'প্রতিশোধের' মিশনে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

ছবি: বাংলাদেশ দল

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজটি হয়তো ভুলেই যেতে চাইবে বাংলাদেশ। কেননা উইন্ডিজদের মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে ধবল ধোলাইয়ের লজ্জায় পড়তে হয়েছিল টাইগারদের।
তবে এবার সেই পরাজয়েরই প্রতিশোধ নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। দেশের মাটিতে ক্যারিবিয়ানদের সিরিজ হারিয়ে সেই সুযোগ লুফে নিতে যে মুখিয়ে থাকবে সাকিব আল হাসানের দল তা বলাই বাহুল্য।
এই লক্ষ্য নিয়েই আগামীকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে নয়টায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিবের ফেরার এই ম্যাচটিতে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত থাকবে টাইগাররা। আর মাঠেও এর প্রতিফলন ঘটাতে চাইবে তারা।
উইন্ডিজদের বিপক্ষে ম্যাচেই অভিষেক ঘটতে পারে ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার সাদমান ইসলাম অনিকের। প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পর নির্বাচকদের সুনজরে এসেছেন তিনি। আগামীকাল সৌম্য সরকার কিংবা ইমরুল কায়েসের সাথে ওপেনিংয়েও দেখা যেতে পারে ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানকে।
সাদমান ছাড়াও আগামীকাল অভিষেক হতে পারে তরুণ ডানহাতি স্পিনার নাইম হাসানের। ঘরোয়া ক্রিকেটে বল হাতে কারিশমা প্রদর্শন করা নাইমকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চান নির্বাচকেরা। আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই জাতীয় দলের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৪৮ উইকেট শিকার করা নাইমকে।
এদিকে উইন্ডিজদের বিপক্ষে খেলার আগে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করতে পারে সম্প্রতি শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে। ঢাকার মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ টেস্টে রেকর্ড ব্যবধানে জিম্বাবুইয়ানদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আর সেই টেস্টে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম খেলেছিলেন ২১৯ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস।
সুতরাং সেই জয়ের ধারা বজায় রাখার ব্রত নিয়েই কাল মাঠে নামবে টাইগাররা। যদিও কিছুটা দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরে। কেননা এখন পর্যন্ত টেস্টে একটি স্থিতিশীল ওপেনিং জুটির খোঁজ পায়নি টাইগাররা। এক্ষেত্রে ইমরুল কিংবা সৌম্যর নিজেকে প্রমাণের উপলক্ষ হতে পারে এই ম্যাচ।
অপরদিকে সফরকারী উইন্ডিজরা টেস্টে তাদের পারফর্মেন্সের পারদ আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাইবে। এখন পর্যন্ত উপমহাদেশে তাদের পরিসংখ্যান খুব একটা ভাল নয়। সম্প্রতি ভারতের মাটিতে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ হেরে আসায় দলটির আত্মবিশ্বাসও অনেকটা কমে গিয়েছে। সেই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়াটাই লক্ষ্য থাকবে তাদের।
মুখোমুখি- এখন পর্যন্ত মোট ১৪টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ এবং উইন্ডিজ। যেখানে জয়ের পাল্লাটি বেশ ভারি ক্যারিবিয়ানদেরই। ১৪টি টেস্টে তাদের জয়ের সংখ্যা ১০টি। অপরদিকে মাত্র ২টি তে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ২টি ড্র হয়েছে।

স্পট লাইটে থাকবেন যারাঃ
মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)-
সাম্প্রতিকালে দারুণ ফর্মে আছেন টাইগারদের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কিছুদিন আগেই দ্বি শতক হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক। এবার নতুনভাবে নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষাতে আছেন তিনি।
৬৪ ম্যাচে ৩৫.৭৫ গড়ে ৩৯৬৯ রান সংগ্রহ করা মুশফিকের পারফর্মেন্স উইন্ডিজদের বিপক্ষেও দারুণ। এখন পর্যন্ত ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ১০টি টেস্টে ৩৪.৫০ গড়ে ৬২১ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেখানে রয়েছে ১টি শতকসহ ২টি অর্ধশতক। সুতরাং সবমিলিয়ে আগামীকালের ম্যাচে মুশফিক হতে পারেন টাইগারদের বাজির ঘোড়া।
তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)-
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত টেস্ট সিরিজে রীতিমত বিধ্বংসী ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দুই টেস্টের সিরিজে মোট ১৮টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
২৬ বছর বয়সী তাইজুল এখন পর্যন্ত উইন্ডিজদের বিপক্ষে ৩টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। আর এই তিন ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন দারুণভাবে। মাত্র ৩.১৯ ইকোনমি রেটে ১১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে।
রস্টন চেজ (উইন্ডিজ)-
ভারতের বিপক্ষে সম্প্রতি শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওপেনার রস্টন চেজ। দ্বিতীয় টেস্টে খেলেছিলেন ১০৬ রানের অনবদ্য একটি ইনিংস।
এখন পর্যন্ত যদিও ভারতের বিপক্ষে খুব বেশি খেলেননি তিনি। তবে ব্যাট হাতে আগামীকালের ম্যাচ নিজেকে প্রমাণ করার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তাঁর। টাইগারদের বিপক্ষে মাত্র ২টি টেস্ট খেলে ১৮ গড়ে ৫৪ রান সংগ্রহ করেছেন চেজ। এবার এই পরিসংখ্যান পাল্টে দিতে মাঠে নামবেন তিনি।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (উইন্ডিজ)-
গত উইন্ডিজ সফরে এই গ্যাব্রিয়েলই চরম ভুগিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। নিয়মিতভাবে ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করতে সক্ষম এই পেসারকে সামলাতে যে এবারও হিমশিম খেতে হবে টাইগার ব্যাটসম্যানদের তা সহজেই অনুমিত বলা যায়।
প্রস্তুতি ম্যাচে ২৪ রানে ২৩ উইকেট নিয়ে এরই মধ্যে অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন গ্যাব্রিয়েল। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৪টি ম্যাচ খেলা হয়েছে ৩০ বছর বয়সী এই পেসারের। যেখানে ৩.১১ ইকোনমিতে মোট ১৩টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সুতরাং তাঁকে সামলাতে বেশ আটঘাট বেঁধেই নামতে হবে টাইগারদের।
পিচ এবং কন্ডিশনঃ
চিটাগাংয়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটকে ধরা হয় দেশের সবথেকে ভাল ব্যাটিং পিচ হিসেবে। পরিসংখ্যান বলছে এই উইকেটে পেসারদের থেকে স্পিনাররাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই কারণে আগামীকালের ম্যাচে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে বাড়তি স্পিনার হিসেবে খেলতে পারেন তরুণ নাইম হাসান।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, আরিফুল হক, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুর রহমান, সাদমান ইসলাম অনিক, নাইম হাসান, খালেদ আহমেদ।
উইন্ডিজ স্কোয়াড :
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), সুনীল আমব্রিস, দেবেন্দ্র বিশু, রস্টন চেজ, শেন ডওরিচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, জাহমার হ্যামিল্টন, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ, শেরমন লুইস, কিমো পল, কাইরন পাওয়েল, রেইফন রেইফার, কেমার রোচ, জোমেল ওয়ারিকেন।