা পেয়েছেন তিনি।
উইজডেনের ভাষায়, “It pitched around middle stump, squaring the batsman, before jagging away and plucking out off stump. In its way it was as devastating a delivery as can ever have been bowled.”
মার্শাল যে শুধু স্কিল আর বৈচিত্র্যেই সেরা ছিলেন তা নয়, তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চাতুর্য ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও। মার্শাল জানতেন ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে কীভাবে ফাঁদ পেতে উইকেট শিকার করতে হয়। যেকোন ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা পড়ে ফেলতে তাঁর দুই মিনিটও সময় লাগত না। সুযোগ বুঝে ব্যাটসম্যানের দুর্বল জায়গায় আঘাত হানতেন তিনি??
সাবেক ফাস্ট বোলিং গ্রেট মাইকেল হোল্ডিংয়ের ভাষায়, “স্কিল, কন্ট্রোল আর বুদ্ধিমত্তায় মার্শাল ছিল অদ্বিতীয়। তবে আমার দেখা সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং থিংকিং ফাস্ট বোলারের নামটাও ম্যালকম মার্শাল! প্রয়োজনের মুহূর্তে শরীর এবং মাথা দুটোই কাজে লাগাতে পারত সে।”
ওয়াসিম আকরামের ভাষায়, “The beauty about Malcolm Marshall's bowling was he used to pick up the weakness of the opponent batsman in just two deliveries. Thats why he was a genius.”
পেস কোয়ার্টেটের অন্যতম সদস্য কলিন ক্রফটের ভাষায়, “Marshall's intelligence allowed him to think a batsman out when conditions were against him.”
সাবেক বাঁহাতি পেসার অ্যালান ডেভিডসনের মতে, “ম্যালকম আমার দেখা সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলার। ওর পেস, অ্যাকুরেসি, লাইন এন্ড লেন্থ, ভ্যারিয়েশনের কোন তুলনা হয় না। পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যেকোন কন্ডিশনে উইকেট নেবার ক্ষমতা রাখত ও। ব্যাটসম্যান এবং উইকেটের চরিত্র বুঝে রণকৌশলে পরিবর্তন আনতে পারার ক্ষমতাই মার্শালকে অন্যদের চাইতে আলাদা করেছিল।”
এবারে চলুন ম্যালকম মার্শালের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
টেস্ট:
৮১ ম্যাচে ৩৭৬ উইকেট, গড় ২০.৯৪, স্ট্রাইকরেট ৪৬.২২! ইনিংসে ৫ উইকেট ২২ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৪ বার। সেরা বোলিং ২২ রানে ৭ উইকেট।
ফার্স্ট ক্লাস:
৪০৮ ম্যাচে ১৬৮১ উইকেট, গড় ১৯.১০, স্ট্রাইকরেট ৪৫.২! ইনিংসে ৫ উইকেট ৮৫ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ২৩ বার। সেরা বোলিং ৭১ রানে ৮ উইকেট।
উল্লেখ্য, টেস্টে অন্তত ২০০ উইকেট নেয়া বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং গড়ের (২০.৯৪) রেকর্ডটা এখনও মার্শালের দখলে।
টেস্টে দল জিতেছে এমন ম্যাচে সেরা বোলিং গড়ের অধিকারী ফাস্ট বোলার হলেন ম্যালকম মার্শাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে এমন ম্যাচে মার্শালের অবদান মাত্র ১৬.৭৮ গড়ে ২৫৪ উইকেট! দ্বিতীয় স্থানে আছেন কার্টলি অ্যাম্ব্রোস (১৬.৮৬ গড়ে ২২৯ উইকেট)।
মার্শাল টেস্ট খেলেছেন মোট পাঁচটি দলের বিপক্ষে। তাদের মধ্যে বোলিং গড় সবচেয়ে কম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (১৯.১৮), সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (২২.৫১)। অর্থাৎ ১৯ থেকে ২৩ এর মধ্যে! তাহলে বুঝুন, বল হাতে ঠিক কতটা ধারাবাহিক ছিলেন ম্যালকম মার্শাল!
বিপক্ষ দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের উইকেট নিতে ভালোবাসতেন মার্শাল। টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১৬ বার ফিরিয়েছেন গ্রাহাম গুচকে। এছাড়া অ্যালান ল্যাম্বকে ১৩ বার, অ্যালান বোর্ডারকে ১১ বার, দিলীপ ভেংসরকারকে ১০ বার ও সুনীল গাভাস্কারকে ৮ বার আউট করেছেন তিনি।
পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর ৩৭৬ টেস্ট উইকেটের মধ্যে ২৩৮টাই ছিল ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ ছয় (১-৬) ব্যাটসম্যানের।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার কে? লিলি নাকি মার্শাল? তর্কের খাতিরে দুজনকেই বলা যায় পরিপূর্ণ ফাস্ট বোলার, দুজনেরই টেস্ট রেকর্ড অসাধারণ। তবে বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধা এগিয়ে রেখেছেন মার্শালকেই।
ওয়াসিম আকরামের ভাষায়, “আমার চোখে ম্যালকম মার্শালই সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার। ডেনিস লিলি গ্রেট হতে পারেন, কিন্তু মার্শাল গ্রেটেস্ট।”
হ্যাম্পশায়ারের সাবেক অধিনায়ক ও চ্যানেল নাইনের ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাসের ভাষায়, “মার্শালের সাথে তুলনায় প্রথমেই আসবে রে লিন্ডওয়ালের নাম। দু’জনেই ইন ও আউট সুইংয়ে ছিলেন সমান কার্যকরী। এক্ষেত্রে লিলির কথাও বলা দরকার। উইকেট টেকিং এবিলিটি, কন্সিস্টেন্সি এবং ফিয়ার ফ্যাক্টর বিবেচনায় মার্শালের সমকক্ষ ছিলেন লিলি। তবে উপমহাদেশের মন্থর উইকেটে সাফল্য নেই লিলির।”
উল্লেখ্য, সাবকন্টিনেন্টে খেলা ১৯ টেস্টে মার্শালের শিকার ৭১ উইকেট, মাত্র ২৩.০৫ গড়ে!
বোলিংয়ের পাশাপাশি মার্শাল ছিলেন একজন কার্যকরী লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। নিজের দিনে ব্যাট হাতেও যেকোন সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতেন তিনি। প্রিয় শট ছিল ফ্লিক।
টেস্টে মার্শালের সংগ্রহ ১৮.৮৫ গড়ে ১৮১০ রান, হাঁকিয়েছেন ১০টি ফিফটি। দুটি ফিফটি আছে ওয়ানডেতেও। এছাড়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৭টি সেঞ্চুরিসহ তাঁর রয়েছে ১১ হাজারের বেশি রান।
ক্রিকইনফো সম্পাদক এন্ড্র মিলারের ভাষায়, “He was incredibly effective as a batsman at no.8 who could have scored more runs than what he did. But as it happened, he didn't need to. Specially given that he averaged only 20 with the ball.”
ম্যালকম মার্শালের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৮ এপ্রিল, বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারান মাত্র এক বছর বয়সে। তারপর থেকে দাদুর কাছেই মানুষ হয়েছেন তিনি। মার্শালের ক্রিকেটে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণাও ছিলেন তাঁর দাদু।
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে মার্শালের হাতেখড়ি ১৯৭৬ সালে; একটা চল্লিশ ওভারের টুর্নামেন্টে। তার দু'বছরের মাথায় বারবাডোজের হয়ে ফার্স্ট ক্লাস অভিষেক, জ্যামাইকার বিপক্ষে। ব্যাটিংয়ে রান না পেলেও বল হাতে ৭৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা।
এদিকে সামনেই ভারত সফর। কিন্তু প্রথম সারির ক্রিকেটারদের সবাই তখন ব্যস্ত 'কেরি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ' নিয়ে। ফলে দল নির্বাচনে প্রাধান্য দেয়া হয় তরুণদের। মাত্র একটি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ম্যালকম মার্শালও ছিলেন সেই দলে। কদিন পর টেস্ট অভিষেকটাও হয়ে যায় হঠাৎ করেই।
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবরটা তিনি শুনেছিলেন রেডিওতে। শোনার পর নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি! এতটাই অবাক হয়েছিলেন। তিনি নাকি জানতেনও না যে 'ইন্ডিয়া' দেশটা কোথায়!
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে তাঁর টেস্ট অভিষেক। বল হাতে মাত্র ১ উইকেট পেলেও গতি দিয়ে ঠিকই নজর কেড়েছিলেন তিনি। ভারতীয় ব্যাটসম্যান দিলীপ ভেংসরকারের সাথে তাঁর বহুল আলোচিত রাইভালরির সূচনাটাও হয়েছিল তখন থেকেই। ভেংসরকার স্ট্রাইকে আসলেই রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে একের পর এক আগুনের গোলার মত বাউন্সার ছুঁড়ে যেতেন মার্শাল।
ভারত সফরে তিন টেস্ট খেলে মার্শাল উইকেট নিতে পেরেছিলেন সাকুল্যে তিনটি, ৮৮ গড়ে! তবে ফার্স্ট ক্লাস ট্যুর ম্যাচগুলোতে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল বেশ সন্তোষজনক। ২২ গড়ে নিয়েছিলেন ৩৭ উইকেট যা তাঁকে ইংলিশ কাউন্টিতে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল।
১৯৭৯ সাল থেকে হ্যাম্পশায়ারের হয়ে তিনি কাউন্টি খেলেছেন টানা ১৪ বছর। প্রথম মৌসুমেই নিয়েছিলেন ৪৭ উইকেট।
১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে মার্শালও ছিলেন। তবে গার্নার, হোল্ডিং, রবার্টস, ক্রফটদের টপকে মূল একাদশে ঢোকার সুযোগ হয় নি একবারও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই সাফল্য পান নি তিনি। মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে। ক্যারিয়ারের প্রথম ১২ টেস্টে পেয়েছিলেন মাত্র ৩৪ উইকেট, ৩১.৮৮ বোলিং গড়ে!
মার্শালের ক্যারিয়ারের প্রথম উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ছিল ১৯৮০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মাত্র ১৪ বলের ব্যবধানে তুলে নিয়েছিলেন তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের উইকেট; তাঁরা হলেন যথাক্রমে মাইক গ্যাটিং, ব্রায়ান রোজ এবং পিটার উইলি। ম্যাচটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিল।
তরুণ বয়সের মার্শালকে নিয়ে এক স্মৃতিচারণায় মাইকেল হোল্ডিং বলেন, “শুরু থেকেই ভয়ানক গতি ছিল ওর বলে; সাথে লেট মুভমেন্ট। ও যখন নেটে বল করত, ওকে সামলাতে ঘাম ছুটে যেত সবার। আমরা বলাবলি করতাম এই ছেলে একদিন বিশ্ব কাঁপাবে।”
১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে মাত্র এক ম্যাচ খেলেই বাদ পড়েন মার্শাল। পারফরম্যান্স খুব একটা খারাপ না হওয়া সত্ত্বেও টানা দুই বছরের জন্য চলে যান দলের বাইরে।
১৯৮২ সালের কাউন্টি সিজনে মার্শাল ছিলেন বিধ্বংসী ফর্মে। হ্যাম্পশায়ারের হয়ে মাত্র ১৬ গড়ে তুলে নেন ১৩৪ উইকেট! ফলে ১৯৮৩ সালের ভারত সিরিজের দলে তাঁকে না ডেকে কোন উপায় ছিল না।
ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে চার টেস্ট খেলে মার্শাল নিয়েছিলেন ২১ উইকেট। উইন্ডিজ জিতেছিল ২-০ ব্যবধানে। সেই থেকে শুরু, এরপর আর কোনদিন পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
পরবর্তী আট বছর (১৯৮৩-১৯৯১) ম্যালকম ছিলেন রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। এই ৮ বছরে খেলা ৬৯ টেস্টে তাঁর শিকার ৩৪২ উইকেট, মাত্র ১৯.৮৫ গড় এবং ৪৪.৯ স্ট্রাইক রেটে!
১৯৮৩-৮৪ সালের ভারত সফরে উইন্ডিজ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। উপমহাদেশের নিষ্প্রাণ উইকেটেও গতির ঝড় তুলেছিলেন মার্শাল। মাত্র ১৮ গড়ে নিয়েছিলেন ৩৩ উইকেট। ভারতের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার ও দিলীপ ভেংসরকারকে আউট করেছিলেন ৫ বার করে! এছাড়া ব্যাট হাতে দুই ফিফটিসহ করেছিলেন ২৪০ রান। ক্যারিয়ার সেরা ৯২ রানের ইনিংসটা খেলেছিলেন কানপুরে।
কানপুরের ফ্লাট ট্র্যাকেই ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ওপেনিং স্পেলটা করেছিলেন তিনি। দুর্দান্ত সেই স্পেলে (৮-৫-৮-৪) তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। তাঁরা হলেন যথাক্রমে গাভাস্কার (০), অমরনাথ (০), অংশুমান (৪) এবং ভেংসরকার (১৪)।
১৯৮৪ সালের বিখ্যাত হেডিংলি টেস্ট। ফিল্ডিং করতে গিয়ে বামহাতের বুড়ো আঙুল ভেঙে ফেলেন ম্যালকম মার্শাল। সবাই ধারণা করছিল, তিনি হয়ত আর মাঠেই নামতে পারবেন না। কিন্তু মার্শাল যে কখনো হার মানতে শেখেন নি! সেদিনও হার মানলেন না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডান হাতে ব্যাট আর বাঁ হাতে প্লাস্টার নিয়ে নেমে পড়লেন মাঠে। সতীর্থ ল্যারি গোমেজকে সেঞ্চুরি পাইয়ে দিতে তীব্র ব্যথা সহ্য করেও খেললেন ৮টা বল, একটা চারও হাঁকালেন। শেষ পর্যন্ত গোমেজের সেঞ্চুরিতে (১০৪*) ভর করেই ৩২ রানের লিড পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মার্শাল সেদিন এক হাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও আগুন ঝরিয়েছিলেন। যে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছিল ইংরেজ ব্যাটিং লাইনআপ। বাঁ হাত অকেজো হওয়ায় কেবল ডানহাতে বল গ্রিপ করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু সেই বাধাকে তিনি জয় করেছিলেন অদম্য মানসিক শক্তির জোরে। দ্বিতীয় ইনিংসে মার্শালের বোলিং ফিগারটা ছিল বাঁধিয়ে রাখবার মত; ২৬-৯-৫৩-৭!
মার্শালের এক হাতে বোলিং প্রসঙ্গে উইজডেন লিখেছিল, “There was no transfer of the ball from the left to the right at the top of his run up. Yet, he did charge in, his angular run up as hostile as ever and proceeded to bowl with pace like fire.”
ইংল্যান্ড সেবার সিরিজ হেরেছিল ৫-০ ব্যবধানে। পরবর্তীতে যেটি ’ব্ল্যাকওয়াশ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। উল্লেখ্য, ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথমবার কোন স্বাগতিক দলের ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ঘটনা।
ঐতিহাসিক সেই সিরিজ জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন ম্যালকম মার্শাল। মাত্র ১৭ গড়ে ২৪ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় জোয়েল গার্নারের (২৯) ঠিক পরেই ছিলেন তিনি; ৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ।
১৯৮৪ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের ঘটনা। অ্যাডিলেডের মরা পিচে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেন ম্যালকম মার্শাল। যেখানে অন্য বোলাররা রীতিমতো ধুঁকছিলেন, সেখানে মার্শাল ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। বল হাতে দুই ইনিংসেই নিলেন ৫ উইকেট (৫/৬৯ ও ৫/৩৮)! টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচটাও পকেটে পুরলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেবার সিরিজ জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে। মাত্র ১৯.৭৯ গড়ে মার্শাল পেয়েছিলেন ২৮ উইকেট; ৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে খেলা ১৪ টেস্টে ১১ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন মার্শাল! যা এককথায় 'অসাধারণ' বললেও কম বলা হবে।
১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সফল একটা সিরিজ কাটালেন মার্শাল। একবার ম্যাচে ১০ উইকেটসহ মাত্র ১৮ গড়ে নিলেন ২৭ উইকেট।
উল্লেখ্য, সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে নিউজিল্যান্ড দাবি করেছিল, আম্পায়াররা যেন ক্যারিবীয় পেসারদের, বিশেষ করে মার্শালকে অতিরিক্ত বিপজ্জনক বাউন্সার দেয়া থেকে বিরত রাখেন। কিন্তু ক্রিকেটের কোন আইনেই আম্পায়ারদের সে উপায় ছিল না।
চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম দু’টি টেস্ট ড্র করতে পারলেও পরের দু’টিতে উড়ে যায় কিউইরা। ব্রিজটাউনে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৯৪ রানে অলআউট হয় মার্টিন ক্রোর দল। দু'ইনিংস মিলিয়ে মার্শাল নেন ১১ উইকেট।
তবে কিউইদের এর চেয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হজম করতে হয় স্যাবাইনা পার্কের সিমিং উইকেটে। ম্যালকম মার্শাল, উইন্সটন ডেভিস আর জোয়েল গার্নারের পেস-বাউন্সে রীতিমতো নাভিঃশ্বাস উঠে যায়। কিউইদের অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলতে ‘রিডিউসড টু র্যাবিট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন আর্টিকেলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬ রানে মাত্র ৪ উইকেট নিলেও মার্শালের স্পেলগুলোকে আক্রমণ ও আগ্রাসনের মানদণ্ডে ফাস্ট বোলিংয়ের 'শেষ কথা' বলে রায় নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে মার্শালের পেস ও বাউন্সকে প্রশমিত করার জন্য এক প্রকার মৃত উইকেট বানিয়েছিল পাকিস্তানিরা। কিন্তু লাহোরের ফ্লাট উইকেটেও রীতিমতো আনপ্লেয়েবল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৮ ওভার বল করে মাত্র ৩৩ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট! এক ইনিংস ও ১০ রানে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজটা অবশ্য ড্র হয়েছিল ১-১ সমতায়।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ১৯৮৮। মার্শালের ক্যারিয়ারের সবচাইতে বিধ্বংসী স্পেলটা এসেছিল এই ম্যাচেই। ফর্মের তুঙ্গে থাকা মার্শালের সামনে সেদিন কোন প্রতিরোধই গড়তে পারে নি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা; অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯২ রানে। মার্শালের বোলিং ফিগারটা দাঁড়িয়েছিল এরকম, ১৫.৪-৫-২২-৭!
গার্নার, হোল্ডিংদের বিদায়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট তখন একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, অথচ মার্শাল সেটা বুঝতেই দেন নি। বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বটা পুরোপুরি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১২.৬৫ গড়ে মার্শাল একাই নিয়েছিলেন ৩৫ উইকেট! ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ জিতেছিল ৪-০ ব্যবধানে।
১৯৮৮-৮৯ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের ঘটনা। সিডনির স্পিন সহায়ক উইকেটে পেসার হিসেবে নিজের স্কিল এবং ভার্সেটালিটির চূড়ান্ত নমুনা দেখিয়েছিলেন ম্যালকম মার্শাল। এসসিজির পিচে সেবার এমনই স্পিন ধরছিল যে, অ্যালান বোর্ডারের মত পার্টটাইম স্পিনারও নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। অথচ সেখানেও নিজেকে চমৎকার খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৩১ ওভার বল করে মাত্র ২৯ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৫ উইকেট! ইকোনমি ছিল একেরও কম! অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতলেও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল মার্শালের নিয়ন্ত্রিত বোলিং।
উইজডেনের ম্যাচ রিপোর্টে লিখেছিল, “He showed versatility on a pitch deliberately prepared to negate pace and give excessive help to spin, by simply pitching the ball up and swinging it.”
১৯৮৯ সালে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন মার্শাল। সে ম্যাচে পুরনো বলে ভয়ঙ্কর কিছু স্পেল করেছিলেন তিনি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, অ্যাম্ভ্রোস, ওয়ালশ, বিশপের মত গতিদানবদের ভীড়ে মার্শালের ভূমিকাটা ছিল ফোর্থ সিমারের!
১৯৯১ সালের ইংল্যান্ড সফরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা খেলেন ম্যালকম মার্শাল। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সবশেষ শিকার ছিলেন গ্রাহাম গুচ।
মার্শালকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবারের মত দেখা ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সেখানেই প্রথমবারের মত 'নির্বাসন' কাটিয়ে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন তিনি; বল হাতে নেন দুই উইকেট।
এবারে শুনব মার্শালকে নিয়ে এক কিংবদন্তির স্মৃতিচারণার গল্প। শুনুন তবে ব্রায়ান লারার মুখ থেকেই, “আমার প্রথম মার্শাল-দর্শন ১৯৮৮ সালে। বার্বাডোজ-ত্রিনিদাদ ম্যাচ ছিল। আমার মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলটাই ছিল মার্শালের। তাঁর বল হাতে ছুটে আসা দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল এবং প্রথম বলেই আমি ডাউন দ্য লেগ সাইড উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এলাম। বাতাসে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে উদযাপনরত মার্শাল হঠাৎ থেমে গিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসল। এসে আমার কাঁধে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল, ‘টাফ লাক।’ সেবারই প্রথম আমি মার্শালের এতটা কাছে আসতে পেরেছিলাম।”
মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন মার্শাল? এককথায় বলা যায় সৎ, নির্লোভ, নিরহংকারী এবং পরোপকারী। একটা ঘটনা বলি। ১৯৮৩-৮৪ সালের কথা। ক্রিকেটের নামীদামী সব তারকাদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা তখন টাকার বস্তা নিয়ে বসে আছে। কেবল ‘হ্যাঁ’ বললেই হয়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক আলী ব্যাখার সে সময় ছিলেন ইংল্যান্ডে। একদিন সাউদাম্পটনের উইম্পি বারে ডেকে পাঠালেন মার্শালকে। সাধারণ সৌজন্য বিনিময়ের পর আলী ব্যাখার তাঁকে সরাসরি প্রস্তাব দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খেলার জন্য। বিনিময়ে পাবেন নগদ ১ মিলিয়ন ডলার! জবাবে মুখের ওপর ‘নো, থ্যাংকস’ বলতে এক সেকেন্ডও সময় নেননি সাবেক এই বার্বাডিয়ান স্পিডস্টার। মার্শালের উত্তরে মি. ব্যাখার নাকি এতটাই চমকে গিয়েছিলেন যে কফির মগ থেকে কফি পড়ে তার শার্ট ভিজে যায়! উইম্পি বারে ব্যাখার সেদিন মার্শালকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘You are a fantastic cricketer, but a foolish young man’.
আলী ব্যাখারের সে দিনের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে আসার পর ঠিকই নাটালের হয়ে ঘরোয়া লিগ খেলতে গিয়েছেন মার্শাল। শুধু খেলেনই নি, সেখানকার তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের বেড়ে ওঠার পেছনে রেখেছেন বড় ভূমিকা। নব্বইয়ের দশকে শন পোলক, ল্যান্স ক্লুজনারসহ দক্ষিণ আফ্রিকার অসংখ্য উঠতি তরুণের রোল মডেল ছিলেন ম্যালকম মার্শাল।
নিজের ক্যারিয়ারে মার্শালের সরাসরি প্রভাবের কথা জানিয়েছেন শন পোলক। তাঁর ভাষায়, “At Natal, his experience was invaluable, his guidance was an influential spark in my early career.”
মার্শাল পরবর্তী যুগে সেই পোলক, ক্লুজনাররাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫-০ ব্যবধানে নাকানিচুবানি খাইয়েছিল। সন্দেহ নেই, মার্শাল এতে প্রচন্ড হতাশ হয়েছিলেন। তবে মার্শাল সবসময় বিশ্বাস করতেন, অন্য খেলার চেয়ে ক্রিকেটেই উত্থান-পতন ঘটে সবচেয়ে বেশি।
১৯৯৬ সালে প্রথমে হ্যাম্পশায়ার এবং পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের কোচ হয়েছিলেন মার্শাল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে চলাকালীন হঠাৎ তিনি জানতে পারেন, শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার। তড়িঘড়ি করে কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি বিশেষ। দীর্ঘ আট মাসের ব্যর্থ লড়াই শেষে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪১ বছর! মার্শালের অকাল মৃত্যুতে সারা বিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার রবিন স্মিথ।
স্যার গারফিল্ড সোবার্স জিমনেশিয়ামে মার্শালের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ক্রিকেট দুনিয়ার রথী মহারথীরা। তাঁর শবযাত্রার কফিন বহনের দায়িত্বে ছিলেন পাঁচজন সাবেক ক্যারিবীয় অধিনায়ক। একজন ক্রিকেটারের জন্য এ এক বিরল সম্মান।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সিরিজ সেরা বোলারকে এখন পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় 'ম্যালকম মার্শাল মেমোরিয়াল ট্রফি'। বার্বাডোজ ও ত্রিনিদাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কারও চালু হয়েছে মার্শালের নামে। এছাড়া হ্যাম্পশায়ারের রোজবোল স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বারের নাম রাখা হয়েছে 'মার্শাল ড্রাইভ'।
শেষ করব ম্যালকম মার্শাল সম্পর্কে কয়েকটি চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়ে।
ক্রিকইনফো সম্পাদক এন্ড্রু মিলারের ভাষায়, “In an era, that was absolutely ruled by the West Indian fast bowlers, Marshall was the greatest of that breed. He was possibly among the shortest but in terms of stature, he was far away the tallest.”
প্রয়াত ধারাভাষ্যকার টনি কোজিয়ারের ভাষায়, “For his sheer pace and his intelligent use of it, for his total commitment to giving his all in every match, for his revered status in West Indian cricket and his influence on today's finest fast bowlers, Malcolm Marshall should be rated as the greatest fast bowler ever.”
ক্রীড়া সাংবাদিক প্যাট সিমন্সের ভাষায়, “Malcolm Marshall had contributed greatly to cricket and influenced many of those who followed him. Most importantly, he played the game with intensity, honesty and joy, in the best tradition of West Indian cricket.”