'হ্যাট্রিক' পরাজয়, নাকি ঘুরে দাঁড়ানো?

ছবি: বাংলাদেশ দল

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষে আফগান অধিনায়ক আসগর আফগান নিজের দল নিয়ে স্তুতি বাক্য শুনিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে ২৩০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পারলেও নিজেদের দুর্দান্ত বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের কারণে সহজেই জয় তুলে আনা সম্ভব দলের পক্ষে।
আসগরের এই বক্তব্য দাম্ভিকতা মনে হতে পারে অনেকের কাছেই, কিন্তু আদতে যে তিনি মোটেও কিছু বাড়িয়ে বলেননি তার প্রমাণ আবারও দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে। জয়ের দেখা না পেলেও গতকাল পাকিস্তানকে রীতিমত কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানরা।
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকলে হয়ত পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত সরফরাজ আহমেদের দলকে। পাকিস্তানের মাত্র তিন উইকেটের জয়ই অবশ্য বলে দিচ্ছে পুরো ম্যাচ জুড়েই কিরূপ দাপট দেখিয়েছে আসগর বাহিনী।
প্রত্যেকটি দলের জন্যই হুমকির কারণ হয়ে ওঠা সেই আফগানরা আবারও মাঠে নামছে আগামীকাল। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে এবার তাঁদের প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে সদ্যই নাস্তানাবুদ হওয়া বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে স্পষ্টভাবেই যে কিছুটা এগিয়ে থাকছে আসগর আফগানদের দল তা বলাই বাহুল্য। ক্রমাগত 'ভয়ঙ্কর' হয়ে ওঠা আফগানরা বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি থেকেও। টাইগারদের ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করার সুখস্মৃতি নিয়েই আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে খেলতে নামবে তারা।
একে তো টানা দুই ম্যাচ হেরে কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে আছে টাইগাররা, তার ওপরে ইনজুরির করাল গ্রাস যেন প্রতি মুহূর্তে ছোবল দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। এরই মধ্যে ইনজুরির কারণে শেষ হয়ে গিয়েছে তামিম ইকবালের এশিয়া কাপ। পরিসংখ্যান বলছে তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশ সর্বশেষ ১১টি ম্যাচের সবকয়টিতেই পরাজিত হয়েছে।
শুধু তামিমই নয়, পাঁজরের ইনজুরিতে ভুগছেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। এই অবস্থাতেই দলের জন্য খেলে যাচ্ছেন তিনি। আর সাকিব আল হাসানের কথা তো না বললেই নয়।
আঙ্গুলের ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও সেই নিদাহাস ট্রফি থেকেই দলকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। সুতরাং সবমিলিয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে এখন লাল সবুজের দেশটি। যদিও শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার সামর্থ্য যে টাইগারদের আছে সেটি এর আগেও দেখা গিয়েছে।
এক্ষেত্রে অবশ্য মূল ভূমিকা রাখতে হবে দলের ব্যাটসম্যানদেরকেই। কেননা টানা দুই ম্যাচে টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে পুরোপুরি। ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশাও ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে। সুতরাং আগামীকাল এই সমস্যা কাটাতে না পারলে টাইগারদের ললাটে যে হ্যাট্রিক পরাজয় অপেক্ষা করছে তা অনুমেয়ই বলা চলে।

এদিকে এরই মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্ট স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করেছে ইমরুল কায়েস এবং সৌম্য সরকারকে। এশিয়া কাপে যোগ দিতে আজই দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে তাঁদের।আগামীকাল এই দুইজনের একজন খেলতে পারেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাইড বেঞ্চে বসতে হবে দুই ম্যাচে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া নাজমুল হাসান শান্তকে।
তবে এক দিক থেকে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান উভয় দলই রয়েছে সমান অবস্থানে। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে দুই দলই পরাজয় বরণ করে নেয়ায় টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জয় ছাড়া বিকল্প নেই তাদের।
পিচ এবং কন্ডিশন-
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামটি বরাবরই যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক। পরিসংখ্যান বলছে এই উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা দলের গড় রান ২৫০ এর ওপরে। যদিও পাকিস্তান গত রাতে এই মাঠেই আফগানদের বিপক্ষে ২৫৭ রান তাড়া করে জিতেছিল। অন্যান্য ম্যাচের মতো আগামীকালও আবহাওয়া যথেষ্ট গরম এবং আদ্রতা অনেক বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুখোমুখি- এশিয়া কাপের ম্যাচটি সহ মোট ৬টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। যেখানে ৩টিতে বাংলাদেশ এবং ৩টিতে আফগানরা জয় পেয়েছে।
স্পটলাইটে থাকবেন যারা-
মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁজরের ইনজুরি নিয়েও ১৪৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। যদিও ভারতের বিপক্ষে বাজে শট খেলতে গিয়ে ২১ রানে আউট হয়েছেন তিনি। তবে আগামীকালের ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে চাইবেন তিনি। এখন পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৩০ গড়ে ১৫০ রান সংগ্রহ করেছেন মুশফিক।
রশিদ খান (আফগানিস্তান)- যেকোনো দলের বিপক্ষেই হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারেন আফগান লেগি রশিদ খান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ ওভারে মাত্র ২৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ১৩ রানে ২টি উইকেট তুলে নেন এই লেগি। সেই ম্যাচে ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল ছিলেন রশিদ। খেলেছিলেন অপরাজিত ৫৭ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও ৩ উইকেট পকেটে পুড়েছেন তিনি। বাংলাদেশের সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত মত ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করেছেন রশিদ। যেখানে তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৩.১৭।
পরিসংখ্যান-
- এখন পর্যন্ত ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়া ১১টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ যেখানে পরাজিত হয়েছে সবগুলোতেই।
- আর মাত্র ৭ রান করতে পারলেই দেশের হয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ হাজারি রানের ক্লাবে পা রাখবেন টাইগার উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিম
- আফগানদের বিপক্ষে ২ উইকেট শিকার করতে পারলেই ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট শিকার করবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
- আবুধাবির এই মাঠে গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৭ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেছিলেন আফগান ব্যাটসম্যান হাসমাতুল্লাহ শহীদি। ওয়ানডেতে নব্বইয়ের ঘরে অপরাজিত থাকা দ্বিতীয় আফগান ব্যাটসম্যান তিনি।
বাংলাদেশ স্কোয়াড-
লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মোহাম্মদ মিথুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস।
আফগানিস্তান স্কোয়াড-
মোহাম্মদ শাহজাদ, ইহসানুল্লাহ জানাত, আসগর আফগান (অধিনায়ক), জাভেদ আহমদি, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি, মোহাম্মদ নবী, গুলবদিন নাইব, রশীদ খান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মুজিব-উর রহমান, আফতাব আলম, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মুনির আহমদ, সৈয়দ শিরজাদ, শরফুদ্দীন আশরাফ, ওয়াফাদার।