প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ

ছবি: ছবি- ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসঃ ১৪৩ অলআউট, ৫১ ওভার
(আরিফুল ৪১*, মুশফিক ৩১ ; চাতারা ৩/১৯, সিকান্দার রাজা ৩/৩৫ )
জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসঃ ২৮২ অলআউট, ১১৭.৩ ওভার
(মুর- ৬৩*, উইলিয়ামস ৮৮ ; তাইজুল ইসলাম ৬/১০৮)
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানে অলআউট করার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৩ রানে সব'কটি উইকেট হারায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল।
ইনিংসের সমাপ্তিঃ
আরিফুলের সাথে সঙ্গ দিতে পারছেন না কেউই। এক প্রান্ত আগলে রেখেছেন তিনি। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট বিলাচ্ছেন অপর প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা ফিরে গেছেন তাইজুল ইসলাম।
রাজার ঘূর্ণিতে ফিরে গেছেন অপুও। তাইজুল ফিরেছেন ৮ রান করে এবং অপু ফিরেছেন ৪ রানে। শেষ উইকেটে রান আউট হয়ে ফিরেছেন আবু জায়েদ রাহি। শেষ পর্যন্ত ৫১ ওভারে ১৪৩ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
অসহায় মিরাজঃ
বড় জুটি গড়ার লক্ষ্যে ছিলেন মিরাজ-আরিফুল। কিন্তু তাঁদের ৩০ রানের জুটি ভেঙ্গে দিলেন অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে মিরাজকে বোকা বানিয়ে সহজ ক্যাচ লুফে নিলেন উইলিয়ামস নিজেই। ৩৩ বলে ২১ রান করে সসাজঘরে ফিরে গেছেন মিরাজ।
দলীয় শতকঃ
ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ৩৫ ওভার চলাকালীন সময় দলীয় শতকে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। জার্ভিসকে পুল করে চার হাঁকিয়ে দলকে ১০৩ রানে পৌঁছে দেন আরিফুল।

দিকহীন বাংলাদেশঃ
পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করেছিল টাইগাররা। চা বিরতির পর মাঠে নেমে পেসার জার্ভিসের বলে চার হাঁকালেন মুশফিক। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। লেন্থ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল ব্যাটে হালকা ছোঁয়া লেগে চলে যায় চাকাবার হাতে।
আঙ্গুল তুলতে সংকোচে পড়তে হয়নি আম্পায়ারকে। ৩১ রান করে ফিরে যান মুশফিক।
মমিনুলের বিদায়ঃ
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে কিছুক্ষণ আগেই আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ মমিনুল হক। ১৯তম ওভারে সিকান্দার রাজার তৃতীয় বলে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। বর্তমানে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৫ উইকেটে ৫৬ রান।
ব্যাটিং ধ্বসে বাংলাদেশঃ
ইমরুলের বিদায়ের পরই ফিরে গেলেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। কাইল জার্ভিসের করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাবভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তাঁর বিদায়ে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তাঁকেও বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে দেন নি চাতারা। কট বিহাইন্ডের আবেদেন করলে সম্মতি দেন নি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে শান্তর উইকেটটি তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। শান্তর পর দলের দায়িত্ব কাঁধে মাঠে নামেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
কিন্তু সেই ওভারেই আবারও আঘাত হানেন চাতারা। টাইগার অধিনায়ককে ইনসাইড এজে বোল্ড করে শূন্য রানে ফেরান তিনি।
টাইগার শিবিরে আঘাতঃ
এক ওভার খেলে লাঞ্চে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং ইমরুল কায়েস। লাঞ্চের পর ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওভার না খেলতেই চেন্ডাই চাতারার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার ইমরুল (৫)। ব্যাকফুটে গিয়ে নরম হাতে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে অফ স্টেপে এসে বল লাগে এবং উল্লাসে মেতে উঠেন জিম্বাবুয়াইনরা।
জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংঃ
শনিবার টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সফরকারী জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়েছিল তাঁরা। তাইজুলের বলে দলীয় ৩৫ রানেই ওপেনার ব্রায়ান চারিকে হারায় সফরকারীরা। এরপর ব্রেন্ডন টেইলরকে মাত্র ৬ রানে ফেরান তাইজুল।
কিন্তু দারুণ খেলে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫২ রান করা জিম্বাবুয়ের দলপতিকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন পেসার আবু জায়েদ রাহি। তবে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন শন উইলিয়াম এবং সিকান্দার রাজা।
রাজাকে উইকেটে থিতু হতে দেন নি টেস্টে অভিষেক হওয়া বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। দুর্দান্ত এক ডিলেভারিতে সিকান্দার রাজাকে বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। টেস্ট খেলতে নামা অপু তাঁর চতুর্থ ওভারেই ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট উইকেটের দেখা পান।
৪ উইকেট হারালেও শন উইলিয়ামস এবং পিটার মুর মিলে দলের হাল ধরেন। দুজন মিলে যোগ করেন ৭২ রান। উইলিয়ামস ফিফটি তুলে নিয়ে এগোচ্ছিলেন শতকের দিকে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮৮ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে উইকেট ছুঁড়ে দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এরপর দিনের শেষ ওভার পর্যন্ত দেখে শুনে পার করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান পিটার মুর এবং চাখাবা। প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের স্কোর, ৯১ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান।
রবিবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণভাবে নিজেদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। রাহি, তাইজুলদের ভালই দেখেশুনে খেলছে মাঠে থাকা জিম্বাবুয়াইন দুই ব্যাটসম্যান পিটার মুর এবং চাখাবা। ১৪৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন মুর এবং চাকাবার সাথে গড়েছিলেন ৬০ রানের জুটি। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকে নি তাঁদের জুটি।
বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল, চাকবাকে শর্টে শান্তর হাতে ক্যাচ বানিয়ে ২৮ রানে ফেরান। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যান সঙ্গ দিতে পারেন নি মুরকে। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, জার্ভিসদের ফিরিয়েছেন তাইজুল, অপু। দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে মাত্র ৪৭ রান যোগ করতেই বাকি পাঁচ উইকেট হারায় মাসাকাদজার দল।
যেখানে একাই চার উইকেট নেন তাইজুল। সর্বমোট এই ইনিংসে ছয় উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থবারের মতো পঞ্চম উইকেট নিলেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৮ রান করেন উইলিয়ামস এবং ৬৩ রানে অপরাজিত ছিলেন পিটার মুর।
বাংলাদেশ একাদশ-
লিটন কুমার দাস, ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম অপু, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি।
জিম্বাবুয়ে একাদশ-
হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ক্রেইগ আরভিন, ব্র্যান্ডন টেইলর, শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাবভা (উইকেটরক্ষক), ব্র্যান্ডন মাভুটা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, কাইল জার্ভিস, টেন্ডাই চাতারা।